দুলাল দে, নয়াদিল্লি: অসম্ভবের মতো শোনালেও এটাই সম্ভবত ঘটতে চলেছে!
তাই সামনের মরশুমেও আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের অন্তর্ভুক্তি কঠিন রাস্তার দিকে এগোচ্ছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে ২০১৮-১৯ মরশুমে ফ্র্যাঞ্চাইজি দল বাড়ানোর জন্য নতুন করে হয়তো বিড করবে না আইএমজিআর। সমস্যার জট খোলা একমাত্র সম্ভব তারপরের মরশুমে। অর্থাৎ ২০১৯-২০। যখন থেকে উঠে যাবে ‘এক ক্লাব এক শহর’ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে আইএমজিআরের এই চুক্তি।
মোদ্দা উদ্দেশ্য অবশ্যই আইএসএলে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের অন্তর্ভুক্তি। পাশাপাশি বেঙ্গালুরু এফসি, জামশেদপুর এফসি-র মতো দলগুলোর আইএসএলে খেলার ইচ্ছা তো ছিলই। ভারতীয় ফুটবল ক্লাবগুলোর আগ্রহ দেখে ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনায় আইএমজিআর ঠিক করেছিল, এই মরশুম থেকে আইএসএলে দলের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঠিক হয় বিডের মাধ্যমে নেওয়া হবে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেই মতো সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিডের দিন ঘোষিত হতে বেঙ্গালুরু এবং জামশেদপুরের সঙ্গে আইএসএল খেলতে ‘বিড পেপার’ তোলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানও। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সেই কাগজপত্র জমা দেওয়ার রাস্তায় আর হাঁটেনি কলকাতার দুই প্রধান। এখানে ফেডারেশনের এক শীর্ষকর্তা বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান আইএসএলে খেলতে চায় যে, সেটাই তো এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে জানায়নি। আজ পর্যন্ত সরকারি ভাবে ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে আইএসএলে খেলার জন্য কোনওরকম আবেদন করেনি ওরা। যদি বিড পেপার জমা দিত, তা হলেও না হয় বোঝা যেত কলকাতার দুই বড় ক্লাব আইএসএল খেলতে আগ্রহী। এখনও পর্যন্ত ওদের তরফে যা কিছু জানা গিয়েছে সবই তো মৌখিক।”
তা হলে উপায় কী? এদিন ফেডারেশন এবং আইএমজিআর সূত্রের খবর, নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার জন্য সামনের মরশুমে বিডের আর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আপাতত যা পরিকল্পনা, তাতে ২০১৯-২০ মরশুমে ফের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিড ওপেন করা হবে। সে ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান যদি আবেদন করে তা হলে ১২ দল নিয়ে ২০১৯-২০ মরশুমে আইএসএল হবে। তার মানে অবশ্য এই নয় যে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ছাড়াই আইএসএলে খেলতে পারবে দুই প্রধান। ২০১৯-২০ মরশুমেও নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিয়েই বিড করতে হবে ইস্ট-মোহনকে।
পরের মরশুমেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে আইএসএলে অন্তর্ভুক্ত করতে আইএমজিআরের ‘বিড’ ওপেন না করার কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে আইএমজিআরের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের। ২০১৪-১৫ মরশুমে আইএসএল শুরুর সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি-আইএমজিআরের চুক্তিতে বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের জন্য ‘এক শহর এক ক্লাব’ মডেল রাখা হবে। কোনও শহর থেকে একের বেশি টিম খেলবে না। যেমন কলকাতা থেকে শুধুই এটিকে খেলবে। তাই ২০১৮-১৯ মরশুমে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে নেওয়া প্রবল সমস্যা। স্বভাবতই দুই প্রধান খেলতে চাইবে কলকাতা থেকেই। যা এটিকে কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা মেনে নেবেন না বলেই আপাতত খবর। ফেডারেশন এবং আইএমজিআর কর্তারা যা-যা বললেন তার সারমর্ম; “আমরা চুক্তির বাইরে এসে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে কলকাতা থেকে খেলার অনুমতি দেওয়ার জন্য সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে কেবলমাত্র অনুরোধ করতে পারি। বাধ্য করতে পারি না। তবে এই সমস্যাটা ২০১৯-২০ মরশুম থেকে থাকবে না। তখন ফর্ম্যাট বদল হতেই পারে। কারণ তখন বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে।” আপাতত যা খবর, দু’মরশুম পরেও কলকাতা থেকে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলার চেষ্টা করলে তখন এটিকের সামনে দুটো রাস্তা। এক, কলকাতা থেকেই তৃতীয় দল হিসেবে খেলা। অথবা আইপিএলে তারা যেমন পুণে থেকে খেলেছে, সেরকম আইএসএলে হায়দরাবাদ বা অন্য কোনও শহর থেকে খেলা।
এ দিকে ভারতীয় ফুটবলের রোডম্যাপ তৈরির জন্য এএফসি এবং ফিফার পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। যদিও এই রোডম্যাপের উপর ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের সামনের মরশুমে আইএসএলে খেলা-না খেলা কোনওটাই নির্ভর করছে না। রোডম্যাপের লক্ষ্য, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস সমৃদ্ধ আর আর্থিক স্বয়ংসম্ভর ক্লাবগুলোকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া। যা আগে মুখে বলা হয়েছে। এবার সেটা লিখিত আকার নেবে। কিন্তু পরের মরশুমেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে কীভাবে আইএসএলে খেলানো সম্ভব তার কোনও সমাধানসূত্র সেখানে থাকছে না। অন্য দিকে, পেশাদার সংগঠক হিসেবেই চুক্তির বাইরে গিয়ে আইএমজিআর চাইছে না এটিকের সঙ্গে চুক্তি বিচ্ছিন্ন করতে। এখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান কর্তারা যদি বুঝিয়ে বাঝিয়ে রাজি করাতে পারেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে। অথবা মুকেশ আম্বানি ব্যক্তিগত ভাবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে কলকাতা থেকে খেলতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এটিকে কর্ণধারকে। যে দুটোরই সম্ভাবনা খুব কম। তাই সামনের মরশুমেও দুই প্রধানের আইএসএলে খেলা খুব সম্ভবত হচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.