Advertisement
Advertisement
Sourav Ganguly

ছিটকে গিয়েছেন বোর্ডের বৃত্ত থেকে, কামব্যাকের প্রেরণা খুঁজতে সোনালি অতীতই ভরসা সৌরভের?

প্রত্যাখ্যানকেও কখনও মেনে নিতে হয়, বললেন সৌরভ।

Sourav Ganguly recapitulates his golden past | Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:October 13, 2022 6:05 pm
  • Updated:October 13, 2022 8:42 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রিকেটার জীবনে নিজের উপরে চাপ কমানোর জন্য কোচ হিসেবে গ্রেগ চ্যাপেলকে এনেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। তার পরের ঘটনা সবারই জানা। 

বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য ভরসা করেছিলেন জয় শাহকে (Jay Shah)। বিসিসিআই (BCCI) থেকে সৌরভের অপসারণের পিছনে শাহ-পুত্রের ‘ভূমিকা’ নিয়েও জল্পনা এখন তুঙ্গে।

Advertisement

আজ, বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুষ্ঠানে সিংহাসন হারানো মহারাজ কখনও ফিরে যাচ্ছেন তাঁর খেলোয়াড় জীবনে, তুলে ধরছেন ক্যাপ্টেন হিসেবে ফেলে আসা সোনালি বিকেলগুলো। সৌরভ কি নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লেন? নাকি বোর্ড থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে যাঁরা জড়িত, তাঁদেরকেই মনে করিয়ে দিলেন সৌরভোচিত ক্রিকেট জীবনের সোনালী অতীত? তিনি তো প্রত্যাবর্তনের মহারাজ। বহুবার বাদ পড়ে ফিরে এসেছেন। কেরিয়ারের গৌরবজনক মুহূর্তগুলো স্মরণ করে সৌরভ যে পরের লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন না, তা কে বলতে পারে!

Advertisement

হয়তো তাই। নাহলে কেন তিনি তুলে ধরবেন লর্ডসের অভিষেক টেস্টে শতরানের প্রসঙ্গ। জীবনের প্রথম টেস্টে যে শটগুলো খেলেছিলেন লর্ডসের মাঠে সেগুলো আজও তাঁর স্মৃতিতে টাটকা। জীবনের কঠিন সময়ে সৌরভ ফিরে যাচ্ছেন সেই সব দিনগুলোয়। 

‘আরও বড় কিছু করতেই পারি’, বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ খুইয়ে কীসের ইঙ্গিত দিলেন সৌরভ?

বেসরকারি ব্যাংকের অনুষ্ঠানে বড় স্ক্রিন বোর্ডে দেখানো হচ্ছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে সৌরভের ব্যাটিংয়ের কিছু ঝলক। সেই ম্যাচে সৌরভ করেছিলেন ৪৬ রান। পঞ্চাশ হাতছাড়া হয়েছিল। সেই ওয়ানডে ম্যাচ প্রসঙ্গে সৌরভ বলছিলেন, ”খেলাটা ছিল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ম্যাচের দিন সকালেও জানতাম না খেলব। তখন মে মাস, বৃষ্টি হচ্ছিল ম্যাঞ্চেস্টারে। খুব ঠাণ্ডা। ওয়ার্ম আপের সময় জানানো হল আমি খেলছি। টস হারে আজহার। ইংল্যান্ড আমাদের ব্যাট করতে পাঠায়। শচীন আউট হয়ে যায় শুরুতেই। আমাকে ওয়ান ডাউনে পাঠানো হল। ভালভাবে প্রস্তুত হওয়ার সময়ই পাইনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরকম পরিস্থিতি সুবিধা করে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। ব্যাট করতে নেমে একটা জিনিসই কেবল করে গিয়েছিলাম– বোলাররা বল করছে, আর আমি সেই অনুযায়ী রিঅ্যাক্ট করে গিয়েছি। ওই ইনিংস আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগায়।”

পেস সহায়ক পিচে ইংল্যান্ডের পেসারদের দারুণ সামলেছিলেন সৌরভ। কিন্তু আউট হয়ে যান স্পিনার গ্রাহাম থর্পের বলে। সেই ওয়ানডের তিন সপ্তাহ পরে লর্ডসের ঐতিহাসিক টেস্ট। বাঙালি সেদিন গর্ব করেছিল। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন সৌরভ। 

অভিষেক টেস্ট প্রসঙ্গে স্মৃতিরোমন্থন করে সৌরভ বলছেন, ”পূর্বাঞ্চল থেকে জাতীয় দলে যাত্রা ছিল খুবই কঠিন। অনেকেই মনে করতেন পূর্বাঞ্চলে প্রতিভার অভাব। আমার আগে পঙ্কজদা (রায়) খেলেছিলেন জাতীয় দলে। তার পরে আরও কয়েকজন খেলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি। দীর্ঘদিন পরে আমি সুযোগ পেয়েছিলাম। আর লর্ডস টেস্টে খেলা প্রতিটি শট এখনও আমার মনে আছে। দ্বিতীয় দিনের শেষে পুল মেরেছিলাম ক্রিস লুইসকে। আমি যেদিন সেঞ্চুরি পেয়েছিলাম, সেদিনটা ছিল শনিবার। গ্যালারি পুরোদস্তুর ভর্তি ছিল। তখন টি টোয়েন্টি যুগ ছিল না। টেস্ট ক্রিকেটকে অপরিসীম গুরুত্ব দেওয়া হত। আমি প্রতি দশ রান করে ভাবছিলাম। প্রথমে দশ রান, পরে ২০…কয়েক ঘণ্টা পরে দেখলাম আমার নামের পাশে লেখা ৯০ রান। তখন মনে হয়েছিল আমাকে আরও দশ রান করতে হবে। শেষে মুলালির বলে ১৩১ রানে আউট হয়েছিলাম। লর্ডস টেস্টের মতো মানসিকতা নিয়ে আমি পরে আর খেলিনি। লর্ডসের পরেও অনেক টেস্ট খেলেছি। সেঞ্চুরি করেছি, ডাবল সেঞ্চুরিও করেছি। লর্ডসের সেঞ্চুরি আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। অভিজ্ঞতা থেকে আমি উপলব্ধি করেছি, একদিনে সাফল্য আসে না। একদিনে কেউ শচীন তেণ্ডুলকর হয় না, একদিনে আম্বানি বা নরেন্দ্র মোদিও হওয়া সম্ভব নয়। আমি শিখেছি জীবনে সাফল্য, ব্যর্থতা আসে। আবার কখনও কখনও প্রত্যাখ্যানকেও মেনে নিতে হয়।”  

লর্ডস সৌরভের পয়মন্ত মাঠ। তেমনই ইডেন। ক্রিকেটের নন্দনকাননেই তো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই দুরন্ত টেস্ট ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ফলো অন করিয়েছিল ভারতকে। তার পরে ভিভিএস লক্ষ্ণণ ও রাহুল দ্রাবিড়ের দুর্দান্ত ইনিংস। পরে হরভজন সিংয়ের হ্যাটট্রিকে ধরাশায়ী হয় স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া। টাইমমেশিনের সাহায্য না নিয়ে সৌরভ বলে চলছিলেন, ”ফলো অন হওয়ার পরে আমরা ভাল ব্যাটিং করি। কখন ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে আমার আর জনের (রাইট) সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। জন বলছিল, আরও কিছুটা রান হোক, তার পরে ডিক্লেয়ার করো। আমার বাবা মাঠে খেলা দেখছিলেন। এক কর্মীর মাধ্যমে আমার কাছে জানতে চান কখন ইনিংস ছাড়ব।” পরের ঘটনা ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। সৌরভ আরও বলেন, ”আমি উপলব্ধি করেছি, কঠিন পরিশ্রম করলে ঈশ্বর একদিন ভাল কিছু করবেনই।”

নেতা হিসেবে যৌবন আর অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন সৌরভ। পুরনো দিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ সৌরভ বলেন, ”আমি যখন ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম, সেই সময়ে কুম্বলে, শচীন, লক্ষ্ণণ, জাহির, দ্রাবিড়ও ক্যাপ্টেন হওয়ার যোগ্য ছিল। আমাদের মধ্যে দারুণ মিল ছিল। আমি সবার কথা শুনতাম। ফলে সৌরভের টিম হলেও দায়িত্ব ছিল সবারই। যুবি, কাইফ যখন ব্যাট করত, তখন ওরা বেশি বল পেত না খেলার জন্য। ওরা ওই অল্প সময়ে ব্যাট করে ম্যাচ জেতাত। ওদের ভূমিকা, ওদের সাফল্যকেও কৃতিত্ব দেওয়া হত।” সেই কারণেই একটা দল হয়ে উঠেছিল সৌরভের ভারত।  

ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালের একটি মুহূর্ত তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠান মঞ্চের স্ক্রিনে। সেখানে তখন দেখা যাচ্ছে সেহওয়াগ ২১, সৌরভ ৫১। সেই ফাইনালে রনি ইরানির ওভারে চারটি চার হাঁকিয়েছিলেন বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। প্রতিটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পরে সৌরভ গিয়ে বীরুকে আক্রমণাত্মক শট না খেলার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। সেই প্রসঙ্গে সৌরভ বলেন, ”আমি পরে উপলব্ধি করি বীরুকে শট খেলতে নিষেধ করে আমি ঠিক কাজ করিনি। কারণ ক্রিকেট যদিও দলগত খেলা কিন্তু দিনের শেষে এটা তো ব্যক্তিগত খেলাও বটে। প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা থাকে। আমি রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে বীরুর মতো ব্যাটিং প্রত্যাশা করতে পারি না।”

অনুষ্ঠানে নিজের ক্রিকেট জীবনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা তুলে ধরছিলেন সৌরভ। এই কঠিন সময়ে ফেলে আসা মুহূর্তগুলোই হয়তো সৌরভকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে জীবনের পরের অধ্যায়ের জন্য। তাই তো তিনি বলছেন, ”আমি সিএবি প্রেসিডেন্ট ছিলাম পাঁচ বছর। বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট ছিলাম তিন বছর। এর পরে আরও বড় মঞ্চে নিজেকে অন্য ভূূমিকায় দেখব বলেই বিশ্বাস রাখি।” আরও বড় কিছুর ইঙ্গিত কি দিয়ে গেলেন সৌরভ? 

[আরও পড়ুন: সেমিফাইনালে বোলারদের দাপট, থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে ভারতের মেয়েরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ