Advertisement
Advertisement

Breaking News

মাহেন্দ্রক্ষণে আবেগের গ্রাসে ‘সন্ন্যাসী রাজা’

প্রথম ম্যাচ খেলার সময় দর্শকদের জয়ধ্বনিতে চোখ ভিজেছিল জলে, বলেন ধোনি।

Emotions grasped MS Dhoni in a crucial moment of Final । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:May 31, 2023 11:54 am
  • Updated:May 31, 2023 12:01 pm

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: মোক্ষলাভের ব্রাহ্মমুহূর্তে নির্মোক ভাব ধারণ, ষড়রিপু নিয়ন্ত্রিত সংসারধর্মীদের কাছে প্রত‌্যাশা করা নিতান্ত বাতুলতা মাত্র। মুনি-ঋষিদের কৌপিন-কমণ্ডুলুর পৃথিবীতে সহজাত সে সব। কিন্তু সাধারণের জীবনে ও সমস্ত চিরকালের দাঁতভাঙা শর্তাবলী প্রযোজ‌্য। সিদ্ধিলাভের লগ্নে জাগতিক মোহ-মায়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা সহজ তো নয়। কালেভদ্রে তবু পারেন কেউ কেউ। আর পারেন যাঁরা, নির্ঘাৎ তাঁদের মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) মতো দেখতে লাগে!

হিচকক-সুলভ (নাকি এ হেন চিত্রনাট‌্য ভাবতে গেলে হিচককেরও হেঁচকি উঠত) ষোড়শ আইপিএল ফাইনালের (IPL Final) শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত খুঁজে বার করতে বসে বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ফাইনাল-উত্তর চব্বিশ ঘণ্টা পরেও। আমেদাবাদের রোমাঞ্চকর সোমবার রাতের সেরা দৃশ‌্যপট কোনটা? খুনে দুই শটে টিমকে ফাইনাল জিতিয়ে রবীন্দ্র জাদেজার সিএসকে-জনতার পুনরায় হৃদয়-হরণ? সদ‌্য অবসর-বাসে নাম লেখানো অম্বাতি রায়ডুর হাতে মহেন্দ্র সিং ধোনির সুদৃশ‌্য আইপিএল ট্রফি তুলে দেওয়া? নাকি তাঁর নিজেরটা, যখন জাদেজার জয়ের শট মারার মাহেন্দ্রক্ষণে দু’চোখ বন্ধ করে চিত্রার্পিতের মতো চেন্নাই ডাগআউটে বসে ছিলেন তিনি, স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনি!

Advertisement

নির্বাক। নিশ্চুপ। নিঃসাড়। নিশ্চল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘গঙ্গাজিকে দিতে গিয়ে কৃষক নেতাকে পদক…’, কুস্তিগিরদের নিয়ে মুখ খুললেন ব্রিজভূষণ]

 

ভেবেচিন্তে মনে হচ্ছে, শেষেরটাই। নিমীলিত চোখে কী ভাবছিলেন ধোনি? কী চলছিল দু’বারের বিশ্বজয়ী ভারত অধিনায়কের মনে? ষোড়শ আইপিএল-স্মৃতিরাশি কি ঠেলাঠেলি করছিল খুব, দুদ্দাড়িয়ে ছুটে আসছিল সব? মোতেরা। চিপক। ইডেন। কোটলা। চিন্নাস্বামী। সদ‌্য সমাপ্ত আইপিএলে ভারতবর্ষের যে শহরে যখন গিয়েছেন ধোনি, তৎক্ষণাৎ সেই শহর তার ঘরের টিমকে ব্রাত‌্য করে সিএসকে-র পীত-জ্বরে ভুগেছে। পীতবর্ণে সেজেছে। তাঁর আবাহনে ‘ধো..ও..নি’, ‘ধো…ও…নি’ মন্ত্রপাঠ করেছে নিরন্তর। চিপকে একটা ম‌্যাচে ধোনি ব‌্যাট করতে নামার সময় আবেগের এমন সমুদ্রগর্জন উঠেছিল যে, তা চার মিনিট চললে উপস্থিতরা বধির হয়ে যেতে পারতেন! তবু সেটা ছেড়ে দিন। কারণ, তার পুরোটাই বিগ্রহ দর্শনে উপাসকদের উথাল-পাথাল আবেগ, যুক্তিতে যার ব‌্যাখ‌্যা চলে না। কিন্তু কড়ায়-গণ্ডায় পাই-পয়সা বুঝে নেওয়া আইপিএলের বিজ্ঞাপনী দুনিয়া? যারা পারলে ছুটকো ওভার শেষে পাঁচটা বিজ্ঞাপন ঠেসে দেয়? যেখানে বিজ্ঞাপনী স্লট বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকায়? তারা পর্যন্ত কি না অপার শ্রদ্ধায় ধোনি ব‌্যাট করতে যাওয়ার সময় বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করে দিয়েছিল!

ফাইনালই মনে করে দেখুন না। রায়ডু আউট হওয়ার পর প‌্যাড-গ্লাভস পরে মাঠের দিকে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন ধোনি, বিজ্ঞাপন দেখানো স্থগিত রাখা হয়েছিল। বরং ডাগআউট থেকে পিচ পর্যন্ত তাঁর পূর্ণ সফর দেখানো হয়েছে! দেখানো হয়েছে, মোবাইল-আলোর ঝর্ণাধারায় মোতেরা দর্শকের তাঁর পা ধুইয়ে দেওয়া। ভারতে আজ পর্যন্ত কম বড় ক্রিকেটার আসেননি। কিন্তু নির্মম পেশাদারিত্ব ভুলে কাউকে এমন ঘন আবেগের গান-স‌্যালুট কখনও দেওয়া হয়নি। এ দেশে একমাত্র শচীন বাদে সমর্থনের যাবতীয় ভেদাভেদের উর্ধ্বে উঠে এমন জাতীয় চেতনার জন্মও দিতে পারেননি কেউ, যা পেরেছেন তিনি, ধোনি, যাঁর সৃষ্ট চেতনার নাম ‘ধোনিবাদ’। সোমবার রাত্তিরের আমেদাবাদে কি এ সমস্তই চলছিল চেন্নাই অধিনায়কের মনে? জানার উপায় নেই, জানার দুঃসাহস দেখানোর প্রয়োজনও নেই। বিশ্বজয়ের পর যাঁর মন শরীরকে নির্দেশ দেয়, ব‌্যাট দু’পাক ঘুরিয়ে অন্তরালে চলে যেতে, সেই মনের খোঁজ আম-আদমি পায় কখনও?

শুধু একটা বিষয় আমেদাবাদ-রাতে বুঝিয়ে গিয়েছে। বুঝিয়েছে যে, মহেন্দ্র ধোনি নামক এক সিংহপুরুষেরও একটা নরম মন আছে, যেখানে প্রায়শই আবেগের জলীয় বাষ্প জন্মায়! অত‌্যাশ্চর্য লাগবে শুনলে। কিন্তু এটা ঘোর বাস্তব যে, সোমবার বারবার খেয়া চেপে আবেগ আর নিরাসক্তির স্টেশন পারাপার করেছেন ধোনি! রবীন্দ্র জাদেজাকে জয়োচ্ছ্বাসে কোলে তুলে নেওয়ার সময় (একবার মনে হল, কাঁদছেন)। অপেক্ষমান আমেদাবাদ দর্শকদের উদ্দেশ‌্যে হাত নাড়ানোর সময়।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হর্ষ ভোগলের সঙ্গে কথা বলার সময়। ধোনি তো বলে গেলেন, আমেদেবাদে প্রথম ম‌্যাচ খেলার সময় তাঁর চোখে ভিজে গিয়েছিল, দর্শকদের জয়ধ্বনিতে। ধোনি তো বলে গেলেন– আবার আসিব ফিরে, আইপিএল তীরে, ভালবাসায়। দর্শকদের প্রতিদান দিতে। ভোগলেকে দেখা গেল, কাতর অনুনয়ে ধোনিকে বলছেন, তাঁর ক্রিকেটের পথ যেন না শেষ হয়। শোনা গেল, আগামী আইপিএলে ধোনি খেলতে পারেন ইমপ‌্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে। খেলুন, যে ভূমিকায় ইচ্ছে খেলুন। খেলবেন যত, চির-অমরত্বের ছায়াপথ ধরে তিনি হাঁটবেন তত। আর ধোনি খেললে তবে না আইপিএল হয়ে উঠবে ‘মাহি’জাগতিক। করার নেই কিছু। ক্রিকেটার আসে। ক্রিকেটার যায়। রাজা আসে। রাজা যায়। কিন্তু এমন রাজা আর আসে ক’জন? যার লোভ নেই। মোহ নেই। ক্রোধ নেই।

যে রাজা হয়েও বেলা শেষে সন্ন‌্যাসী রাজা!

[আরও পড়ুন:কুস্তিগিরদের পাশে আন্তর্জাতিক নিয়ামক সংস্থা, ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ