সোম রায়: মিনার্ভা পাঞ্জাব ম্যাচ শেষে আরও একটা ম্যাচ খেলতে নেমে পড়ল মোহনবাগান! যে ম্যাচ অবশ্যই ফুটবলাররা খেললেন না। খেলতে নামলেন মোহনবাগান শীর্ষকর্তারা। ক্রোমা-ডিকা ম্যাচ! সব কিছু ঠিকঠাক চললে, আগামী দু’একদিনের মধ্যে মোহনবাগানের এই দুই বিদেশির বিদায়ঘণ্টা বাজতে চলেছে। ক্রোমা এবং ডিকা- দু’জনকেই সম্ভবত ছেড়ে দিতে চলেছে ক্লাব। বুধবার মোহনবাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত দুই বিদেশিকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাইলেন না। তিনি শুধু বললেন, “ক্লাবের সচিব অঞ্জন মিত্রর থেকে শিখেছি কী করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটুকু বলছি, আমরা সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। দু’একদিনেই সেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।” কিছু দিন আগেই মোহনবাগান কোচের পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন সঞ্জয় সেন। ক্রোমা-ডিকার সঙ্গে তাঁর তফাত- সঞ্জয় নিজে পদত্যাগ করেছিলেন। আর দুই বিদেশিকে শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হলে, তা ক্লাবই দেবে।
মিনার্ভা ম্যাচ শেষে বুধবার প্রবল নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। ম্যাচ শেষের দু’ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও ড্রেসিংরুমে ম্যারাথন বৈঠক চালাতে থাকেন মোহনবাগান শীর্ষকর্তারা। দফায় দফায় বৈঠক চলতে থাকে। কখনও কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর সঙ্গে। কখনও বা ক্রোমা-ডিকাকে ডেকে, দু’জনের সঙ্গে। শোনা গেল, বৈঠকে কর্তাদের কাছে দুই বিদেশিকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন শঙ্কর। বলে দেন, ক্রোমা-ডিকার খেলায় তিনি একেবারে খুশি নন। বাগান কোচের অসন্তোষ স্বাভাবিক। ডিকা এ দিন গোটা ম্যাচ প্রায় হেঁটে বেড়িয়েছেন। আই লিগে তাঁর নামের পাশে পাঁচটা গোল থাকলে কী হবে, তার মধ্যে দু’টো পেনাল্টিতে! আর ক্রোমা? তিনি তো এ দিন প্রথমার্ধের শেষ দিকে পেনাল্টিই মিস করে বসলেন! এ দিন ম্যাচ চলাকালীনই দুই বিদেশির নামে ধিক্কার থেকে শুরু করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান- ক্রমাগত দেওয়া চলছিল। ম্যাচ শেষে দু’জনকে ঘিরে সেই অসন্তোষ আরও ধূমায়িত হল।
কর্তাদের কাছে কোচের এ হেন বিরক্তি প্রকাশের পর দুই ফুটবলারকে ডেকে পাঠানো হয় ড্রেসিংরুমে। এবং কথোপকথনের যে চিত্রনাট্য শোনা গেল, তা এ রকম:
বাগান কর্তা: তোমরা কি নিজেদের পারফরম্যান্সে খুশি?
ক্রোমা-ডিকা: (কয়েক সেকেন্ডের নৈঃশব্দ শেষে) না।
শোনা গেল, দুই বিদেশির উত্তর পাওয়া শেষে বাগান কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে যান। যেখানে ক্লাবের সহ সচিব সৃঞ্জয় বোস থেকে শুরু করে অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত, ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দৈনন্দিন দলের কাজ দেখা কর্মসমিতির দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উত্তম সাহা ও সঞ্জয় ঘোষ- সবাই ছিলেন। সেখানেই দুই বিদেশিকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে কথা হয়। বলা হয়, কেউ যদি নিজেই নিজের পারফরম্যান্সে খুশি না হয়, তাহলে বাকিরা হবে কী করে? কোচ শঙ্করলাল অবশ্য আগেই একটা কিছু ঘটার ইঙ্গিত ছেড়ে গিয়েছিলেন।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে ক্রোমা-ডিকার পারফরম্যান্স নিয়ে বাগান কোচ বলে যান, “ওরা নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। তবে বিভিন্ন বিষয়ে কর্তাদের সঙ্গে বেশ কিছু আলোচনার দরকার।” আলোচনাটা কী, পরে ধরতে অসুবিধে হয়নি। শঙ্করলাল বলছিলেন যে, ক্রোমার পেনাল্টি মিসই সব শেষ করে দিয়ে গেল। “পেনাল্টি মিসটাই মারাত্মক হয়ে গেল। ওটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।” সঙ্গে যোগ করলেন, “ওরা ন’জন মিলে ডিফেন্স করছিল। কিন্তু তার পরেও আমরা গোলের পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি।” বলা হয়নি, ক্রোমা-ডিকা নিয়ে কথা চলার সময় বাগান শীর্ষকর্তাদের কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোচের উপরেও ক্লাব কাউকে আনতে চলেছে কি না? যা শুনে ক্লাব কর্তাদের বক্তব্য- দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটাই হল মিনার্ভার হাফে। কিংসলের গোলের পরেও দু’টো সুযোগ এসেছিল। ঘুরেফিরে কী দাঁড়াল? শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের কোচে আস্থা আছে। শুধু দুই বিদেশিতে নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.