সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিন বছর আগের বেলো হরাইজন্তের কথা হয়তো এখনও ভুলতে পারেনি ব্রাজিলবাসী। এমনকী গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্রাজিল সমর্থকদের মনেও যে রয়ে গিয়েছে সেই অভিশপ্ত রাতের কথা। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের তাদের ঘরের মাঠেই সাত গোলের মালা পরিয়েছিল জার্মানরা। তাও কিনা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতার অহংকারে সেদিনের ম্যাচের পরই যেন দাগ লেগে গিয়েছিল। তবে সেই দাগ মোছার সুবর্ণ সুযোগ এবার অনূর্ধ্ব-১৭ ব্রাজিল দলের কাছে। কারণ যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সেই জার্মানির বিরুদ্ধেই তো খেলতে নামছে পেলের দেশ। ফের একবার বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হতে চলেছে দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ। ২০১৪-র ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর আবারও বিশ্বকাপে জার্মান প্রতিপক্ষ।
[আমেরিকাকে উড়িয়ে যুব বিশ্বকাপের শেষ চারে ইংল্যান্ড]
এর মাঝে অলিম্পিকে জার্মানিকে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন নেইমাররা। কিন্তু অলিম্পিক আর বিশ্বকাপ যে এক নয়। তাই মুখে না বললেও পাওলিনহো, ব্রেনারদের মনে বদলার কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছেই। আর তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠছে জার্মানিকে হারানোর সংকল্প। শনিবারই আবার ফ্রান্স থেকে নেইমার আর দানি আলভেস ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে উদ্বুদ্ধ করলেন পাওলিনহোদের। বললেন, “আমাদের ম্যাচটা ভুলে গিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করো।” ম্যাচের আগে প্রশ্ন উঠছে জার্মানির বিরুদ্ধে তাহলে কী ফর্মেশনে খেলবে ব্রাজিল? জানা গিয়েছে, আমেদিউ জার্মানির বিরুদ্ধে দল সাজাচ্ছেন মূলত ৪-৪-৩ ছকে। কেন ৪-৩-৩ ছকে জার্মানির বিরুদ্ধে খেলতে চাইছেন, সাংবাদিক সম্মেলনে না বললেও মাঠে ফুটবলারদের বুঝিয়ে বলেন তিনি। কেন না, আগেরদিনই টিম হোটেলে জার্মানির ম্যাচের ভিডিও দেখিয়ে দুর্বল আর শক্তিশালী জায়গাগুলি দেখিয়ে দেন আমেদিউ।
[টেস্ট ক্রিকেট থেকে কবে বিদায় নেবেন, জানিয়ে দিলেন অশ্বিন]
অন্যদিকে, কলকাতাবাসী যতই হলুদ জার্সিধারীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখুক। জার্মানরা শেষ চারে যাওয়ার লক্ষ্যে অবিচল। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনেও সেটা স্পষ্ট। আর ম্যাচের দিন সকালেও ৪৫ মিনিট অনুশীলন করে জার্মানি বুঝিয়ে দিল, যতই ম্যাচের আগে বিশেষজ্ঞদের নজরে ব্রাজিলের পাল্লা ভারী হোক, সহজে হার শিকার করবে না তারা, কারণ শরীরে যে বইছে জার্মান রক্ত। জার্মান শিবির ঠিক করে ফেলেছে, মাঝমাঠকে ভরাট করেই তারা ব্রাজিল বধে নামবে। অর্থাৎ মাঝমাঠে দাঁড় করানো হবে পাঁচজনকে। সামনে রাখা হবে কেবলমাত্র আর্পকে। যে চার গোল দিয়ে ইতিমধ্যে নজর কেড়ে নিয়েছে জার্মানি শিবিরে। ব্রাজিল যেমন আক্রমণাত্মক থাকতে চায়। জার্মানরাও তাই। আর আক্রমণের ধারাকে বজায় রাখার জন্য জার্মানির প্রধান হাতিয়ার হলেন জন ইয়েবোয়া। এই ইয়েবোয়া প্রি–কোয়ার্টারে কলম্বিয়াকে একাই শেষ করে দিয়েছিলেন। তিনি মূলত গোলের রাস্তা তৈরি করে দেন। আর তাকে কাজে লাগান আর্প। রবিবার জার্মানি কার্ড সমস্যার দরুন খেলাতে পারবে না ডেনিস ইয়াস্টস্ট্রেম্সকি–কে। মাঝমাঠে ডেনিসের বদলে নামবে সম্ভবত মরিস ম্যালোন। এছাড়া দলে তেমন পরিবর্তন নাও হতে পারে। আসলে আর্পের সঙ্গে ইয়েবোয়ার যদি বোঝাপড়া ক্লিক করে যায় তাহলে কপালে দুঃখ আছে ব্রাজিলের।
এখন দেখার তিন বছর আগে বেলো হরাইজন্তের অভিশাপ যুবভারতী ঘুচিয়ে দিতে পারে কিনা। নাকি সিনিয়র দাদাদের মতোই যুব বিশ্বকাপে পাওলিনহোদের ব্রাজিলকে নাকানিচোবানি খাওয়ায় জার্মান ফুটবলাররা। তবে যেই জিতুক হাবেভাবে কলকাতা বুঝিয়ে দিয়েছে ম্যাচে সমর্থনের পাল্লা ভারী থাকবে ব্রাজিলের দিকেই। ইতিমধ্যে গোটা শহরজুড়ে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে। আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা তারপরই যুবভারতীতে শুরু হয়ে যাবে ‘ব্রাজিল’, ‘ব্রাজিল’ শব্দব্রহ্ম।