Advertisement
Advertisement

Breaking News

Titas Sadhu

Titas Sadhu: ২২ কিমি দৌড়, জিম আর পরিশ্রম, অগ্নিকন্যা তিতাসের উত্থানের কাহিনি শোনালেন বাবা

'সোনার মেয়ে' তিতাসের মুকুটে এশিয়ার তাজ।

Father of Titas Sadhu explains the emergence of his daughter

এশিয়াডের ফাইনালে তিন উইকেট নিয়ে দলকে ভারতকে সোনা এনে দিলেন তিতাস সাধু। ছবি: টুইটার

Published by: Sabyasachi Bagchi
  • Posted:September 25, 2023 4:41 pm
  • Updated:September 25, 2023 6:05 pm

সব্যসাচী বাগচী: অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত সেই বিখ্যাত উপন্যাস-‘তিতাস একটি নদীর নাম’। সেই তিতাস ছিল উপন্যাসের। আর হুগলির তিতাস সাধু (Titas Sadhu) রক্ত-মাংসের এক ক্রিকেটার। যিনি সবসময় টগবগ করে ফুটছেন। বয়স মাত্র ১৮। তাতে কী! চেহারা ও আগুনে বোলিংয়ের তেজে বিপক্ষের ব্যাটিংকে অনায়াসে উড়িয়ে দিতে পারেন। সেটাই অবশ্য করেছেন এই বঙ্গ তনয়া। চলতি বছর একার দমে দেশকে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ (ICC Women’s Under-19 T20 World Cup) জিতিয়েছিলেন। আর এবার চাপের মুখে জ্বলে উঠে চলতি এশিয়ান গেমসে (Hangzhou Asian Games 2023) ভারতের মহিলা দলকে (Indian Womens Cricket Team) এনে দিলেন সোনা। এমন ‘সোনার মেয়ে’-কে নিয়ে যে তাঁর বাবা রণদীপ সাধু (Ranadip Sadhu) উচ্ছ্বসিত হবেন, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে।

কপিল দেব সবসময় একটা কথা বলতেন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের দাবি, ”বোলাররা তো শ্রমিক!” তিতাসের গর্বিত বাবার মুখেও প্রায় একই রকম কথা। সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে তিনি বলেন, “জোরে বল করতে গেলে গায়ের জোর লাগে। ক্রিকেটে জোরে বোলারের কাজ সবচেয়ে কঠিন। ব্যাটার কিংবা স্পিনারকে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। এবং ফাইনালে যে পরিশ্রম করেছে তার ফল পাচ্ছে। তবে আরও ডিসিপ্লিন বজায় রাখতে হবে।”

Advertisement

কিন্তু কীভাবে পেস বোলারদের মতো চেহারা গড়ে তুললেন? রণদীপের জবাব, “প্রতিদিন ও তিনটি সেশন করে। এছারা প্রতি সপ্তাহে ২২ কিলোমিটার দৌড়ায় তিতাস। এন্ডিওরেন্স, স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং ট্রেনিং, জিমের সঙ্গে সুষম খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ঘুম। এভাবেই বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করছে।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: এশিয়ান গেমসে হরমনপ্রীতদের ‘চক দে’, প্রথমবার নেমেই সোনা জয় ভারতের]

অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে তিতাসের (Titas Sadhu) বোলিং ফিগার ছিল ৪-০-৬-২। আর এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এশিয়াডের মেগা ফাইনালেও তাঁকে আটকানো গেল না। এবার তাঁর বোলিং ফিগার ৪-১-৬-৩। কোন স্পেল তাঁর বাবাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে? রণদীপ বলছিলেন, “দুটি ম্যাচই দেশ এবং তিতাসের কেরিয়ারে মাইলস্টোন ম্যাচ। তাই কোন ম্যাচের পারফরম্যান্স বেশি ভালো সেই তুলনায় আমি যাব না। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত ও এবার আরও ভালো বোলিং করতে পারত। রেকর্ড হিসেবে অবশ্যই ভালো। তবে তিতাসের বোলিং ভালো লাগেনি।”

Asian Games 2023 Titas Sadhu
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে এভাবেই দাপট দেখিয়েছিলেন তিতাস সাধু। ফাইল ছবি

স্লো পিচে স্মৃতি মান্ধানা ও জেমাইমা রড্রিগেজ দারুণ লড়াই করলেও, বাকিরা ব্যর্থ হন। ফলে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৭ উইকেটে ১১৬ রান উঠেছিল। বর্তমান যুগে এই রান চেজ করে জেতা একেবারেই কঠিন নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাজ কঠিন করে দেন তিতাস। নিজের তৃতীয় ওভারে তুলে নেন আশুঙ্কা সঞ্জিবনী ও ভিশ্মি গুণরত্নের উইকেট। ১৩ রানে ২ উইকেট। তবে তাঁর আগুনে গতি এখানেই থেমে থাকেনি। এবার তাঁর শিকার ছিলেন বিপক্ষের অধিনায়ক চামারি আটাপাট্টু। ১৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার আর ম্যাচে ফিরে আসার অবস্থা ছিল না। 

Asian Games 2023

কিন্তু কোন ছকে বিপক্ষের অধিনায়ককে বধ করলেন? রণদীপ যোগ করলেন, “ম্যাচের আগে আমরা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চামারি আটাপাট্টুকে নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। ওকে আউট করলেই যে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং শেষ হয়ে যাবে সেটাই বুঝিয়েছিলাম মেয়েকে। এমন পিচে সামনের দিকে বল করলে সাফল্য পাওয়া যাবে। তিতাস আমার কথা শুনেছে বলে ভালো লাগছে।”

[আরও পড়ুন: ‘মাঝেমধ্যে বড্ড একা লাগত!’ ১১ মাস পর শতরানের মুখ দেখে আবেগি শ্রেয়স]

অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ জিতে আসার পর তিতাস (Titas Sadhu) কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে ও ভারতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেয়। সেখানে সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব ২৩ দলের একসঙ্গে ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছিল। ওকে দেখেই সিনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে ডেকে নেওয়া হয়। সেই ওর পথচলা শুরু। যদিও আমার মতে তিতাস ওর যোগ্যতা থেকে মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ করেছে।”

দৌড়, সাঁতার, টেবিল টেনিস পেরিয়ে ক্রিকেট মাঠে আগেই বিশ্বজয়ী হয়েছেন হুগলির লড়াকু কন্যা। বাবা রণদীপ সাধু ছিলেন রাজ্যস্তরের অ্যাথলিট। খেলার দুনিয়ায় তিতাসের প্রবেশ স্প্রিন্টার হিসাবে। দৌড়তেন। পরে সাঁতার শুরু করেন। এমনকী, টেবিল টেনিসও খেলেছেন। হুগলির মহসিন কলেজের কাছে রাজেন্দ্র স্মৃতি সংঘে ক্রিকেটের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। পড়াশোনায় চৌখস। খেলাধুলোতেও পারদর্শী। মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। এহেন ‘সোনার মেয়ে’ ফের একবার বাইশ গজের যুদ্ধে আগুন ঝরালেন। দেশকে এনে দিলেন এশিয়াডে সোনা। যদিও এখন অনেক পথ বাকি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ