Advertisement
Advertisement

Breaking News

সিন্ধুকে ফোন ফেরত দিলেন ‘ক্ষিদ্দা’ গোপীচাঁদ

ভারতীয় তিন কন্যার জন্য সমস্ত প্রশংসা ধ্বনির নেপথ্যে কান পাতলে প্রত্যেক দেশবাসীই যেন শুনতে পাচ্ছেন তিন ক্ষিদ্দার কণ্ঠস্বর- ফাইট সিন্ধু, সাক্ষী, দীপা...ফাইট।

Coaches of Sindhu, Dipa, Sakshi celebrate their victory in silence
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 20, 2016 2:44 pm
  • Updated:July 13, 2018 6:12 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কে বলে ক্ষিদ্দা শুধু থাকে বইয়ের পাতায়! কে বলে সব চরিত্র কাল্পনিক! রিওর মাটিতে যখন ‘সিন্ধু’ সভ্যতার পত্তন হচ্ছে, তখন প্রতিটি ভারতবাসী জানল, ক্ষিদ্দা দাঁড়িয়ে থাকেন মোবাইল ক্যামেরা হাতে ফ্রেমবন্দি করে রাখেন ছাত্রীর প্রতিটি সাফল্যের মুহূর্ত। তিনি সিন্ধুর কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদ।

চিরকালই কোনিদের সাফল্যের পিছনে থাকেন একজন ক্ষিদ্দা। কিন্তু সকল ক্ষিদ্দার জন্য মতি নন্দী থাকেন না। কিন্তু রিও ওলিম্পিক যেন এক পরিবর্তনের সূচনাবিন্দু। যেখানে খেলা-বিনোদনের মিশ্র সংস্কৃতি থেকে সিন্ধু, সা্ক্ষীরা দেশবাসীর দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন নির্ভেজাল ক্রীড়ার সৌন্দর্যে। বিনোদনের থেকেও যেখানে ঝলমলে লড়াইয়ের জৌলুস। আর সাফল্যের সেই উদ্ভাসিত আলো মুহূর্তে লেখা হচ্ছে ক্ষিদ্দাদের নয়া কাহিনী।

Advertisement

সিন্ধুর বয়স মোটে ২১ বছর। এই বয়সের আর পাঁচটা মেয়ের মতো মোবাইলে চ্যাট করতে, আইসক্রিম, জাঙ্ক ফুড খেতে ভালবাসে মেয়েটি। কিন্তু তাঁকে তা করতে দেননি তাঁর ক্ষিদ্দা গোপীচাঁদ। দেশের ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে কিংবদন্তি প্রকাশ পাড়ুকোণের পরই যে নামটি উচ্চারিত হয় তা CqJ29e8WAAA2Sinগোপীচাঁদেরই। কিন্তু কোচ হিসেবে তিনি যে কঠোর, তা সামনে এল সিন্ধুর এই অভাবনীয় সাফল্যের পর। একদিন এই গোপীচাঁদকে দেখেই ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেট হাতে তুলে নিয়েছিলেন সিন্ধু। আজ ছিপছিপে শ্যামলা চেহারার হায়দরাবাদি মেয়েটির কোর্টে যে এমন আগুনঝরা আগ্রাসি মনোভাব, এমন নাছোড়বান্দা জেদ, তা গোপীচাঁদেরই অবদান। তাঁর অ্যাকাডেমিতে ছাত্রীকে তিনি শুধু টেকনিকই শেখাননি, শিখিয়েছেন আগ্রাসন। শিখিয়েছেন ঠাণ্ডা মাথার সেই চিৎকার যা বিপক্ষের শিরদাঁড়া দিইয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিতে পারে। বিশ্বের এক নম্বর ক্যারোলিনা মেরিনকেও যখন কোর্টে নাস্তানাবুদ করাচ্ছেন সিন্ধু, সারা বিশ্ব বুঝেছিল ছাত্রীর এই সাফল্যের নেপথ্যে আছেন কোন দ্রোণাচার্য। শুধু কি তাই, সিন্ধুর সাধনায় যাতে বাধা না পড়ে তাই তিনমাস সিন্ধু ফোনটি কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। গত দু’সপ্তাহ জুড়ে সিন্ধুকে তাঁর পছন্দের কোনও জাঙ্ক ফুড মুখে তুলতে দেননি। অধ্যবসায় আর সাফল্যের মধ্যে বিন্দুমাত্র বিনোদনকে প্রশ্রয় দেননি তিনি। আর তাই কোচ হিসেবে তিনি এমন সফল। এক ছাত্রী ব্রোঞ্জ এনেছিলেন, আর এক ছাত্রী এনে দিলেন রূপো। কোচের কাছে এর থেকে পরিতৃপ্তির আর কী হতে পারে! এখন ছাত্রীকে তিনি সবকিছু খাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন, ফিরিয়ে দিয়েছেন ফোন। তাঁর আশা আরও আগুনঝরা হয়ে ফিরবেন সিন্ধু।

Advertisement

শুধু গোপীচাঁদ নন, আছেন ঈশ্বর সিং দাহিয়াও। ব্রোঞ্জজয়ী সাক্ষী মালিককে যিনি হাতে গড়ে তৈরি করেছিলেন।OLYMPICS-RIO-WREST_2975849f সেই হরিয়ানা, যেখানে কন্যাভ্রুণ হত্যা রীতিমতো রেওয়াজ, যেখানে খাপ পঞ্চায়েতের নিদান যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সেখানে পুরুষতন্ত্রের প্রবল পরাক্রমের মধ্যে দাঁড়িয়েও সাক্ষীকে তিনি দিয়েছিলেন অবাধ স্বাধীনতা। সেই স্নেহচ্ছায়া, সেই প্রশ্রয়, সেই নিয়মানুবর্তিতাই ব্রোঞ্জের উপহার হয়ে দেখা দিয়েছে।

বাঙালি মেয়ে দীপা কর্মকার তো বরাবর বলছেন, তিনি পদক হারালেও তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী যেন দ্রোণাচার্য পুরস্কার পান। এই সেই কোচ যিনি দীপার ফোন থেকে সিমকার্ড বের করে রেখেছিলেন। বাবা-মা ছাড়া প্রায় আর কাউকেই ফোন করতে দেননি। গেমস ভিলেজে প্রায় ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন দীপাকে। উদ্দেশ্য একটাই, ফোকাসটা যেন সরে না যায়। এমনকী জন্মদিনের উদযাপনকেও সরিয়ে রেখেছিলেন পদকজয়ের সেলিব্রেশনের আশায়। দীপা পদক পাননি। কিন্তু যে দক্ষতায় তিনি প্রোদুনোভা ভোল্ট পারফর্ম করেছেন রিওতে, তা বিস্মিত করেছে তাবড় অ্যাথলিটদের। এমনকী একই ইভেন্টে থেকে, সোনা জিতেও ইউএস তারকা সিমোন বাইলস দীপার ভোল্টের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন।

dipa_webআজ দিকে দিকে ভারতীয় নারীর সাফল্যের বিজ্ঞাপন। দীপা, সাক্ষী, সিন্ধুরা ১৩০ কোটির মন জয় করে নিয়েছেন। আজ রজনীকান্ত থেকে বিগ বি সকলেই তাঁদের ফ্যান। আর সেই সাফল্যের উদযাপনের পাশে তৃপ্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন একজন গোপীচাঁদ, ঈশ্বর দাহিয়া বা বিশ্বেশ্বর নন্দী। খেলায় সবথেকে ব্যর্থ ভূমিকা পালন করে পরিসংখ্যান। আর তা পেরিয়ে যে লড়াই আর জেদের রূপকথা লেখা থাকে, এবারের ওলিম্পিকে যা সম্ভব হয়েছে, তা  এঁদের চোয়াল চাপা লড়াইয়ের জেরেই। আজ হয়তো ভারতীয় তিন কন্যার জন্য সমস্ত প্রশংসা ধ্বনির নেপথ্যে কান পাতলে প্রত্যেক দেশবাসীই যেন শুনতে পাচ্ছেন তিন ক্ষিদ্দার কণ্ঠস্বর- ফাইট সিন্ধু, সাক্ষী, দীপা…ফাইট।

(বিশ্বে ভারতীয় নারীর জয়, তবু নাচবে চিয়ার লিডার!)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ