সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দিন কয়েক আগেই এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতি পর্বে সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন সোনিয়া বৈশ্য। এবার বিশ্ব মঞ্চে দেশকে গর্বিত করলেন আরেক বাঙালি। প্রথম বাঙালি সাঁতারু হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট চ্যানেল পার হয়ে ইতিহাস গড়লেন সায়নী দাস।
বাড়ি কালনার বারুইপাড়ায়। বাবা রাধেশ্যাম দাস প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মেয়ে হয়ে সাঁতার কেটে বিশ্বজয় করা নেহাত সহজ ছিল না। কিন্তু পরিবারকে সবসময় পাশে পেয়েছেন সায়নী। রটনেস্ট চ্যানেল সুইম প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার খরচ প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন রাধেশ্যাম দাস। কিন্তু মেয়ের স্বপ্নে চিড় ধরতে দেননি তিনি। শেষমেশ বাড়ি বন্ধক রেখে মেয়েকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেন। বাবার এমন আত্মত্যাগের সঠিক মূল্য ফিরিয়ে দিয়েছেন ২০ বছরের সায়নী।
রটনেস্ট চ্যানেল বিশ্বের দুর্গমতম চ্যানেলগুলির একটি। সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে ভারত মহাসাগরের বুক চিড়ে ১৯.৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ ছিল সায়নীর সামনে। এই চ্যানেলে মাঝে-মধ্যেই হাঙরের উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়। এদিন প্রতিযোগিতা চলাকালীনও ভয়ংকর হাঙরের দর্শন পান প্রতিযোগীরা। অনেকেই আতঙ্কে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন। কিন্তু সায়নী ছিলেন নাছোড়বান্দা। ৬ ঘণ্টা ৪২ মিনিট ৫৫.০৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেই কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হন তিনি। মোট ১১৯ জন মহিলা প্রতিযোগী চ্যানেল পার হতে সফল হন। প্রতিযোগীদের তালিকায় ছিলেন একাধিক ভারতীয় প্রতিযোগীও। যাঁদের মধ্যে একমাত্র বাঙালি হিসেবে ৯১ নম্বর স্থানে শেষ করেন সায়নী।
তাঁর এমন সাফল্য উচ্ছ্বসিত কালনার বাসিন্দারা। তাঁর এলাকার মানুষজন-আত্মীয় স্বজনরা আবির খেলে সায়নীর জয় সেলিব্রেট করেন। চলে মিষ্টি মুখের পালাও। ফেসবুকে নিজের সাফল্যের কথা জানিয়ে আপ্লুত সায়নী বলেন, ‘সকলের আশীর্বাদেই এতদূর পৌঁছতে পেরেছি ও সফল হয়েছি।’ বাবা রাধেশ্যাম দাসের জন্যও এ যেন এক আবেগঘন মুহূর্ত। এর আগে গত বছর জুলাইয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছিলেন তাঁর মেয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে গ্রহণ করেছিলেন খেলাশ্রী পুরস্কার। আর এবার আরও এক নজির গড়লেন হুগলির শ্রীরামপুর কলেজের ছাত্রী। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী স্বপন দেবনাথও তাঁর এলাকার মেয়ের জন্য গর্বিত। সায়নীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.