সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভিএআর তা হলে শুধু বড় দলগুলোর জন্য? একটা ছোট্ট র্যালি। খুব বেশি হলে জনা দশেকের ভিড়। কিন্তু, সামনে লেখা ব্যানারটা সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছেন। মরক্কোর ওই জনা দশেক সমর্থক ওই ব্যানার নিয়ে ঘুরলেন গোটা মঙ্গলবার। অবশ্যই স্পেনের সঙ্গে তাঁদের ম্যাচ নিয়ে মূল অভিযোগ। স্পেনের পিকে-র হাতে দু’বার বল লাগল বক্সের মধে্য। তবু পেনাল্টি হল না। ভিএআর ডাকা হল না। এবং…., তার চেয়েও বড় কথা ওঁরা রোনাল্ডোর নামেও চিৎকার করলেন। ইরান ম্যাচে দু’বার প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের মুখে কনুই চালিয়েও দিব্যি পার পেয়ে গেলেন পর্তুগিজ তারকা।
[ ভগবানের উচ্ছ্বাসের দিনে ক্যালেন্ডারে লাল দাগ থাকে না… ]
তাই প্রশ্ন, ফিফার এই ভিএআর আসলে কাদের জন্য? অদ্ভুতভাবে সারানস্কে পর্তুগালের বিরুদ্ধে ১-১ ড্রয়ের পর ইরান কোচ কার্লোস কুইরোজও একই কথা বললেন। “…নিয়ম বলছে কাউকে কনুই দিয়ে আঘাত করার শাস্তি লাল কার্ড। কোথাও এটা বলা নেই, বিশেষ বিশেষ কারও জন্য নিয়ম অন্যরকম হবে….!,” বলছিলেন ক্ষুব্ধে কুইরোজ। যিনি আদতে পর্তুগালের লোক। ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগালেরই কোচ ছিলেন। এখন ইরানের হয়ে নিজের দেশের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন। কিন্তু পেশাদার কোচের দায়িত্বে যখন, তখন দেশজ আবেগ সরিয়ে রেখেই নামতে হয়। কুইরোজ তাই বলছিলেন, “এই নিয়ে বেশি বলতে চাই না। এটা আমার নিজের দেশ এবং আমার দেশেরই এক খেলোয়াড় প্রসঙ্গে বলা। জানি এটা বলার জন্য আমার বিরুদ্ধে হয়তো যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সত্যিটা হল, তুমি ম্যাচটা থামালে ভিএআরের জন্য। এবং ওটা যে কনুই চালানো সেটা স্পষ্ট। তা হলে?”
ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচে রোনাল্ডো গোল পাননি। পেনাল্টি মিস করেছেন। তার পর কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে ইরানের ডিফেন্ডার মোর্তেজা পোরালিগানজির মুখে কনুই চালিয়ে দিয়েছেন। মোর্তেজা মুখ চেপে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় তাঁকে আঙুল তুলে সাবধান হতে বলেছেন। রেফারি এনরিক কাসেরেস ভিএআরের মাধ্যমে দেখেও নিশ্চিত হতে পারেননি। তার পর রোনাল্ডোকে শুধু হলুদ কার্ড দেখিয়েই ছেড়ে দেন। অথচ, ওই কনুই চালানোর ঘটনার পরই রোনাল্ডোকে আশঙ্কিত মনে হয়েছে। কারণ, নিয়ম তিনিও জানেন। কনুই চালানোর অর্থ লাল কার্ড। ধারাভাষ্যকারদের বক্স থেকেও চিৎকার ভেসে আসছিল, “…শিওর রেড কার্ড!” তার পরও রোনাল্ডো বেকসুর খালাস পাওয়ায় বিস্মিত সবাই। এতে মরক্কো বা ইরানে কোনও ফারাক নেই। এবং, এখানেই শেষ নয়। এর পর ইরানেরই আরেক ডিফেন্ডার ওমিদ এব্রাহিমির মুখেও স্পষ্ট হাত চালান রোনাল্ডো। তার পর মাথা ঠেলে সরিয়ে দেন। রেফারি ইরানের আবেদনে সাড়া দেননি।
[ নেতা মেসি বোঝালেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়… ]
সেজন্যই কুইরোজ বলছিলেন, “ওটা পরিষ্কার কনুই চালানো। এবং লাল কার্ড। নিয়ম সবার জন্য এক। রোনাল্ডো বা মেসির জন্য আলাদা হতে পারে না। আমাদের জানা দরকার ঠিক কীভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? কিন্তু, কেউ আমাদের জানাচ্ছে না। একটা সিস্টেম খাড়া করা হয়েছে। কিন্তু, কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। যখন ভিএআর একটা সিস্টেম আনাই হল, তখন আমাদের জানা দরকার এর সিদ্ধান্তটা কে নিচ্ছে? ৩৬ বছর কোচিংয়ে আছি। তার মধ্যে কুড়ি বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলে। বারো বছর পর্তুগালের কোচ ছিলাম, গত প্রায় আট বছর ইরানের। কিন্তু, কখনও রেফারিং নিয়ে এভাবে কথা বলতে হয়নি। আগেও ভুল হয়েছে রেফারিদের। এটা ম্যাচের অঙ্গ। খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি সবাই মানুষ। ভুল করা স্বাভাবিক। কিন্তু, সেটা কমানোর জন্য একটা সিস্টেম আনা হল। এই হাই-টেক একটা বিষয়ের সঙ্গে মাঠে পাঁচ-ছ’জন যুক্ত। কিন্তু, কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না কেন? সুতরাং আমার মতে মিস্টার ইনফান্তিনো (ফিফা প্রেসিডেন্ট), সবাই ভিএআরে মত দিলেও ব্যাপারটা মোটেই ভাল চলছে না।”
স্পষ্ট এবং পরিষ্কার অভিযোগ। কুইরোজ আগেও বলেছিলেন, এশিয়া বা আফ্রিকার দলগুলোর জন্য ফিফার নিয়মের যা কড়াকড়ি, সেটা বড় দলগুলোর ক্ষেত্রে অন্যরকম। এটা ইরানের কোচ হওয়ার পর বুঝতে পেরেছেন। ইরান রক্ষণ টপকাতে না পেরে হতাশ রোনাল্ডোর হাত চালানোর অপরাধ যে লাল কার্ডই ছিল, সেই নিয়ে সরব আন্তর্জাতিক মিডিয়াও। তবে পর্তুগালের তারকা ক্যারেশমা বললেন, “ওদের (ইরানের) কোচের উপর রাগ হচ্ছে। উনি নিজে একজন পর্তুগিজ। সুতরাং পর্তুগালের লোকেদের সম্মান করবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু, ওঁর কথাবার্তা একদম উলটো। কুইরোজের কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। কারণ, তা হলে সারারাত এখানে বসে থাকতে হবে।”
ক্যারেশমা আসলে কী বলতে চাইলেন? নিজের দেশের লোক বলে কঠিন সত্যিটা বলা যাবে না?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.