সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লর্ডসে গিয়ে যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমীর অন্যতম ডেস্টিনেশন, সেই ব্যালকনিটি, যেখানে জার্সি খুলে উড়িয়েছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি নিজে এ ঘটনায় এখন অবশ্য লজ্জা পান। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের উদ্ধত-অহঙ্কারের এ যেন এক নিশান। আর এবার নিজের সেই কাজের পুনরাবৃত্তিও চেয়ে বসলেন তিনি। তবে বদলে গেল চরিত্র। বদলাল স্থান। সেদিনের অধিনায়কের বদলে থাকবে বর্তমান অধিনায়ক। লর্ডসের বদলে হবে অক্সফোর্ড স্ট্রিট। সৌরভের বিশ্বাস, ২০১৯-এর বিশ্বকাপ জিতলে অস্কফোর্ড স্টিটে জামা খুলেই ঘুরবে কোহলি।
[ কোহলি-বিজয়ের চওড়া ব্যাটে কোটলায় রানের পাহাড়ে ভারত ]
ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল জয় ভারতীয় ক্রিকেটে প্রায় রূপকথা। ২০০২-এ ঝড়-ঝাপটা সামলে তখন একটু একটু করে আগ্রাসী চেহারা নিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দলের অ্যাটিটিউডেও বদল আনছেন তিনি। সে সময়ই ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ জার্সি খুলে ভারতকে তাচ্ছিল্য উপহার দিয়েছিলেন। সে বছরই ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জিতে মুখের উপর জবাব দেয় ভারত। তবে শুধু ব্যাটে-বলে নয়। জার্সি খোলাতেও। ভারতীয় ক্রিকেটের স্ল্যাম বুকে সে কথা উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা। আর সেদিনের অধিনায়ক চাইছেন দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চলতি সিরিজে টানা দুটো দ্বিশতরান করলেন কোহলি। এই সময়েই তাঁকে নিয়ে আলোচনায় মেতেছিলেন তিন তারকা। সৌরভ-লক্ষ্মণ-হরভজন। ছিলেন আকাশ চোপড়াও। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানেই কোহলির ভূয়সী প্রশংসা করেন সৌরভ। জানান, “সব ধরনের ফর্ম্যাটে কোহলির যা ফর্ম তা অবিশ্বাস্য। ইতিমধ্যেই রেকর্ড ভাঙতে ভাঙতে নয়া রেকর্ড গড়ে এগোচ্ছে সে। আগে আমরা যখন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতাম। ভাবতাম লক্ষ্মণ-হরভজন একাই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেবে। এখন সেই ভরসা পাই কোহলিকে দেখে।”
[ বিরাটের মুকুটে নয়া পালক, টেস্টে ৫০০০ রানের ক্লাবে অধিনায়ক ]
কোহলিকেই ভারতীয় ক্রিকেটের রানার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সৌরভ। জানিয়েছেন, “আমরা যখন খেলতাম তখন ক্রিকেটটাও অন্যরকম ছিল। ভাবনা-চিন্তাও আলাদা ছিল। সময়ের সঙ্গে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার। ধোনি এসে সে কাজ করেছে। এখন নতুন সময়ে কোহলি তা করে চলেছে। সবথেকে ভাল ব্যাপার হল, বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট আলাদা আলাদা রোল মডেল পেয়ে চলেছে।” আর তারপরই তাঁর সহাস্য উক্তি, “যদি ভারত ২০১৯-এর বিশ্বকাপ জেতে, তবে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে জামা খুলে ঘুরবে কোহলি।” বাকিদের দিকে তাকিয়ে সৌরভ জানিয়ে দেন, ‘এই কথা যেন তাঁরা মনে রাখেন।’
বস্তুত দলে কোহলির অ্যাটিটিউড নিয়ে প্রশ্ন কম নয়। বিশেষত কুম্বলের সঙ্গে তাঁর বিরোধিতার পর্যায়ে তরুণ ক্রিকেটারের ঔদ্ধত্যকে অনেকেই অন্য চোখে দেখেছিলেন। সমালোচনাও হয়েছিল। এমনকী সুনীল গাভাসকরের মতো কিংবদন্তিও ছেড়ে কথা বলেননি। সৌরভ আবার অ্যাডভাইজারি কমিটির অন্যতম ছিলেন। যাঁদের হাতেই ছিল কোচ নির্বাচনের ভার। কিন্তু সৌরভ-শচীন-লক্ষ্মণ জুটিও কার্যত নিশ্চুপ হয়েছিল বিরাট চাহিদার সামনে। কোহলির প্রতি অবশ্য কোনওরকম ভুল ধারণা নেই সৌরভের। একাধিকবার সে কথা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। দলের জন্য যা ভাল। তাইই অধিনায়ক করেন। সৌরভ নিজে তা করেছেন। সমালোচনা মাথায় নিয়ে ধোনিও করেছেন। বিরাটও করে চলেছেন। প্রাক্তন অধিনায়ক হয়ে তাই বর্তমান অধিনায়কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন সৌরভ।
[ অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টে কী পেপটক দিয়েছিলেন বিরাট? ]
অধিনায়ক হিসেবে ঘষেমেজেই নিজের পছন্দের দল গড়ে নিয়েছেন কোহলি। তারুণ্য ও প্রতিভায় ভরপুর তাঁর এই দল। সেখানে হার্দিক পান্ডিয়া যেমন অভিনব কায়দায় চুল কাটান, তেমন ব্যাটিং অর্ডারে আগে নামালে দিব্যি ছক্কাও হাঁকান। বুমরাহরা যেমন পার্টি করেন, তেমনই ডেথ ওভারে বিপক্ষকে ঘায়েলও করেন। সময়ের নিরিখে পুরনো খোলস ছেড়ে বেরিয়েছে ভারতীয় টিম। আর সেই আগ্রাসন, অ্যাটিটিউড, খোশমেজাজের মাত্রাটা একেবারে সামনে থেকেই নিজের কাজে ও ফর্মে বেঁধে দিচ্ছেন ক্যাপ্টেন কোহলি। তাহলে কি ন্যাটওয়েস্টের পুনরাবৃত্তি হবে? দাদার কথা শুনে ক্রিকেটপ্রেমীরা মুচকি হেসে বলছেন, হলে মন্দ হয় না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.