সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাশিয়া বিশ্বকাপ আর মিশর। দু’টোর কথা একসঙ্গে উঠলেই তৃতীয় একটা কথা ওঠা অনিবার্য। মহম্মদ সালাহ!লিভারপুলের ‘মিশর রহস্য’ এই মুহূর্তে স্পেনে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশ্বকাপের আগে তাঁর কাঁধের চোট থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে। অত্যাধুনিক চিকিৎসা আর রিহ্যাবের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড।
কিন্তু মিশর মানেই কেবল সালাহ নয়। সালাহ শেষমেশ যদি রাশিয়া যেতে না-ও পারেন, ২০১৮ বিশ্বকাপে মিশর একটা রেকর্ড গড়ে ফেলতে চলেছে। ফিফা বিশ্বকাপে তাদের আবির্ভাবেই। বিশ্বরেকর্ডটা হল, বিশ্বকাপের অষ্টাশি বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে রাশিয়ায় খেলতে চলেছেন মিশরের গোলকিপার এসাম এল-হাদারি। ৪৫ বছর বয়সে বিশ্বকাপে নামছেন এল হাদারি। তিনি ভাঙতে চলেছেন কলম্বিয়ার ফারিদ মন্দ্রাগনের রেকর্ড। এই কলম্বিয়ান গোলকিপার ২০১৪ বিশ্বকাপে ৪৩ বছর বয়সে খেলেছিলেন। হাদারি বিশ্বকাপে একটা রেকর্ড করতে চলেছেন। আর একটা রেকর্ড অল্পের জন্য করতে পারছেন না রাশিয়ায়। সেই অভিনব রেকর্ডটা হত একইসঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবলে শ্বশুর-জামাইয়ের খেলা। একই দেশের জার্সিতে!
[বিশ্বকাপের মুখে দারিদ্র ঢাকতে জীর্ণ দেওয়ালে কার্টুন আঁকছে রাশিয়া]
সেটা কী? মিশর গোলকিপার-কাম-অধিনায়ক এল-হাদারির দলের উইঙ্গার মহম্মদ আবদেল মোনিয়াম, যিনি মিশরের ফুটবলমহলে খারাবা (বিদ্যুৎ) নামে পরিচিত, তিনি হাদারির মেয়ের প্রাক্তন স্বামী। শাদাওয়া এল-হাদারির সঙ্গে খারাবা-র বিয়ে মাত্র ৪৮ দিন টিকেছিল। তারপর জানাজানি হয়ে যায়, খারাবা এক আরবি অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত। এবং জানামাত্র তাঁর স্ত্রী ডিভোর্স দেন তাঁকে। নইলে আসন্ন বিশ্বকাপে শ্বশুর-জামাইকে (হাদারি-খারাবা) একসঙ্গে খেলতে দেখা যেত মিশরের জার্সিতে!
সেটা না ঘটলেও বা কী? ৪৫ বছর বয়সী মিশর গোলকিপারের কাহিনিও কম অভিনব নয়! ১৯৭৩ সালে মিশরের এক ছোট্ট শহরতলি কাফরাল-বাতিখ, যেটা ‘তরমুজের শহর’ নামেই সে দেশে বেশি পরিচিত, সেখানে এক গোঁড়া মুসলিম পরিবারে জন্ম হাদারির। বাবার ছিল আসবাবপত্রের দোকান। ছেলেকে ছোটবেলা থেকে তিনি একটাই মন্ত্র কানে দিয়ে আসতেন- হয় ভাল করে পড়াশোনা করে বড় চাকরি করো, নয়তো ভাল করে ফার্নিচার বানানো শেখো। কিন্তু হাদারি ছিলেন ফুটবলপাগল। একটাই স্বপ্ন দেখে এসেছেন- ‘ফুটবলার হব। বিশ্বকাপ খেলব। দেশকে সেখানে নেতৃত্ব দেব। আর যে স্বপ্ন দেখব সেটাকে সত্যি করেই ছাড়ব!’
[বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের শিবিরে ফুটবলারদের হাতাহাতি, সামাল দিলেন ক্লোজে]
তিনটে স্বপ্নকেই সত্যিই সত্যি করে তুলতে ‘মাত্র’ ২২ বছর লাগল হাদারির। বাবা-মা’র থেকে নিজের ফুটবল খেলাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন, জীবনের প্রথম ক্লাবে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত। তারপর আর পারেননি। দরকার পড়েনি, কারণ তত দিনে ফুটবল খেলেও যে রোজগার করা যায় সেটা হাদারি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মাকে। আর বিশ্বকাপে ১৫ জুন যখন উরুগুয়ের বিরুদ্ধে আর্ম ব্যান্ড লাগিয়ে হাদারি মিশর দলকে নিয়ে মাঠে নামবেন, সেই মুহূর্তে তিনি গড়বেন বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপের বয়স্কতম ফুটবলার হওয়ার রেকর্ড!