Advertisement
Advertisement

শহরের ভিতরেই ছোট্ট রিও, বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে উত্তরের গরানহাটা

উত্তর কলকাতার এই রাস্তায় আকাশ এখন মহাবিশ্বের নয়, বিশ্বকাপের।

FIFA World Cup 2018: Kolkata street decorated in World Cup theme
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 27, 2018 3:07 pm
  • Updated:June 27, 2018 6:13 pm

সম্বিত বসু ও শৌনক চক্রবর্তী: আকাশ মহাবিশ্বের অংশ। কিন্তু উত্তর কলকাতার এই রাস্তায় আকাশ এখন মহাবিশ্বের নয়, বিশ্বকাপের। আকাশে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির পতাকা। হাওয়ায় উড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে, রোদে শুকোচ্ছে। ফুটবল পাগল বাঙালির ধুকপুকানি রয়েছে এই পতাকার মধ্যেই।

Advertisement

[নেতা মেসি বোঝালেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়…]

গরানহাটা স্ট্রিটে ঢুকে পড়লে দেখা যাবে কারিগরি শিল্পের বাহার। অন্তত ১৫ জুলাই পর্যন্ত কলকাতার গরানহাটা রাশিয়া থেকে খুব বেশি দূর বলে মনে হচ্ছে না, সে গুগ্‌ল ম্যাপ যত হাজার কিলোমিটারই দেখাক। হাঁটতে হাঁটতে যে গলি পড়ল, তা উঠল ফকির চক্রবর্তী লেনে গিয়ে। আশপাশ ছিমছাম। রংচটা পুরনো বাড়ির রকে দুপুরে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন লোকজন। ডানহাতে পাড়াতুতো মেসি-নেইমারদের জন্য এনার্জি ড্রিঙ্ক (চা) তৈরি হচ্ছে গুমটিতে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে আছে গলির সরু আকাশ। মাঝে মাঝে পর্তুগাল, হঠাৎ জার্মানি! বাড়ির গায়ে হলুদ-সবুজ, নীল-সাদা রং। কিন্তু এ তো খুব অচেনা কোনও দৃশ্য নয়। কলকাতায়, বিশেষ করে উত্তর কলকাতায় খুব স্বাভাবিক।

Advertisement

[‘জানি আমাদের কী করতে হবে’, যুদ্ধের আগে আত্মবিশ্বাসী জোয়াকিম]

ক্লাবের নাম ‘দিশারী’। যার গায়ে হলুদ, সবুজ ছোপ ছোপ রং। এহেন অভূতপূর্ব কাণ্ড এই ক্লাবের সদস্যদেরই ঘটানো। গলির রাস্তা রঙ করা তাঁদেরই কাজ। এমন নয় যে এ বছরই গলিটা প্রথমবারের জন্য সেজে উঠেছে। সাজানো চলছে সেই ’৯০ সাল থেকেই। যে সময় কিছু কিছু বাড়িতে ছিল ল্যান্ডলাইন, সাদা-কালো টিভি। কেবল্‌ তখনও আসেনি। রেডিও খুললে সকাল-বিকেল ঝিরঝিরে শব্দে কাটত বাঙালির সময়। প্রায় ২৮ বছর পর ‘স্মার্ট’ বনে যাওয়া এই পৃথিবীতেও এই গলি, গলির লোকেরা পাল্টায়নি, বরং ফুটবল খেলার প্রতি আবেগ বেড়েছে। প্রায় হাজার ২০ টাকা খরচ করে দূরদেশের কোনও বিশ্বকাপের জন্য! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। যেখানে নিজের দেশই খেলছে না।

[নেইমার মাঠে পড়ে গেলেই বিনামূল্যে পানীয়, আজব অফার ব্রাজিলের পাব-এ]

খেলা হারিয়ে যাচ্ছে যে কলকাতা-সহ মফস্বলে, সেখানে ফকির চক্রবর্তী লেনে খেলাবিহীন একদিনও কাটে না,  জানালেন ক্লাবের সদস্য সৌমেন বোড়া। অসুবিধা রয়েছে, গাড়ি বেড়েছে, মাঠ নেই, পার্কিং লটের বহর, কিন্তু ছোট জায়গা পেলেই শুরু হয়ে যায় খেলা। খেলা থামাতে নারাজ ফকির চক্রবর্তী লেন। বাচ্চারা রোজই নামে ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে। পাড়াও দরকারে রাস্তা থেকে গাড়ি হটিয়ে তাঁদের খেলার পাশেই।

[রোনাল্ডোর জন্য কেন আলাদা নিয়ম, প্রশ্ন ইরান কোচের]

সৌমেন জানালেন, পাড়ায় ব্রাজিলের সাপোর্টার বেশি বলেই, রাস্তায় এই ব্রাজিলীয় আধিপত্য। তবে, আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররাও ছেড়ে দেননি একেবারে! তাঁরা ক্লাবের দরজায় আর্জেন্টিনার চিহ্ন রেখেছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য এখন বেড়েছে পর্তুগালের সাপোর্টারও। কেবলমাত্র বিশ্বকাপ বলেই এই তাৎক্ষণিক আবেগ উদ্‌গীরণ নয়। উত্তর কলকাতার দিশারী ক্লাব প্রতি বছর ১৫ আগস্ট স্ট্রিট ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এমনকী, ২০২২ সালে তাঁদের প্ল্যান পাড়া থেকে অন্তত দু’-তিনজন  কাতারে যাবে। বিরাট খরচপাতি হলেও, এখন থেকেই অল্প অল্প করে টাকাপয়সার ব্যবস্থা করতে পারলে ফকির চক্রবর্তী লেনের কাতার দর্শন হয়ে যাবেই।

[সার্বিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের খুনে পারফরম্যান্স বের করে আনতে পারবেন নেইমাররা?]

ব্রাজিল ফাইনালে উঠলে বসবে প্রজেক্টর। একটা ২৪ ফুট লম্বা ব্রাজিল পতাকা দিয়ে গলিটা মুড়ে দেওয়ার ইচ্ছে সদস্যদের। সেটা পাড়ায় আসছে আজ সকালে। আর ফাইনাল আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল মুখোমুখি হলে পাড়ার ঘুমই হয়তো উড়ে যাবে! বাংলা বইয়ের প্রথম ছবি ছাপার ইতিহাস এই অঞ্চলেরই। ক্লাবেরই এক সদস্য নিজের দোকানের ভিতর সোনার কাজ করছিলেন। তাঁর ইতিহাস হয়তো কাঠ খোদাইয়ের, লক্ষ্য নিশ্চিত বিশ্বকাপ!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ