শতদ্রু দত্ত: ইচ্ছে তো কত কী হয়। কিন্তু সব ইচ্ছে কি আর সব সময় পূরণ হয়? তবে এত কম সময়ের মধ্যে এরকম ভাবে আমার একটা স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে, ভাবতেই পারিনি। এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কথা বলছি। কাতার বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার পর যখন স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফিরছিলাম, মনে মনে ভাবছিলাম, একে যদি একবার কলকাতায় নিয়ে যাওয়া যেত। সেই সময় আমার আদর্শ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও সঙ্গে ছিল। তখন তো আর মাঠের বাইরে দেখিন। শুধুই কাতার বিশ্বকাপে গ্যালারি থেকে দেখে যেটুকু ধারণা করা যায় আর কী।
মাঠের ভিতর জেতার জন্য কী অদম্য বাসনা। সম্ভব হলে প্রতিপক্ষকে ছিঁড়ে খায়। সেদিন গ্যালারি থেকে দেখে মনে হয়েছিল, ব্যবহারেও মারাত্মক আক্রমণাত্মক। কিন্তু অ্যাস্টনভিলায় গিয়ে মার্টিনেজের সঙ্গে যখন আলাপ হল, দেখলাম, একদম অন্য গ্রহের মানুষ। এই মানুষটাই মাঠের মধ্যে ওরকম আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ভাবাই যায় না। অনেকটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো। মাঠের বাইরের অত্যন্ত বিনয়ী, ধীর-স্থির দাদা যেরকম মাঠের মধ্যে প্রতিপক্ষর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ত, মার্টিনেজও তো সেরকম।
কাতার বিশ্বকাপের পর কলকাতায় এসেই যোগাযোগ শুরু করলাম, মার্টিনেজের ম্যানেজারের সঙ্গে। জানতে পারলাম, উনি বার্সোলোনায় থাকবেন। যোগাযোগ করে সঙ্গে সঙ্গে বার্সেলোনায় গিয়ে আলোচনায় বসে গেলাম। বোঝালাম, মার্টিনেজকে নিয়ে কলকাতায় আর্জেন্টিনার ফ্যানদের মধ্যে কী মারাত্মক উত্তেজনা। মারাদোনা-মেসি সবাই যে কলকাতা ঘুরে গিয়েছে, বললাম। তারকা গোলকিপারের ম্যানেজারের মুখ থেকে যা জানলাম, তাতে মার্টিনেজের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। বললেন, শুধুমাত্র টাকার জন্য ও কিছু করতে চায় না। ওকে আনতে হলে, বেশ কিছু ফাউন্ডেশনে সাহায্য করতে হবে। কারণ, সামাজির কাজের জন্য অনেক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মার্টিনেজ যুক্ত। সব কিছু ঠিক ঠাক হওয়ার পর লন্ডন গেলাম, আর্জেন্টাইন তারকার সঙ্গে দেখা করতে। একদিন অ্যাস্টনভিলার ভিআইপি বক্সে বসে ওর পরিবারের সঙ্গে ম্যাচ দেখলাম। ম্যাচের পর মাঠেই ওর সঙ্গে নেমে পড়লাম। ওর ছেলের সঙ্গে আমার ছেলে দিয়েগোও তখন খেলছে। দিয়েগোকে গোলে রেখে প্র্যাকটিসও করালো মার্টিনেজ। একেবারে মাটির মানুষ। বাংলাদেশে জানত। কিন্তু কলকাতাতেও ওর যে এত ফ্যান সত্যিই ধারণা করতে পারেনি। সব শুনে এখানে আসার জন্য উত্তেজিত।
বারবার করে ওর বাঁ পায়ের দিকে আমার নজর চলে যাচ্ছিল। ফাইনালের একেবারে শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সের মুয়ানির শটটি যদি বাঁ পা দিয়ে না আটকাতো, মেসির বিশ্বকাপ পাওয়া তো ওখানেই শেষ। তারপর আবার টাইব্রেকারে। কিন্তু অ্যাস্টনভিলার মাঠে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে যখন গল্প করছিল, কী ভীষণ শান্ত। দেখে বোঝাই যাবে না এই ভদ্রলোকই মাঠের ভিতর ওরকম আক্রমণাত্মক আচরণ করে।
আপাতত যা ঠিক হয়েছে, তাতে ৩ জুলাই রাতেই কলকাতায় পৌঁছে যাবে। পরের দিন সকালে হোটেলে কিছু অনুষ্ঠান। বিকেলে মোহনবাগান মাঠে যাবে মার্টিনেজ। সেখানে কলকাতা পুলিশের ফ্রেন্ডশিপ কাপের ম্যাচ বল মেরে উদ্বোধন করবেন। তবে ইপিএলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকার জন্য এই মুহূর্তে অন্য কোনও জায়গায় খেলতে পারবেন না তিনি। তবে জামা-প্যান্ট পরেই কিছু বল হয়তো গ্যালারিতে মারবেন। কিছু শটও হয়তো বারের তলায় দাঁড়িয়ে আটকাবেন। ঠিক হয়েছে, মোহনবাগানে যাওয়ার পরের দিন শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে গিয়ে মারাদোনার মূর্তিতে মালা দেবেন মার্টিনেজ। সেখানে স্পনসরারদের একটা টাইব্রেকার প্রতিযোগিতাও থাকবে। সেখানে থাকবেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা। নিয়ে যাব উত্তরপাড়াতেও। কিছুদিন আগে আমার বন্ধু বিকাশ সিং ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। ওর পরিবারকে সাহায্যের জন্যই নিয়ে যাব উত্তরপাড়ায়।
কলকাতায় মার্টিনেজ আসছে শুনে বাংলাদেশেও এই মুহূর্তে প্রবল উত্তেজনা। সেখানে থেকেও অনেকে যোগাযোগ শুরু করেছেন মার্টিনেজের জন্য। সব কিছু ঠিক ঠিক হলে, ৬ এপ্রিল কলকাতা থেকেই বাংলাদেশ যেতে পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.