সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জো’বার্গের ওয়ান্ডারার্সের পিচ নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় ঝড়। প্রাক্তনরা পাশে দাঁড়িয়ে কেউ বলছেন না, এই পিচে টেস্ট ক্রিকেট সম্ভব। ঘুরিয়ে এটাই শুনিয়ে দিচ্ছেন, এই টেস্ট ম্যাচ বন্ধ করা উচিত। না হলে কারওর বড় ধরনের চোট লাগতে পারে। এঁদের থেকে পুরোপুরি উলটো মেরুতে হাঁটছেন ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। তিনি শুক্রবার রাতে মিডিয়ার সামনে এসে বলে গেলেন, “এই পিচকে ভয়ংকর বলতে পারব না। আমরা সবাই ব্যাটিং করলাম। এই শব্দের বদলে আপনারা চ্যালেঞ্জিং কথাটা ব্যবহার করতে পারেন।”
রাহানে কেন এই কথা বলছেন? তার ব্যাখ্যা আছে। তার আগে বরং প্রাক্তনদের দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। প্রথমেই এই পিচের বিরুদ্ধে গলা ফাটালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিং। তিনি দশের মধ্যে মাত্র দুই দিলেন ওয়ান্ডারার্সের পিচকে। বলছেন, “এটা টেস্ট ক্রিকেটের পিচ হতে পারে না। তৃতীয়দিন বল যেভাবে ব্যাটসম্যানদের আঘাত করল, তারপর ওরা কেউ ব্যাট করতে চাইবে না। এমন ঘটনা ’৯৮তে হয়েছিল। সেবার জামাইকায় এক ম্যাচে পিচ এভাবেই খেলেছিল। এখানে কিছুতে খেলা হতে পারে না।”
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার ড্যারেল কালিনান বলছেন, এই পিচে বল পুরনো হলে ঝামেলা হচ্ছে না। নতুন বল হলে ব্যাটসম্যানদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। গুড লেংথ স্পট থেকে যেভাবে বল লাফাচ্ছে, তারপর ব্যাটসম্যানরা খেলবে কীভাবে? কেন এমন হল, জানি না। আমি দশে সাড়ে চারের বেশি দিতে পারছি না।” সুনীল গাভাসকর বলেছেন,“ টেস্টের শুরু থেকে এই পিচের বাউন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এমন অসমান বাউন্স হলে ব্যাটসম্যানরা খেলবে কিভাবে? এখানে তৃতীয়দিন যা দেখলাম, তারপর টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি করে প্রশ্ন উঠবে। গুড লেংথ স্পটে কিছু ক্র্যাক আছে। সেই জায়গায় বল পড়লে একটা বাড়তি বাউন্স ব্যাটসম্যানকে ঝামেলায় ফেলছে। সামি বা ভুবি যখন বল করছিল, তখন তেমন কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু বুমরা বল করতে আসার পর সমস্যা হল। সামি বা ভুবির থেকে বুমরাহ বেশি লম্বা। ওপর থেকে বল ছাড়লে বাড়তি বাউন্স পিচ থেকে এমনিই পাচ্ছে। সেটাই এলগারের হেলমেটের খাঁচায় মারল। তারপর আম্পায়াররা খেলা চালানোর সাহস দেখাতে পারেননি।”
তিন প্রাক্তনের মত সহজভাবে কথা বলছেন না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি বলেছেন, “এই পিচে মাচ হতে পারে না। আইসিসি-র এই ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত। ২০০২-০৩এ এমন ঘটনা ঘটেছিল নিউজিল্যান্ডে। তারপর আবার এখানে দেখতে পেলাম।” সৌরভের সঙ্গে এক সুরে কথা বলেছেন হরভজন সিংও। তিনি মনে করেন, ভাল ক্রিকেটের জন্য এই পিচ উপযুক্ত নয়। সৌরভ প্রশ্ন তুললেও আইসিসি এখনও পর্যন্ত টেস্ট বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলে নি। বরং খেলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে। শুক্রবার রাতে ম্যাচ রেফারি পাইক্রফট দুই আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলার পর ফোনে যোগাযোগ করেন আইসিসি কর্তাদের সঙ্গে। তাঁদের কাছে পুরো ব্যাপারটি মেলে ধরেন। তারপর আইসিসি ইমেলের মাধ্যমে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে।
প্রাক্তনদের কথা শোনার পর আইসিসি-র বার্তা কিছুটা হলেও ধাক্কা দিয়ে গেল। ভারতীয় শিবির খেলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে কথা বলছে। যেমন রাহানে। ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে বলছেন, “পিচকে কখনও ভয়ঙ্কর বলব না। এটা চ্যালেঞ্জিং পিচ। আমরাও এই পিচে ব্যাট করেছি। আগে বা পরে কি হচ্ছে, সেটা ভুলে বর্তমান নিয়ে পড়ে থেকেছি। আসলে আমাদের ওপেনাররা ভাল খেলে দিতে কাজটা কিছুটা হলেও সুবিধা হয়েছে। আমরাও মার খেয়েছি। কিন্তু কি হয়েছে সেদিকে না তাকিয়ে পরের বলের অপেক্ষায় থেকেছি। বলুন না ভুবির কথা। ওর টেকনিক তো দারুণ কিছু নয়। তবু কতক্ষণ উইকেটে থেকে আমার সঙ্গে বড় পার্টনারশিপ করেছে। বিরাটও গায়ে বল খেয়েছে। বিজয় ১২৭ বল খেলে তারপর আউট হয়েছে। পিচের দু’একটা জায়গা থেকে বল লাফাচ্ছে। চোখ থেকে বল না সরালে এই উইকেটে খেলে দেওয়া যায়। আমরা পিচ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলিনি। এখানে খেলতে এসেছি। জিততে এসেছি। দু’দল এখানে ব্যাট করছে। তা হলে এই পিচ কেন ভয়ংকর?”
আসলে ভারতীয় শিবির চাইছে, যেভাবেই হোক আম্পায়াররা যেন খেলা চালিয়ে যান। তাহলে ২৪১ রানের পিছনে ছুটতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা কেঁপে যাবে। তাই পিচ নিয়ে কোন কঠিন শব্দ ভারতীয় শিবির থেকে আসছে না।
পিচ নিয়ে কী বললেন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজাররা, দেখুন ভিডিওয়-
দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন প্রশাসক আলি বাখারের মতে, ওয়ান্ডারার্সের পিচ কোনওমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.