Advertisement
Advertisement
Basit Ali MS Dhoni

‘দ্রাবিড়-রোহিতকে দিয়ে হবে না, বিশ্বকাপ জিততে বাজি ধোনি-কোহলি’, ভারতকে পরামর্শ বাসিত আলির

আইপিএল দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়, টেস্ট ফাইনালে ভারতের হারের পর বলছেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার।

Bring back Virat Kohli as captain and make MS Dhoni coach for upcoming World Cup, advice from Basit Ali । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:June 12, 2023 6:14 pm
  • Updated:June 12, 2023 11:00 pm

দু’ বার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ ভারত। বিলেতে টেস্ট চলাকালীন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সমালোচনা করেছিলেন বাসিত আলি (Basit Ali)। পাকিস্তানের সেই প্রাক্তন ক্রিকেটার সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ‘টিম ইন্ডিয়া’র হারের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। সেই সঙ্গে আসন্ন বিশ্বকাপে ভারতের সাফল্যের উপায়ও জানালেন। শুনলেন কৃশানু মজুমদার

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতের ভরাডুবির কারণ কী?
বাসিত আলি- আমি অপ্রিয় কথা বলে ফেলি। সেই কারণে আমাকে অনেকে পছন্দ করেন না। ঘটনা হল, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের জন্য তৈরি হয়ে খেলতে নামেনি ভারত। বেশিমাত্রায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেললে তো তার প্রভাব পড়বেই। টেস্ট ফাইনালে ভাল কিছু করতে হলে, আগেই পৌঁছনো দরকার ছিল ইংল্যান্ডে। অস্ট্রেলিয়া তো অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। ভারত এল না কেন? আইপিএল নিয়ে দু’ মাস ব্যস্ত থাকল ভারতীয় ক্রিকেটাররা। এই ভারতীয় দলের সবাই আইপিএল খেলেছে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র দু’ জন ক্রিকেটার খেলেছে মেগা টুর্নামেন্ট। বাকিরা টেস্ট ফাইনালের জন্য তৈরি হয়েছে। প্র্যাকটিস মেকস আ ম্যান পারফেক্ট। ভাল কিছু করতে হলে অনুশীলনের দরকার। সেই প্র্যাকটিসটাই তো ভারতীয়রা করল না। তাহলে আর খেলবে কী করে?

Advertisement

বিরাট কোহলি, শুভমান গিল আইপিএলে দারুণ সফল হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন টেস্ট ফাইনাল। দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন বলেই কোহলি-রোহিতদের এত সুনাম বিশ্বজুড়ে।
বাসিত আলি- (থামিয়ে দিয়ে) আচ্ছা, আপনি বলুন, আইপিএল কি লাল বলে খেলা হয়েছে? টেস্ট ফাইনাল কি সাদা বলে হয়েছে? খেলা তো হয়েছে লাল বলে। লাল বলে অনুশীলনের দরকার ছিল। তিন দিনের অনুশীলন কি যথেষ্ট ছিল? কম করে ১৫ দিনের প্র্যাকটিস দরকার ছিল ভারতের। অবশ্য ১৫ দিন অনুশীলন হবেই বা কীভাবে! দু’ মাস ধরে আইপিএল খেলল ভারত।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আম্পায়ারের বিরুদ্ধে মন্তব্যের জেরে বিরাট জরিমানা শুভমানের, শাস্তির মুখে টিম ইন্ডিয়াও]

আপনি ইউটিউবে বলেছেন, কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড় জিরো।
বাসিত আলি- হ্যাঁ, আমার ইউটিউব চ্যানেলে বলেছিলাম। এখনও বলছি, টস জিতে ফিল্ডিং করা একদম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। রাহুল দ্রাবিড় অনেক বড় ব্যাটসম্যান। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রান করেছে। কিন্তু ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারছি না। আর রাহুল দ্রাবিড় নিজেও টিম ম্যানেজমেন্টেরই অংশ। ওঁর কথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আরও একটা কথা বলতে চাই। বিশ্বকাপ এগিয়ে আসছে। ঘরের মাঠে ভারতকে যদি বিশ্বকাপ জিততে হয়, তাহলে রাহুল দ্রাবিড়-রোহিত শর্মা কম্বিনেশন দিয়ে হবে না। আমি বলব, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে কোচ করা হোক। বিরাট কোহলিকে ক্যাপ্টেন বানানো হোক। কোহলি ওর ক্রিকেটের মতোই আগ্রাসী অধিনায়ক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস টেস্ট ফাইনালে কোহলি যদি ক্যাপ্টেন থাকত, তাহলে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংই নিত। ফিল্ডিং নিত না। বড় টুর্নামেন্ট জিততে হলে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে। ধোনির ধুরন্ধর মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে হবে।

আপনি কোহলিকে অধিনায়ক করার কথা বলছেন। কোহলি তো আগে ক্যাপ্টেন ছিলেন। বিরাটের নেতৃত্বে ভারত আইসিসি ট্রফি জিততে পারেনি। অন্যদিকে আইপিএলে রোহিত সফল ক্যাপ্টেন।
বাসিত আলি- এখানেই সমস্যা। রোহিত শর্মা আর আগের মতো নেই। ক্রিকেটার হিসেবে ধার হারিয়েছে। আগ্রাসী অধিনায়ক ও মোটেও নয়। তার উপরে রোহিতের ফিটনেস তলানিতে এসে ঠেকেছে। মানসিকতা বদলে গিয়েছে। অ্যাপ্রোচও বদলেছে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে হয়তো খেলে দিতে পারবে কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে ১০০-১২০ ওভার দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করে উঠে ব্যাট করার মতো ফিটনেস ওর এখন আর নেই। এটা মানতে হবে। টেস্ট ফাইনালে ভারতকে দেখে আমার ভীতু-ভীতুই মনে হয়েছে। রোহিত নিজে ওপেনার। শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের মুখোমুখি হতে চায়নি। পরিস্থিতি সহজ হয়ে গেলে ব্যাট করতে চেয়েছিল। এটাই তো পালিয়ে যাওয়া মানসিকতা। আরও একটা কথা বলি। আমার ধারণা, হেড আর স্মিথ যখন ২৮৫-র মতো পার্টনারশিপ গড়ল, তখনই ভারত ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উপরে প্রবল চাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কোন ব্যাটসম্যান? না, যারা আইপিএল খেলে টেস্ট ফাইনাল খেলতে এসেছে!

রিকি পন্টিং বলেছেন, টেস্ট ফাইনালের জন্য প্রস্তুতি ঠিক হয়নি কোনও দলেরই। না ভারত, না অস্ট্রেলিয়া।
বাসিত আলি- প্রস্তুতি যে ঠিক হয়নি ভারতের, সেটা তো আমি বলছিই। অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি ভাল হয়েছে। সামনে অ্যাশেজ। ওরা আগে থেকেই ইংল্যান্ডে রয়েছে। যোগ্য দল হিসেবে জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া আর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পার্থক্য আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সারভাইভ করতে পারেনি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান আর ভারতীয় বোলারদের মধ্যে নিরন্তর লড়াই হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা সারভাইভ করেছে। ব্যতিক্রম প্রথম ইনিংসের অজিঙ্কে রাহানে। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের কথাই ধরুন। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, অজিঙ্কে রাহানেরা চল্লিশ করার পরে আউট হয়েছে। চল্লিশ করার পরে আউট হওয়ার কোনও যুক্তি নেই। কোহলি ভাল ব্যাটসম্যান। কিন্তু ও মারতে গিয়ে আউট হল। কোহলির উইকেটে টিকে থাকা উচিত ছিল। অবশ্য কোহলির আউটের আগের তিন-চার ওভার অস্ট্রেলিয়া ভাল বোলিং করেছে। ঠিক লাইনে বলটা করছিল। সব মিলিয়ে বোলিং ও ব্যাটিং দুটোতেই হতশ্রী পারফরম্যান্স করেছে ভারত। টেস্ট ফাইনাল আর আইপিএল যে এক ফরম্যাট নয়, এটা বোঝা উচিত ছিল ভারতের।

পরপর দু’ বার ভারত টেস্ট ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ। পাকিস্তানে এর প্রতিক্রিয়া কী?
বাসিত আলি- দেখুন, আমি ক্রিকেটপ্রেমী। পাকিস্তানের হয়ে খেলেছি। ভারত পর পর দু’ বার টেস্ট ফাইনালে ওঠায় আমি খুশি হয়েছি। তবে পাকিস্তানে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ভারতের হারে খুশি হয়েছেন। এখানেই আমার আপত্তি। আমরা নিজেরা কিছু করতে পারছি না, ব্যর্থ হচ্ছি, সেখানে অন্য দলের হারে আনন্দ পাচ্ছি। ১৯৮৩ সালে ভারত যখন বিশ্বকাপ জিতল, তখন কি ট্রফি এশিয়ায় আসেনি? ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান যখন বিশ্বকাপ জেতে, তখন কি কাপ এশিয়ায় আসেনি? দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভালবাসা বাড়ানো উচিত। পারস্পরিক শ্রদ্ধা যেন বাড়ে, সেটা দেখা উচিত। সমস্যা হল, এই ভালবাসা, শ্রদ্ধা নষ্ট করার প্রচেষ্টা হচ্ছে। আমার মা-বাবা ভারতে থেকেছেন। বিশ্বজয়ী কপিলেদেবের পড়শি ছিলাম। নভজ্যোৎ সিং সিধুঁর স্ত্রী-র ক্যানসারে আক্রান্ত। আমি ওঁর স্ত্রীর জন্য রোজ প্রার্থনা করি। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই দুর্ঘটনায় আমার এক বন্ধুর বাবাও (বাসিত আলির ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের বাবা) মারা গিয়েছেন। আমি শুনে কেঁদে ফেলেছি। ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে দুই দেশে। আমাদের দেশে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, আপনাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শোকপ্রকাশ করেন। অমিতাভ বচ্চন, সুনীল গাভাসকর, শচীন তেণ্ডুলকর, শাহরুখ খান পাকিস্তানে সমাদৃত। তেমনি ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, নুসরত ফতে আলি খানকে শ্রদ্ধা করা হয় ভারতেও। 

[আরও পড়ুন: ‘ও কি একাই বিশ্বকাপ জিতেছে…’, ভক্তের ধোনি বন্দনার পরে হরভজনের জবাব]

ভারত দু’ বার টেস্ট ফাইনাল খেলে ফেলল। পাকিস্তান পারছে না কেন?
বাসিত আলি- পাকিস্তানের অ্যাপ্রোচ খুব ডিফেন্সিভ। রামিজ রাজারও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। কোচিং স্টাফেদেরও তাই। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া খেলতে এল পাকিস্তানে। ব্যাটিং পিচ করা হল। জেতার চেষ্টাই করা হল না।

শেষ প্রশ্ন। ভারতের এই ভরাডুবির পরে কী করা উচিত বিসিসিআই-এর? আইপিএল যখন যত নষ্টের গোড়া, তাহলে কি টুর্নামেন্টে কাটছাঁট করা দরকার?
বাসিত আলি- আমার মতে, আইপিএল দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়। ম্যাচের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া উচিত। আর গরমের সময়ে না করে ঠান্ডায় টুর্নামেন্ট করা দরকার। ঠান্ডা আবহাওয়া চোটআঘাত কম হয়। ক্রিকেটাররা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ট্র্যাভেল করে, ডিহাইড্রেশন হয়ে যায় খেলোয়াড়দের, কমজোরি হয়ে যায় ক্রিকেটাররা। তার উপরে খেলতে নামলে ইনজুরি তো আছেই। আরও একটা কথা মনে হচ্ছে আমার। ভিনদেশের ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলতে আসছে। তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলার অনুমতি দেওয়া হোক। তাহলে ওই সব দেশের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে।

[আরও পড়ুন: ১৫ অক্টোবর আহমেদাবাদে ভারত-পাক মহারণ! ইডেনেও বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলবেন বাবররা]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ