Advertisement
Advertisement

Breaking News

India vs Australia IPL

এরপরও প্রশ্ন করা হবে না শাস্ত্রীদের? ছত্রিশের লজ্জা চাপা পড়ে যাবে আইপিএলের স্তূপে

সোশ‌্যাল মিডিয়ায় যতদিন চিৎকার হবে, হবে, তারপর চুপ, লিখছেন গৌতম ভট্টাচার্য।

India vs Australia: Shameful scoreline wont change mindset as IPL and white ball cricket dominates India |Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:December 20, 2020 1:48 pm
  • Updated:December 20, 2020 1:50 pm

গৌতম ভট্টাচার্য: ভারতের এক একজন কিংবদন্তি ব‌্যাটসম‌্যানের গায়ে লেগে রয়েছে এক একটা দলগত ব‌্যাটিং-কলঙ্কের দাগ। যা এমনই দীর্ঘস্থায়ী যে কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক বছর পরেও ওঠার নয়।
বিজয় হাজারে : ৫৮ (অস্ট্রেলিয়া ১৯৪৭-৪৮)
পলি উমরিগড় : ৫৮ (ইংল‌্যান্ড ১৯৫২)
সুনীল গাভাসকর : ৪২ (ইংল‌্যান্ড ১৯৭৪)
শচীন তেণ্ডুলকর : ৬৬ (দক্ষিণ আফ্রকা ১৯৯৬)
আর ক্লাবে নবতম তিনি বিরাট কোহলি: ৩৬ (অস্ট্রেলিয়া ২০২০)

কোহলিকে (Virat Kohli) শুধু আধুনিক প্রজন্ম নয়, তার পূর্ববর্তী সময়ও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। এমন একজন ক্রিকেটার যার তিন ফর্ম‌্যাটেই পঞ্চাশের ওপর অ‌্যাভারেজ। যাকে দেখে কপিল দেব-দিলীপ বেঙ্গসরকরদের মনে হয়েছে, কোহলি সেই সময়কার চার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারকেও খেলে দিতেন। তাঁর সঙ্গে কিনা আজকের পর থেকে জড়িত হয়ে থাকল অষ্টাশি বছরের ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে বড় লজ্জা!

Advertisement

Shameful scoreline wont change mindset as IPL and white ball cricket dominates India

Advertisement

ডেভিড ওয়ার্নারের (David Warner) টুইটের একটা শব্দে প্রথম দু’ঘণ্টার অ‌্যাডিলেড ওভাল ধরা পড়ছে-আনরিয়্যাল। সত্যিই তো অবাস্তব। কারণ যে টিম ৬২ রানে এগিয়ে থেকে শনিবার ম‌্যাচ শুরু করেছিল, তারা কিনা একটা সময় হয়ে গেল ১৫-৫। তারপর কোহলি ফিরে যেতে ১৯/৬। হ‌্যাজেলউড আর কামিন্স শুধু অফস্ট‌্যাম্প ও তার বাইরে, এই লাইন রেখে বল করে গিয়েছেন। ম‌্যাচ শেষে তাঁদের রেকর্ড দেখলে মনে হবে একজন লিলি, আর একজন ম‌্যাকগ্রা।

লর্ডসে ভারতের ফর্টি টু অল আউটের পর ব‌্যঙ্গ করে ব্রিটিশ প্রেস লিখেছিল, বাথরুমে যাওয়ার উপায় নেই। তার আগে না এরা অল আউট হয়ে যায়। এদিন ভারতীয় শোভাযাত্রা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল একটা লম্বা টেক্সট মেসেজের উত্তর দেওয়ার উপায় খোলা নেই। তার আগেই না কোহলির টিম নিউজিল‌্যান্ডের এবং বিশ্বের সর্বকালীন কম রানের ইনিংসকে (২৬) ভেঙে দেয়! সেটা যে ঘটেনি তাতেই ভারতের পুলকিত হওয়া উচিত। ভারতীয় ব‌্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরকে যে কড়া প্রশ্ন করা হবে। বা কোচ রবি শাস্ত্রীর (Ravi Shastri) কাছে জানতে চাওয়া হবে কেন তোমার টিম নিউজিল‌্যান্ড থেকে শুরু করে এনিয়ে টানা তিন টেস্ট তিন দিনের মধ্যে হেরে গেল? তেমন কোনও সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। সোশ‌্যাল মিডিয়ায় যতদিন চিৎকার হবে, হবে, তারপর চুপ।পঁয়ষট্টি বছর পর কোনও ক্রিকেট টিম এক ইনিংসে এত কম রান তুলল এই রূঢ় তথ‌্যকে যদি সরিয়েও রাখি, এখনকার দিনে ৩৬ অল আউট হতে চাইলেও তো হওয়া শক্ত। পিচ ঢাকা থাকে। বাউন্ডারি ছোট হয়ে গেছে। বাউন্সারে নিষেধাজ্ঞা এসে গেছে। ব‌্যাটগুলো এত ভাল যে একটু লাগলেই চার-ছয় হয়ে যায়। আর অ‌্যাডিলেড ওভালের সাইড বাউন্ডারি তো কলকাতার সিসিএফসি মাঠের চেয়েও
ছোট।

[আরও পড়ুন: লজ্জার ব্যাটিং বিপর্যয়, অ্যাডিলেডে টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর ভারতের]

শুধু এক বেলা পিচ একটু দ্রুতগতির ছিল। বল আরর গড়পরতা দিনের চেয়ে বেশি নড়েছে বলে লর্ডসের সেই কুখ‌্যাত সামার অব ফর্টি টু-কে ভেঙে দিয়ে কিনা অ‌্যাডিলেডের সামার অব থার্টিসিক্স। অথচ ডন ব্র‌্যাডম‌্যানের শহর ঐতিহাসিকভাবে ভাল ব‌্যাটিং সারফেস হিসেবে খ‌্যাত। দ্রাবিড়ের ডাবল সেঞ্চুরি (Rahul Dravid) এখানে, হাজারে ও কোহলির এক টেস্টের দু’ ইনিংসে সেঞ্চুরি এখানে। সৌরভের তখনকার ভয়ঙ্কর পাকিস্তান অ‌্যাটাককে মেরে ওয়ানডে হান্ড্রেড এখানে। সেই পিচে ৩৬! জাস্ট গোলাপি বল একটু বেশি নড়েছে বলে? শনিবার ম‌্যাচ শেষে এক জাতীয় নির্বাচককে ফোনে ধরলাম। এই যখন ব‌্যাটিংয়ের অবস্থা এবং কোহলি ফিরে আসছেন, তখন হার্দিক পাণ্ডিয়াকে কেন পাঠানো হবে না? দেশে ফিরে সন্তানের সঙ্গে তাঁর ইনস্টাগ্রামে ছবি সকলের চোখে পড়ছে।

Shameful scoreline wont change mindset as IPL and white ball cricket dominates India

কিন্তু যিনি ব‌্যাটিং শৌর্যে জাস্ট কয়েক সপ্তাহ আগে টিম পেইনদের দেশ থেকে ‘ম‌্যান অব দ‌্য সিরিজ’ হয়ে ফিরেছেন, তাঁকে তো অবিলম্বে হাতে প্লেনের টিকিট তুলে দেওয়া উচিত। একটা থিয়োরি বাজারে চলছে যে ৮/১০ ওভার বল করার মতো ফিট হলে তবেই হার্দিককে টেস্টে ফেরানো হবে। নির্বাচক ঠিক তাই বললেন। আর সেটা বোগাস এ জন‌্য যে আগে তো দল বাঁচাতে ব‌্যাটিংয়ের লোক চাই। তারপর বোলিং। অস্ট্রেলিয়া ম‌্যানেজমেন্ট এরপর বাকি সিরিজের মডেল বোলিং প্ল‌্যানই শুধু পেয়ে গেল না। ধরে নেওয়া যায় বক্সিং ডে টেস্টে এরকমই ছুটন্ত পিচ রাহানেদের জন‌্য রাখবে।

তবে হার্দিকও ডাক না পেয়ে হয়তো খুশিই হবেন। হার্দিকরা জানেন টেস্ট ম‌্যাচ না খেললেও কেরিয়ার দিব্যি চলে যাবে। টেস্টে টাকা কম। স্পনসরশিপের খোঁজ পাওয়া যায় না। নইলে গতবছরের অস্ট্রেলিয়ার পর পূজারার সবকটা এনডোর্সমেন্ট পাওয়া উচিত ছিল। উলটে টেস্টের পরীক্ষাটা অনেক কঠিন। কোহলি জানেন টেস্ট ক্রিকেটের মূল‌্য। তার দামও দেন। কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা শর্ট কাট পেতে অভ‌্যস্ত। ফেব্রুয়ারিতে ইংল‌্যান্ডের সঙ্গে দেশে টি টোয়েন্টি আছে। এপ্রিলে আইপিএল। কিছু মধ‌্যবয়সী এবং প্রৌঢ় ছাড়া কাদেরই বা আগ্রহ আছে টেস্ট ক্রিকেটে? হার্দিকরা নির্ঘাৎ ভাবেন ইনস্টাগ্রাম জেনারেশনের জন‌্য ও দুটো ২০ বলে ৫৩ করে দেব। একটা ম‌্যাচ ঘোরানো উইকেট নিয়ে নেব। কয়েকটা ডট বল করব। জনতা সব ভুলে যাবে।

[আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ইনিংসে লজ্জার ব্যাটিং কোহলিদের, হাসতে হাসতে অ্যাডিলেড টেস্ট জিতল অস্ট্রেলিয়া]

অথচ অতীতের জেনারেশনকে ভারতীয় ব‌্যাটিং কলঙ্কের জন‌্য তীব্র অপমানিত হতে হয়েছে। বাহান্ন’র ইংল‌্যান্ড সফরের পর পঙ্কজ রায় থেকে বিজয় মঞ্জরেকর। পলি উমরিগড় থেকে ভিনু মানকড়। পর্যায়ক্রমে সবাই টিটকিরি শুনেছেন, ওই আসছে ট্রুম‌্যান। আর লর্ডসে ফর্টি টু অল আউটের দিনে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের পার্টিতে মিনিট দশেক দেরিতে ঢোকায় ভারত অধিনায়ককে বার করে দেন তখনকার রাষ্ট্রদূত বি কে নেহরু। বলেছিলেন, “তোমরা মাঠেও বাজে। আবার মাঠের বাইরেও দেরি করেছো। জাস্ট গেটআউট।” বিদেশে নিজস্ব হাই কমিশন থেকে গোটা টিমকে বার হয়ে যেতে বলা হচ্ছে এমন নজির আর নেই। ফর্টি টু অল আউট সেটা সম্ভব করেছিল। কেউ শুনতে চায়নি প্রথম ইনিংসে যে ভারত তিনশোর ওপর রান করেছিল। রাতে বেঙ্গালুরুতে সেই টিমের এক সদস‌্য এরাপল্লী প্রসন্নকে ধরা গেল। প্রসন্ন করেছিলেন ৫। সোলকারের নট আউট ১৮-র পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। ছেচল্লিশ বছর পুরনো একটা জখমে কি মলম লাগল? আজ থেকে তো আর কেউ বলতে পারবে না, তোরাই ইতিহাসে সবার নীচে।

Shameful scoreline wont change mindset as IPL and white ball cricket dominates India

প্রসন্ন হাসলেন, “হোয়াট অ‌্যা ওয়ে টু লুক অ‌্যাট দিজ।” কিন্তু ফোনের হাসিতে পরিষ্কার অনুমোদনের ছাপ। ভারতীয় ক্রিকেটারের ডিফেন্সিভ টেস্ট ম‌্যাচ ব‌্যাটিংয়ের ক্ষমতা যেমন তলানিতে ঠেকেছে তাতে অ‌্যাডিলেডের সামার অব থার্টি সিক্সও অদূর ভবিষ‌্যতে ভেঙ্গে গেলে বিচিত্র নয়। সমস‌্যা হল তখন কাউকে ফোন করে তৃপ্তির হাসি শোনার উপায় বোধহয় থাকবে না। যন্ত্রণাটাই তো কুরে কুরে খাবে না। এদের পৃথিবী যে সাদা বল আর আইপিএলের! তার বাইরে যা কিছু সব স্প‌্যাম!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ