দুলাল দে, রাশিয়া: মেসি নামক নক্ষত্রের পতন চাক্ষুষ করলেও রোনাল্ডোর সংকটতম সময়ে নেইমাররা বিমানে সামারার উদ্দেশ্যে। শনিবার গভীর রাতে যখন টিম হোটেলে ঢুকছেন সেলেকাওরা, তখনও ওঁদের দেখতে মারাত্মক ভিড়। আর সমানে চলছে এক স্লোগান “মেসি চাউ, মেসি চাউ।” সঙ্গে ব্রাজিলিয়ান ফ্যানদের উল্লাস। আর কে না জানে, প্রথমে জার্মানি, পরে আর্জেন্টিনা, সঙ্গে লাইন দিয়ে পর্তুগাল ও স্পেনের বিদায়ের পর ব্রাজিল শিবিরেও কাঁপুনি ঢুকে গিয়েছে। পরের নামটা ব্রাজিল নয় তো…!
দল নিয়ে তিতে সামারায় বেশি রাতে পৌঁছলেও, এদিন মূল স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিসে এলেন স্থানীয় সময় বিকেল ৪টেয়। ব্রাজিল মিডিয়ার মতো সারা পৃথিবীর তখন একটাই খোঁজ, সোমবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন মার্সেলো? চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরে এসেছেন দানিয়েল। টিম ডাক্তার লারসেন বলছেন, পিঠের চোট কাটিয়ে এখন ফিট। দলে সুযোগ পাওয়া না পাওয়াটা টিটের হাতে।
ফুটবলবিশ্ব, বলা ভাল অভাগা ভারতের বিশ্বকাপে ভরসা শুধু ব্রাজিল। কিন্তু বরাবরের মতো ব্রাজিল প্র্যাকটিস দেখে বোঝার উপায় নেই একই দিনে আর্জেন্টিনা, পর্তুগালের মতো বিশ্বফুটবলের দুই শক্তিধর দেশ বিদায় নিয়েছে। সেলেকাওদের সামনে এবার মেক্সিকান ওয়েভ। তারা কি পারবে সেই বিশাল ঢেউ থামিয়ে দিতে? সবার নজর এখন সেদিকেই। প্র্যাকটিসে নেমে হাসি ঠাট্টা মজা সব চলল। দেখে কে বলবে, কী অপরিসীম চাপ নিয়ে সোমবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলতে নামছেন নেইমাররা? তবে টিটে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, হালকা হলেও যখন ব্যথা পেয়েছিলেন, তখন মেক্সিকোর বিরুদ্ধে বিশ্রাম দেওয়া হবে মার্সেলোকে। যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সেরকম কিছুই বললেন না। প্র্যাকটিস শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে একটা প্রশ্নই শুনতে হল ব্রাজিল কোচকে। এমনিতে মার্সেলো প্রসঙ্গ সাংবাদিক সম্মেলনে এড়িয়ে গেলে কী হবে, দলের সঙ্গে থাকা মিডিয়া ম্যানেজার ফার্নান্দো বললেন, “নিশ্চিত থাকুন, টিটে কাল মেক্সিকোর বিরুদ্ধে মার্সেলোকে কিছুতেই খেলাবেন না।” কেন? -“কোনও ফুটবলারের সামান্য চোট থাকলেও ঝুঁকি নিতে চান না কোচ।
যে কারণে নেইমারকে বিশ্বকাপে খেলানোর আগে ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলিতে ভাল করে দেখে নিয়েছিলেন।” তবে শুধু চোট থেকে সেরে ওঠাই নয়। আগের ম্যাচে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে মার্সেলোর জায়গায় নেমে দারুণ পারফরম্যান্স করেছিলেন ফিলিপে লুইস। তাই পুরো সুস্থ না হওয়া মার্সেলোকে খেলিয়ে লুই ফিলিপকে বসিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। একই কথা প্রযোজ্য রাইট ব্যাক ফাগনারের জন্যও। দানিলো সুস্থ হয়ে গেলেও তাই দলে ঢুকতে পারছেন না।
নিজের দলের ফুটবলারদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে দারুণ মুডে টিটে। বললেন, “মার্সেলোর খেলা নিয়ে এত প্রশ্ন কেন? দলের ২৩ জনই যে কোনও সময় খেলার যোগ্যতা রাখে।” একই দিনে আর্জেন্টিনা এবং পর্তুগালের বিদায়ে তিনি শঙ্কিত কি না জিজ্ঞাসা করা হলে ব্রাজিল কোচ হেসে উড়িয়ে দেন। “আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল দুটো দলই শক্তিশালী। আর মেসি-রোনাল্ডো এরা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। কিন্তু আমি শুধুই মেক্সিকো ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। আমাদের সবাই সুস্থ। অন্য আর কিছু নিয়ে ভাবছি না।”
দলের অধিনায়ক নির্বাচনের জন্য অদ্ভুত পন্থা নিয়েছেন তিতে। এককভাবে কারও হাতেই তুলে দিচ্ছেন না অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। সেই প্র্যাকটিস ম্যাচ থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুরু করেছেন। বিশ্বকাপে এসেই প্রথমদিন মার্সেলো। পরের দিন কোস্টারিকা ম্যাচে থিয়াগো সিলভা। শেষ সার্বিয়া ম্যাচে থিয়াগো সিলভার সঙ্গী স্টপার মিরান্দা। কিন্তু প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ফের থিয়োগো সিলভার হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিতে। স্বাভাবিক ভাবেই এদিন বলাবলি হচ্ছিল, তাহলে নেইমার কবে পাবেন অধিনায়কের আর্মব্যান্ড? ব্রাজিলের সাংবাদিকরা মজা করে বলছিলেন, “নেমারের নাম নিশ্চয়ই ফাইনালের জন্য ভেবে রেখেছেন।” কিন্তু তার আগে মেক্সিকোকে হারাতে হবে। জার্মানি, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল….। যেভাবে চলছে…!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.