Advertisement
Advertisement

ডার্বির আগে মুখোমুখি সোনি-কাটসুমি, কী কথা হল দুই তারকার?

একান্ত সাক্ষাৎকারে দুই শিবিরের 'প্রাণভোমরা'।

ILeague: Sony, Katsumi met each other before high voltage Durbey
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 3, 2017 3:44 am
  • Updated:September 21, 2019 1:49 pm

দুলাল দে: তিন বছর জুটি বেঁধে খেলার পর হঠাৎই বিচ্ছেদ। কিন্তু বন্ধুত্ব এখনও অটুট। জাপান থেকে এক সাংবাদিক এসেছেন তাঁর উপর ডকুমেন্টরি তৈরি করতে। ডার্বির আগের দিন রাতে কাটসুমি ইউসা বন্ধু সাংবাদিককে নিয়ে গেলেন সোনি নর্ডির বাড়ি। আলাপ করালেন আই লিগের সেরা বিদেশি বলে। ইস্টবেঙ্গল তারকাকে পেয়েও তখন আফসোস  মোহনবাগান নক্ষত্রের গলাতে। আড্ডায় হাজির একমাত্র সংবাদ প্রতিদিন-এর এই প্রতিবেদক।

[প্রশংসা ও সৌহার্দ্যের আস্তিনেই ডার্বির স্ট্র্যাটেজি লুকিয়ে রাখলেন দুই কোচ]

Advertisement

সোনি :  তোমার দৌড় আটকানোর জন্য আমরা ছক কষছি। আর তুমি একেবারে আমার ড্রয়িংরুমে!

Advertisement

কাটসুমি : সে তো তোমাকেও এখন ট্যাকল করে দিলে হয়। তাহলে আর রোববার যুবভারতীতে আমাদের জ্বালাবে না (অট্টহাসি)।

সোনি : দেখো, কোনও রাখঢাক নেই। আমি কিন্তু প্রকাশ্যে সবার সামনে বলেছি, তোমাকে আমাদের দলে ভীষণ মিস করছি। বিশেষ করে এই ডার্বিটার আগে। তিন বছর একসঙ্গে খেলার জন্য তুমি জানতে বলটা ঠিক কোথায় চাইছি আমি।

কাটসুমি : আই লিগে তোমাদের প্রথম ম্যাচে মিনার্ভার বিরুদ্ধে খেলা দেখে কখনও কখনও মনে হচ্ছিল, মাঠের মধে্য হতাশ হয়ে পড়ছিলে তুমি।

সোনি : কেন মনে হল?

কাটসুমি : সেদিন যে গোলটা তুমি করেছ, সম্পূর্ণ একার চেষ্টায় তিনজনকে কাটিয়ে বিশ্বমানের গোল। এর সঙ্গে দলগত বোঝাপড়ার কোনও ব্যাপার ছিল না। কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রে তুমি যখন বক্সে ঢুকে মাইনাস রাখছিলে, দেখলাম, ডিকা বল ফলো না করে দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে সেটা চাইছে। এমনকী ক্রোমাও দাঁড়িয়ে। অথচ গত বছর তোমার এই মাইনাসগুলোতেই ডাফি গোল করতে ঝাঁপিয়ে পড়ত।

[ফের হবে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, ডার্বিতে বাগান সমর্থকদের ভরসার নাম সোনি]

সোনি : দাঁড়াও, দাঁড়াও। সেদিন ম্যাচের পর মিডিয়াকে আমি কী বলেছিলাম, পড়ে শোনাচ্ছি। (মোবাইলে গুগল সার্চে গিয়ে নিজের সেই কোটস বার করলেন।) বলেছিলাম, আমাদের দল ভাল হতে পারে। কিন্তু এখনও বোঝাপড়াটাই তৈরি হয়নি। দলের বোঝাপড়া তৈরি করতে আরও বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলতে হবে। স্বীকার করে নিচ্ছি, এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ খেলার মতো তৈরি নই আমরা। সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ডার্বি খেলতে নেমে যাচ্ছি। আমাদের থেকে তোমরা অনেক এগিয়ে থেকে যুবভারতীতে নামবে।

কাটসুমি : কেন আমাদের এগিয়ে রাখছ?

সোনি : কলকাতা লিগ থেকে তোমাদের একই কোচ রয়েছেন। তার উপর কলকাতা লিগের থেকে আই লিগের দলে খুব একটা বদলও ঘটেনি। মোটামুটি একই দল রেখে, একই কোচের কোচিংয়ে অনেকগুলো ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার জন্য আই লিগের গোড়ায় হলেও ডার্বির জন্য দলটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে আমাদের ক্লাবে কলকাতা লিগে কোচ ছিলেন শঙ্করলাল। আই লিগের ফুটবলাররা নতুন করে পেলেন কোচ সঞ্জয় সেনকে। টিমে বেশিরভাগ নতুন ফুটবলার। নতুন সেট আপ। গত মরশুমের দলটা থাকলে বলে দিতাম, আমরা রেডি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ঠিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই ডার্বিতে নেমে পড়ছি।

কাটসুমি : তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, খাতায়—কলমে রোববারের ডার্বিতে আমরা এগিয়ে রয়েছি। এটা সতি্যই মাঠের ভেতর প্লাজা, বাজো, আমনার মতো ফুটবলার থাকবে আমাদের। প্লাজার পা থেকে হয়তো গোল আসেনি। কিন্তু দারুণ ফুটবলার। এবার আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চটা দেখো। অর্ণব, গুরবিন্দর, কেভিন লোবোর মতো সিনিয়র ফুটবলাররা ডার্বির বিশাল অভিজ্ঞতা নিয়ে রয়েছে। কিন্তু এই মোহনবাগান দলকে ড্রেসিংরুমে কিছু বলতে হলে সেই তোমাকেই শুধু বলতে হবে। তোমার পাশে সিনিয়র বলতে স্রেফ শিল্টন আর কিংশুক। যারা আবার একদমই ভোকাল নয়। ডিকা, ক্রোমা, ইউটারা তো সবে এসেছে। গতবার আমাদের ড্রেসিংরুমটাই সেরা ছিল। ড্রেসিংরুমে সারাক্ষণ হইচই করতাম। তোমার পাশাপাশি দলকে তাতাতে আমি, নয়তো ডাফিও কথা বলতাম। এবার কিন্তু তোমাদের সেই সুবিধেটা নেই। যা ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে হবে না। মাঠে নামার আগে সেই কারণেই হয়তো আমরা এগিয়ে। কিন্তু এটাও বলে দিচ্ছি, মাঠে নেমে পড়লে ডার্বিতে কেউই ফেভারিট নয়। যাকে মনে হচ্ছে সবচেয়ে নেতিয়ে আছে, দেখা গেল  সে—ই সবচেয়ে ভাল ফুটবলটা খেলে দিল!

সোনি : এটা আমিও বিশ্বাস করি। হয়তো কিছুটা পিছিয়ে থেকে আমরা ডার্বিতে নামছি। তার মানে এই নয় যে, ম্যাচের রেজাল্ট আমাদের বিরুদ্ধেই যাবে। মাঠে একবার খেলা শুরু হয়ে গেলে তখন জেতার জন্য যা যা করার সব করব।

কাটসুমি : দেখো, একটা কথা আমারও স্বীকার করে নেওয়া ভাল। তুমি অন্য লেভেলের ফুটবলার। আমি তোমার লেভেলের একদম নই। তুমি চাইলে দু’—তিন জনকে ড্রিবল করে যখন—তখন গোল করে আসবে। আমার সেই ক্ষমতা নেই। আমি বরঞ্চ অমানুষিক পরিশ্রম করতে পারি। আর স্ট্রাইকারদের বল বাড়াতে পারি। বলো তো, গতবার কত ম্যাচে পিছন থেকে চিৎকার করে পুরো দলকে তাতিয়েছি? ইস্টবেঙ্গলে এসেও সেই কাজ করছি। দল পাল্টে আমার কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। মোহনবাগান সমর্থকদের আমার প্রতি আবেগকে সম্মান করি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও একইরকম ভাবে আপন করে নিয়েছে। এবার ওদের ভালবাসা ফেরত দেওয়ার পালা।

প্রশ্ন : আপনাদের আড্ডার মধ্যে একটা প্রশ্ন না করলেই নয়। এই যে কাটসুমি ব্যাখ্যা করে বলে দিলেন, মোহনবাগানে এবার খেলতে সোনির কী সমস্যা হচ্ছে! ডার্বির ঠিক আগে সেটা বলে দিয়ে কী ভাল হল?

সোনি : ওহ! কাম অন দুলাল। আমাদের  টিম মিটিংয়ে কোচ রোজ আলোচনা করছেন, কীভাবে কাটসুমির দৌড়কে আটকে দেওয়া যায়। কাটসুমির সামনে সবসময় আমাদের একজন ফুটবলারকে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। আপনার কী মনে হয়, কাটসুমিও এসব নিয়ে ভাবছে না। ওরা আমাকে আটকানোর প্ল্যান করবে। আমরা ওকে আটকানোর প্ল্যান করব। এটাই তো স্বাভাবিক। এর মধ্যে আলাদা কোনও চমক নেই। ভাবুন তো সেই কোচদের অবস্থাটা! মারাদোনার বিরুদ্ধে খেলার আগে বিপক্ষ দলের কোচরা বারবার নিজের ডিফেন্ডারদের বলত, মারাদোনা কিন্তু বাঁ পায়ের ফুটবলার। সবসময় ওর বাঁ পা-কে ফলো করতে হবে।  কিন্তু তারপরেও কোনও ডিফেন্ডার কোচের প্ল্যান মতো মারাদোনাকে আটকাতে পেরেছে? তবুও তো কোচরা প্ল্যান করেই যায়। এসবই আমি, কাটসুমি, সবাই জানি। তাই এসব নিয়ে সমস্যাও নেই।

কাটসুমি : একটা কথা গত তিন বছরে জিজ্ঞাসা করিনি। ডার্বির আগে কোনওদিন টেনশন হয় তোমার ?

সোনি : সত্যি বলছি, কোনওদিন হয়নি। কিন্তু এই ডার্বির আগে অদ্ভুত একটা টেনশন হচ্ছে। আর পরীক্ষার আগে এই টেনশনের কারণ, ভালভাবে পড়াশোনাটা হয়নি এবার। অন্যবার ডার্বির আগে রেজাল্ট নিয়ে মনের ভেতর কেমন যেন একটা সাড়া পেয়ে যাই। সত্যি বলছি, এবার কিছুতেই ধারণা করতে পারছি না, রোববারের ডার্বির রেজাল্ট কী হতে পারে।

[ডার্বির আগে চনমনে লাল-হলুদ শিবির, সোনিকে নিয়ে ভাবতে নারাজ এডু]

কাটসুমি : আমার আবার টেনশন-ফেনশন হচ্ছে না। প্রথম ম্যাচটায় চাপে ছিলাম। নতুন জার্সি। ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারব কি না। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে যাওয়ায় একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছি। লাল-হলুদ জার্সিটা আমার সুট করে গিয়েছে।

সোনি : আমিও সেদিক দিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত বলতে পার। আই লিগের প্রথম ম্যাচে গোল পেয়ে যাওয়ায় ডার্বিতে কিছুয়া হলেও কনফিডেন্স নিয়ে নামতে পারব।

কাটসুমি : শুনলাম, তোমাদের ক্রোমা আর ডিকা নাকি বলেছে, আমাদের ডিফেন্স স্লো?

সোনি : সত্যি বলতে, এ ব্যাপারে কিছু জানি না আমি। আসলে গত মরশুমেও এডুয়ার্ডো একটু দেরিতে পিক করেছিল, তাই হয়তো ওকে স্লো মনে হয়েছে। কিন্তু এডু খুব কমিটেড ফুটবলার। তাছাড়া ওর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হয় জানে। স্লো হলেও সেটা বিশাল অভিজ্ঞতা দিয়ে ঢেকে দেয়।

কাটসুমি : কত বয়স হল তোমার ছেলের?

সোনি : ১১ মাস। ঠিক করেছি রোববার আভিচি-কে মাঠে নিয়ে যাব। টিভিতে আমাকে দেখলেই স্ক্রিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এবার মাঠে মা-র কোলে বসে বাবাকে ডার্বি খেলতে দেখবে।

আচ্ছা একটা কথা বলো তো, সারাদিনে কী খাও যে, এরকম ফিট থাক? গত তিন বছরে একটা ম্যাচেও তো চোটের জন্য মাঠের বাইরে বসতে দেখিনি তোমাকে!

কাটসুমি : (হাসি) আর কোনও সিক্রেট শেয়ার করব না। তুমি এখন আমার শত্রু। বাকি কথা রোববার বিকেলের পর।

সোনি : শুভেচ্ছা রইল। মাঠে দেখা যাবে কে জেতে!

কাটসুমি : আমি তোমাকে জেতার শুভেচ্ছা জানাতে পারছি না। শুধু ভাল খেলার শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ