Advertisement
Advertisement

Breaking News

ICC World Cup 2023

ICC World Cup 2023: স্পিরিট নষ্ট করলেন কে? নিয়মের মধ্যে থেকে আউট করে শাকিব নাকি নিয়ম ভেঙে ম্যাথিউজ?

অহেতুক সময় নষ্ট করাটা কি ক্রিকেটীয় স্পিরিটের পরিপন্থী নয়?

ICC World Cup 2023: Controversy on Shakib Al Hasan and Angelo Mathews over timed out dismissal | Sangbad Pratidin
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:November 7, 2023 2:09 pm
  • Updated:November 7, 2023 4:39 pm

অণ্বেষা অধিকারী: ক্রিজে এসে সময় নষ্ট করছেন। সেই কারণে আউট দেওয়া হল ব্যাটারকে। তার পর থেকেই তোলপাড় ক্রিকেটদুনিয়া। ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের দাবি, অন্যায়ভাবে মাঠ ছাড়তে বলা হয়েছে ব্যাটারকে। অন্যপক্ষের যুক্তি, ক্রিকেটের নিয়মেই রয়েছে সময় নষ্ট করলে আউট দেওয়াই যায়। তাহলে এত বিতর্ক কীসের? বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2023) বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর অনেক ক্রিকেটবোদ্ধারই দাবি, ক্রিকেটের স্পিরিট নষ্ট হয়েছে। 

প্রশ্ন হল, স্পিরিট নষ্ট করলেন কে? বাংলাদেশ অধিনায়ক শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan) নাকি শ্রীলঙ্কা ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ (Angelo Mathews)? যদিও সাদা চোখে শাকিবকেই ‘অপরাধী’ হিসাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। তাঁর দিকে আঙুল তুলে বলা হয়েছে, ”আপনিই ক্রিকেটের আদর্শকে গলা টিপে মেরেছেন। ব্যাটারের হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিঁড়েছিল, সেই সুযোগে আপনি তাঁকে মাঠ থেকেই তাড়িয়ে ছাড়লেন। আপনিই নষ্ট করেছেন ক্রিকেটের স্পিরিট।”

Advertisement

যদিও আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছেন টাইগারদের অধিনায়ক। জানিয়েছেন, দেশের হয়ে যুদ্ধ করতে নেমেছে তাঁর দল। সেখানে নিয়ম মেনেই এক ব্যাটারকে আউট করতে চেয়েছিলেন। স্পিরিট নষ্টের কথা আসছে কোথা থেকে? কিন্তু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধেয়ে আসা বাউন্সার সামলাতে শাকিবের এই চেষ্টা একেবারেই ব্যর্থ। তিনি সমালোচনা, সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত।  

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘দুর্নীতিগ্রস্ত শাকিবের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত’, কেন একথা বললেন প্রসাদ?] 

কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠটা কি চোখে পড়ে না? দোষ কি কেবল একা শাকিবেরই?
বিতর্কিত ঘটনা প্রসঙ্গে চতুর্থ আম্পায়ার বলেছেন, মাঠে নামার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাটারকেই নিজের ব্যাট-হেলমেট ভালো করে দেখে নিতে হয়। কোনও সমস্যা হলে মাঠে নামার আগেই তা শুধরে নিতে হয়। সাংবাদিক বৈঠকে ম্যাথিউজ বলেছেন, ”ইকুইপমেন্ট ম্যালফাংশান’। তিনি আগে থেকে কীভাবে অনুমান করবেন হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে যাবে? হক কথা বলেছেন ম্যাথিউজ। নিজের যুক্তি তিনি এভাবেই সাজিয়েছেন।

সোমবারের ম্যাচে ম্যাথিউজ যখন ব্যাট করতে নামেন, সেই সময়ে বল করছিলেন স্বয়ং বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রশ্ন জাগছে, হেলমেট ছাড়া কি স্পিনারের একটা বলও সামলে দিতে পারতেন না অভিজ্ঞ লঙ্কান ব্যাটার? একটা বল খেলে হেলমেট পরিবর্তন করতেই পারতেন ম্যাথিউজ। ইদানীং কালে স্পিনার বল করতে এলে অনেকেই হেলমেট খুলে ফেলেন। ম্যাথিউজও কি সেই রাস্তা নিতে পারতেন না? নিজেও আউট হতেন না। বিতর্কেরও জন্ম দিতেন না।

ক্রিজে আসা নব্য ব্যাটার সময়ের অপচয় করছেন বলেই তাঁকে শাস্তিস্বরূপ ‘টাইমড আউট’ দেওয়া হয়। অপরাধ করেছেন কে, তা তো বলাই আছে নিয়মের মধ্যে। বুঝে হোক বা না বুঝে, ম্যাথিউজ কিন্তু  সময় নষ্ট করার জন্যই সেই শাস্তি পেয়েছেন। পেশাদার ক্রিকেটারদের নিয়ম জেনেই মাঠে নামতে হয়। ম্যাথিউজ জানতেন না তা নয়। জেনেশুনে কি বিষ পান করলেন শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটার? সময়ের অপচয়, সময় খরচ কি স্পোর্টসম্যানশিপের পরিচয়? খেলাধুলোর স্পিরিটও কি সেই কথাই বলে?

এখানেই শেষ নয়। মাঠের লড়াই মাঠেই শেষ হয়ে গেলে ভালো হত। ম্যাথিউজ কিন্তু থেমে যাননি। শাকিবকে ফেরানোর পরে অঙ্গভঙ্গি করে ‘টাইমড আউট’কেই ঘুরিয়ে ইঙ্গিত করেন। বাংলাদেশ অধিনায়ককে সাংবাদিক বৈঠকে আক্রমণ করে বসেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়েও কটাক্ষ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। আম্পায়ারদেরও ‘কমন সেন্স’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেনে। ‘টাইমড আউট’ হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরনোর সময়ে হেলমেট ছুড়ে ফেলে দিতেও দেখা যায় তাঁকে। ম্যাচের শেষে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে হাত মেলাতেও অস্বীকার করা হয়। সাংবাদিক বৈঠকে এসে বলে যান, বাংলাদেশ দলকে সম্মান করা যায় না। ম্যাথিউজ আরও বলেন, শাকিবকে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি চেনেন। এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত শাকিবকে শ্রদ্ধা করলেও এখন আর তাঁকে সম্মান করেন না।

 নিজেই বলেছেন, তাঁরা হলেন এই সুন্দর খেলাটার অ্যাম্বাসাডর। সেই ম্যাথিউজই ক্ষোভে, দুঃখে একটা দেশের ক্রিকেটকেই কটাক্ষ করে বসলেন। তাহলে ক্রিকেটের স্পিরিট ধ্বংস হল কার হাতে? নিয়মের মধ্যে থেকে আউট করা শাকিব নাকি লাগাতার অখেলোয়াড়োচিত আচরণ করে চলা ম্যাথিউজ?

‘টাইমড আউট’ নিয়ে বিতর্ক বহুদূর গড়িয়েছে। আগামিদিনেও চলবে। শাকিব ঠিক করেছিলেন নাকি ম্যাথিউজ ভুল করেছিলেন, সেই তর্ক থামার নয়। অনেকেই আবার বিষয়টাকে অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য বলেছেন, ”হোয়েন দ্য স্টেকস আর হাই, স্পিরিট স্টেজ লো।” অর্থাৎ যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরমে, সেখানে আদর্শ নষ্ট হতে বাধ্য। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। জেতার জন্য মরিয়াছিল দুদল।

ক্রিকেটীয় নিয়ম মেনে চলার পরেও স্পিরিট নষ্টের অভিযোগে বিদ্ধ হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয় ক্রিকেটে। আইপিএলে জস বাটলারকে ‘মানকাডিং’ করে তুমুল কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিজের কাজের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে আরও সমালোচনার ঝড় ধেয়ে এসেছিল ভারতীয় স্পিনারের দিকে। ইংল্যান্ডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়েও চলে বিতর্ক। নিয়মের মধ্যে থেকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল ইংল্যান্ডকেই।

বাস্তব জীবনে দুমিনিট দেরি হলে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দেয়। মিনিট দুয়েকের গাফিলতিতে এক চিকিৎসকের গোটা কেরিয়ার ধ্বংস হতে পারে, পরীক্ষার্থীর পাশ করা আটকে যেতে পারে। তাহলে খেলার মাঠে দুমিনিট দেরির জন্য শাস্তি জুটবে না? অহেতুক সময় নষ্ট করাটা কি ক্রিকেটীয় স্পিরিটের পরিপন্থী নয়? ‘টাইমড আউট’-এর ঘটনায় ফের উসকে গেল সেই প্রশ্ন। ক্রিকেটের নিয়ম মেনে জেতার জন্য মরিয়া হলে জুটবে স্পিরিট ভঙ্গের তকমা? আর স্পিরিটের দোহাই দিয়ে রেহাই পেয়ে যাবেন নিয়মভঙ্গকারীরা? আপনারা কী বলেন? বিচারের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিলাম পাঠকের উপরেই। 

[আরও পড়ুন: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের ‘টাইমড আউট’-এর জের, ম্যাচের শেষে শাকিবদের সঙ্গে হাত মেলালেন না কুশল মেন্ডিসরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ