BREAKING NEWS

১৭ চৈত্র  ১৪২৯  শনিবার ১ এপ্রিল ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

ক্যানসারে মারা যান বাবা, মাকে শুনতে হয়েছিল ‘ডাইনি’ অপবাদ, তাক লাগাবে অর্চনার ‘যুদ্ধ’

Published by: Krishanu Mazumder |    Posted: January 30, 2023 3:56 pm|    Updated: January 30, 2023 6:46 pm

Take a look at U-19 World Cup star Archana Devi’s glaring life story । Sangbad Pratidin

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনেছিলেন তাঁর স্বামী। সাপের কামড়ে প্রাণ গিয়েছিল ছোট ছেলের। স্বামী-পুত্রর মৃত্যুর পরে সাবিত্রী দেবীকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।

এখানেই শেষ নয়। মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে পাঠানোয় পরিবারের সদস্যরাও ছেড়ে কথা বলেননি সাবিত্রী দেবীকে। রবিবার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ (ICC Women’s Under-19 T20 World Cup) ফাইনালে প্রয়োজনের সময়ে ভারতকে উইকেট এনে দেন সাবিত্রীর কন্যা অর্চনা (Archana Devi)। ইংল্যান্ডের গ্রেস স্ক্রিভেন্স ও নিয়াম হল্যান্ডকে ফেরান অর্চনা। একহাতে ক্যাচ নিয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। 

 

[আরও পড়ুন: ‘ইউরোপে ফিরতে পারে রোনাল্ডো’, পর্তুগিজ তারকাকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী আল নাসের কোচের]

 

দেশের বিশ্বজয়ের আনন্দে সবাই এখন ভাসছেন। কিন্তু অর্চনার মা সাবিত্রী কীভাবে ভোলেন ফেলে আসা দিনগুলোর কথা? টাইমমেশিনের সাহায্য না নিয়ে তিনি ফিরে যাচ্ছেন পুরনো দিনগুলোয়। কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে মেয়ের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। পাড়াপড়শি বলাবলি শুরু করেছিল, অর্চনাকে বিক্রি করে দিয়েছে ওর মা। গঞ্জ মোরাদাবাদে ছিল মহিলাদের বোর্ডিং স্কুলটি। সাবিত্রীদের গ্রাম থেকে ১৫-২৯ কিমি দূরে ছিল সেই স্কুল। স্মৃতিরোমন্থন করে সাবিত্রী বলছিলেন, ”ওরা বলেছিল, মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে। ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে মেয়েকে।” মুখের উপর সাবিত্রীকে এসব কথা শুনতে হত। 

রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের মেয়েরা যখন লড়াই করছেন, ঠিক সেই সময়ে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে ভিড় জমান অনেকে। একদিন এঁদের সমালোচনায় রক্তাক্ত হয়েছিলেন সাবিত্রী দেবীরা। তিনি বলছিলেন, ”আমার বাড়িতে অতিথিদের ভিড়। ওদের জন্য আমার কাছে অতিরিক্ত কম্বলও নেই। যে পাড়াপড়শি আমার ঘর থেকে এক গ্লাস জলও খায়নি এতদিনে, তারাই এখন আমাদের সহযোগিতা করার জন্য হাত বাড়িয়েছে।” 

অর্চনার বাবা শিবরাম ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানেন ২০০৮ সালে। অনেক টাকা ধার করে ফেলেছিলেন তিনি। সাবিত্রীর উপরে ঋণের বোঝা চাপিয়ে এবং তিন সন্তানের দায়িত্ব দিয়ে ইহলোক ছেড়ে পরলোকে পাড়ি দেন শিবরাম। ২০১৭ সালে ছোট ছেলে বুধিমান সিং সাপের কামড়ে প্রাণ হারায়। বড় ছেলে রোহিত কুমার পুরনো দিন প্রসঙ্গে বলেন, ”গ্রামের মানুষ আমার মাকে ডাইনি বলত। বলত, আগে স্বামীকে খেয়েছে, পরে ছেলেকে। মাকে অপয়া বলে মনে করত ওরা। অনেকে আমার মাকে দেখে রাস্তা বদলে ফেলত।” ডাইনির বাড়ি বলে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল অর্চনাদের বাড়ি।  

দিল্লিতে একটি জামা কাপড়ের ফ্যাক্টরিতে কাজ করত অর্চনার দাদা রোহিত। করোনার তাণ্ডবের সময়ে চাকরি হারান তিনি। বিশ্বকাপ ফাইনাল চলাকালীন রোহিতদের ঘরে এসে অতিথিরা বলতে থাকেন, ”তোমাদের ভাগ্যই তো এখন বদলে গেল।” কিন্তু সেই সব কথায় কর্ণপাত করার সময় ছিল না সাবিত্রী দেবীর। তিনি তখন রান্নাঘরে ২০-২৫ জনের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন।  

ছোট্ট এক গ্রাম থেকে বিশ্বজয়ের বীজ বুনলেন কীভাবে অর্চনা? অর্চনার প্রতিভা দেখে স্কুল শিক্ষিকা পুণম গুপ্তা বুঝতে পেরেছিলেন, এই মেয়ে বহুদূর যাবে। গরমের ছুটিতে কানপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন পুণম। সেই সময়ে কুলদীপ যাদবের কোচ কপিল পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই। অর্চনাকে ক্রিকেট শেখাবেন। তাঁর খেলার ভিডিও দেখার পরে অর্চনাকে কানপুরে আনার কথা বলেন কপিল পাণ্ডে। অর্চনার খেলাধুলোর যাবতীয় খরচ বহন করবেন বলে জানান কপিল পাণ্ডে। ভারতের ক্রিকেটার কুলদীপ যাদবও অর্চনাকে উৎসাহ দিতেন। রোহিত বলছিলেন, ”কুলদীপ যাদব অর্চনাকে বলতেন, তোমাকেও কিন্তু দেশের হয়ে খেলতে হবে।” কুলদীপের কথা শুনে অর্চনা বলতেন, ”হ্যাঁ, ভাইয়া।” রবিবার স্বপ্নপূরণের দিন অর্চনার। বিশ্বজয়ী দলের সদস্যা তিনি। তাঁর মাকে দীর্ঘদিন ধরে যে অসম্মান সইতে হয়েছে, তার জবাব যেন বিদেশের মাটিতে গিয়েই দিলেন অর্চনা দেবী।  

[আরও পড়ুন: মেসির বিশ্বজয়ী দলের সদস্য এনজোর বন্ধু ভারতে, চার্চিলের বিরুদ্ধে নামবেন অভিষেক ম্যাচে]

 

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে