ব্রাজিল: ৪ (ভিনিসিয়াস, নেইমার, রিচার্লিসন, প্যাকুয়েতা)
দক্ষিণ কোরিয়া: ১ (পাক সেউং হো)
দুলাল দে, দোহা: স্রেফ ৩৬ মিনিট। তাতেই দুমড়ে-মুচড়ে ছারখার প্রতিপক্ষ। কাতারের (Qatar World Cup) মাটিতে চোখ জুড়িয়ে দেওয়া সাম্বার ছন্দ। মনের মণিকোঠায় বাঁধিয়ে রাখার মতো সব গোল। আর সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশে সদর্প ঘোষণা, ব্রাজিল এসে গিয়েছে হেক্সার স্বপ্নপুরণ করতে। কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ৩৬ মিনিটেই প্রফেসর তিতের ব্রাজিল বুঝিয়ে দিল, কেন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল তারা। কেন কাপজয়ের দৌড়ে তাদের পিছনেই সবচেয়ে বেশি বাজি ধরছেন বিশেষজ্ঞরা।
Brazil progress to the Quarter-finals! 🇧🇷@adidasfootball | #FIFAWorldCup
— FIFA World Cup (@FIFAWorldCup) December 5, 2022
বিশ্বকাপের (FIFA World Cup) প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। খাতায় কলমে কোরিয়ার (South Korea) তেমন ফুটবল কৌলীন্য না থাকলেও, নিজেদের শেষ ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালকে হারিয়ে মাঠে নেমেছিলেন হিউং মিন সনরা। আর ব্রাজিল (Brazil) নেমেছিল নিজেদের শেষ ম্যাচে অখ্যাত ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে হেরে। তাই এই ম্যাচে নামার আগে অজানা আশঙ্কা ছিল একেবারে ছিল না, সেটা বুক ঠুকে বলতে পারবেন না কোনও ব্রাজিল সমর্থকই। কিন্তু নেইমাররা (Neymar) মাঠে নেমে সেই সব আশঙ্কা যেন ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিলেন। কোরিয়াকে নিয়ে যেন ছেলেখেলা করল সাম্বা বয়েজ।
What do you call a herd of goats? 🐐🇧🇷 pic.twitter.com/0DFBPqQNJw
— FIFA World Cup (@FIFAWorldCup) December 5, 2022
শুরুটা হয়েছিল ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটের মধ্যেই। প্রথম গোল করার সুবর্ণ সুযোগটি আসে রিচার্লিসনের কাছে। সেবারে গোল না এলেও গোলমুখ খুলে যায় মিনিট চারেক বাদেই। অনবদ্য ছন্দময় আক্রমণে কোরিয়ার রক্ষণকে ধরাশায়ী করে দিয়ে প্রথম গোল পান ভিনিসিয়াস। তারপর আধ ঘণ্টার সংহারলীলা। ক্ষিপ্রতা, গতি, পাস, পজিশনিং, কী দেখালেন না নেইমার, ভিনিসিয়াস, রাফিনিয়া, রিচার্লিসনরা। যে শৈল্পিক ফুটবলের জন্য ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বে পরিচিত, সেই শিল্পের সেরা কারুকার্য এদিন এই আধ ঘণ্টায় দেখিয়ে গেল এই তরুণ ব্রাজিলীয় দল। ভিনিসিয়াসের পর পেনাল্টি স্পট থেকে গোল পেলেন নেইমার। ম্যাচের বয়স তখন মিনিট ১৩। তবে এদিনের সেরা গোলটি আসে ম্যাচের ২৯ মিনিটে রিচার্লিসনের (Richarlison) পা থেকে। অনবদ্য পাসিং ফুটবলে কোরিয়ার ডিফেন্ডারদের কার্যত দাঁড় করিয়ে রেখে জালে বল জড়িয়ে দেন ব্রাজিলের ৯ নম্বর। ৩৬ মিনিটে ৪ নম্বর গোলটি করেন লুকাস প্যাকুয়েতা।
[আরও পড়ুন: ‘ও আজ বড় প্লেয়ার, তবে পরিবারের খবরই রাখে না’, একরাশ অভিমান ফ্রেডের মামার]
চার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর খুব প্রত্যাশিতভাবেই গতি খানিকটা কমিয়ে দেয় ব্রাজিল। আসলে তিতে (Tite) চাইছিলেন বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলির জন্য ফুটবলারদের চাঙ্গা রাখতে। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সেটা ভালমতোই বোঝা যাচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে সেভাবে সাম্বার ছন্দ চোখে পড়েনি। উলটে খেলার গতির বিপরীতে গিয়ে বিশ্বমানের গোল করে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান স্মরণীয় করে রাখলেন কোরিয়ার পাক সেউং হো। ব্রাজিলের জয়ের আনন্দ যে তাতে ফিকে হয়নি, সেটা অবশ্য ফুটবলারদের সঙ্গে কোচ তিতের নাচ দেখে আগেই বোঝা গিয়েছিল। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে রক্ষণকে আরও খানিকটা গুছিয়ে নিতে চাইবেন ব্রাজিল কোচ। কারণ আক্রমণের ঝড়ের মাঝেও এদিন গোলরক্ষক অ্যালিসনকে অন্তত গোটা তিনেক বিশ্বমানের সেভ করতে হয়েছে।
[আরও পড়ুন: FIFA WC 2022: দর্শক ভরতি গ্যালারিতে চুইংগাম ছুঁড়ছে মেসির ছেলে! ভাইরাল ভিডিও ঘিরে হইচই]
তবে সব মিলিয়ে ব্রাজিল এদিন দক্ষিণ কোরিয়াকে স্রেফ গুঁড়িয়ে দিল তাই নয়, সেই সঙ্গে দূর করে দিল যাবতীয় সংশয়, যাবতীয় দুশ্চিন্তা, যা কিনা জমাট বেঁধেছিল ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত হারের পর। জবাব দিয়ে দিল সেই সব সমালোচকদেরও, যারা গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে নেইমারহীন ব্রাজিলকে দেখে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছিলেন, তিতের দলে গোল করবে কে? কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমারদের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে ক্রোয়েশিয়া। জাপানের বিরুদ্ধে কষ্টার্জিত জয়ে শেষ আটে ওঠা মদ্রিচরা হয়তো এখন থেকেই ভাবতে শুরু করে দেবেন, কীভাবে সাম্বার এই ছন্দ রুখে দেওয়া যায়।