Advertisement
Advertisement

প্রথম প্রেম থেকে বিয়ে- আত্মজীবনীতে অকপট সানিয়া

ব়্যাকেট হাতে পৃথিবীর যে-প্রান্তেই থাকুন না কেন সানিয়া, একাকিত্ব অনুভব করেন না৷ ‘অড্স’ তাঁর চলার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে না৷

Sania Mirza Opened Her Heart In The Autobiography Ace Against Odds
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 13, 2016 12:00 pm
  • Updated:July 13, 2018 5:59 pm

অরুণ সেনগুপ্ত: বলিউড তারকা পর্দায় যতই সাহসী হোন, হোন দুষ্টের দমনে নিয়োজিতপ্রাণ, বাস্তবে তিনি তা নন৷ জনসমক্ষে নিজেই এই কথা স্বীকার করেছেন সলমন খান৷ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে টেনিস-সুন্দরী সানিয়া মির্জার আত্মজীবনী ‘এস এগেনস্ট অড্স’৷ সেই বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে সলমন খান জানিয়েছিলেন, তিনি কখনও আত্মজীবনী লিখবেন না৷ কেন? ‘আমি যদি কলম ধরি তা হলে অনেককে ঘিরে অনেক পুরনো ক্ষত প্রকাশ হয়ে পড়বে৷ আমি কাউকে বিব্রত করতে চাই না৷ আমার জীবনকাহিনি তাই শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে কবরেই শুয়ে থাকবে৷’
বলিউড তারকার এটাই সিদ্ধান্ত৷
এই সিদ্ধান্ত তাঁর বদল হতেই পারে যদি তিনি সময় করে পড়ে ফেলতে পারেন ‘এস এগেইনস্ট অড্স’৷ কী আছে সেই বইতে? আছে সানিয়া মির্জার ভারতের সর্বকালের সেরা মহিলা টেনিস-তারকা হয়ে ওঠার কথা৷ আন্তর্জাতিক সার্কিটে সাফল্য তাঁর পিছনে দৌড়েছে ছায়ার মতো৷ বিতর্কও অবশ্য পিছু ছাড়েনি৷ চলার পথে পড়তে হয়েছে নানা সমস্যার সামনে৷ ভারতীয় টেনিসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, পক্ষপাতিত্ব, ধর্মের দ্বাররক্ষীদের হুমকি, অযাচিত অনুশাসন৷ এছাড়া, খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক চোট-আঘাত তো আছেই৷ চলার পথে সব অড্-ই সানিয়া তাঁর জোরালো ফোরহ্যান্ডে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ যেখানে মনে হয়েছে, সত্যিটা তুলে ধরেছেন অকপটে৷

sania2_web
স্বামী শোয়েবের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে সানিয়া

এবং, জীবনের সব থেকে বড় হৃদয়ঘটিত ঘটনাটি আত্মজীবনীতে সানিয়া উল্লেখ করেছেন বেশ বিস্তারিতভাবে৷ রাখঢাক করেননি৷ লিখেছেন, ”টেনিস আমার প্যাশন৷ কিন্তু আমিও একজন মেয়ে৷ আমিও ভাবতাম, একদিন টেনিস ছাড়ব৷ বিয়ে করব, মা হব৷ আমাকে ঘিরে আমার মা-বাবা, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবরাও নিশ্চয় এইরকমই ভাবতেন৷ কিন্তু বড় হতে-হতে অভিজ্ঞতায় জেনেছি, জীবন কখনও প্রত্যাশামতো চলে না৷ চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অনেক ফাঁক থাকে৷ আমার বন্ধুদের প্রায় সবারই বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ কেউ-কেউ মা’ও হয়ে গিয়েছে৷ আমাকেও এ নিয়ে ভাবতে হবে৷” কিন্তু কাকে মন দেবেন টেনিস-সুন্দরী?
কলেজের সহপাঠী সোহরাব মির্জার সঙ্গে তাঁর একটু মন দেওয়া-নেওয়ার পর্ব শুরু হয়েছিল৷ ঘটনাচক্রে সোহরাব আবার সানিয়ার বাবার বন্ধুর ছেলে৷ এমনিতেই দীর্ঘ দিনের জান-পহ্চান৷ টেনিস-ব্যস্ততায় নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ না-হলেও সম্পর্কটা ছিলই৷ তিনিই হঠাৎ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে শুরু করলেন৷ সানিয়া তখন তাঁর জীবনের সবথেকে কঠিন সময় কাটাচ্ছেন৷ কবজির চোটে টেনিস কোর্টের বাইরে চলে গিয়েছেন বেশ কয়েক দিন৷ সদ্য অপারেশন হয়েছে৷ হাত দিয়ে কিছুই করতে পারেন না৷ খাওয়া, চুল বাঁধা–কিছুই না৷ সেই কঠিন সময়ে সোহরাব বেশ কিছু দিন সঙ্গ দিয়েছিলেন তাঁকে৷ বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল৷ এইরকম মেলামেশার সুযোগ আগে হয়নি৷ কিন্তু একটা সময় দু’জনেই বুঝতে পারেন, তাঁদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের লক্ষ্মণরেখায় আটকে গিয়েছে৷ ফলে সোহরাব আর প্রেমিক হয়ে উঠতে পারলেন না, ‘ভাল বন্ধু’ হয়েই থেকে গেলেন৷

Advertisement

 

Advertisement

 

 

sania1_web
মুক্তির পরেই বেস্টসেলার

সানিয়া এরপর পুরোপুরি মনঃসংযোগ করলেন কোর্টে নিজেকে আবার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে৷ শুরু হল আবার লড়াই৷ অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট সুন্দর শহর হোবার্ট৷ এখানেই তাঁর জীবনে এল একটি নাটকীয় মোড়৷
এক সন্ধ্যায় বাবা ইমরান ও ট্রেনার লেনের সঙ্গে রাতের খাবার সারতে গেলেন এক ভারতীয় রেস্তোরাঁয়৷ ওল্ড উল্সস্টোর হোটেলের কাছেই ওয়াটারফ্রন্ট৷ তার পাশেই রেস্তোরাঁটা৷ কয়েকজন পাক ক্রিকেটার সেখানে ডিনার সারছিলেন৷ পাকিস্তান তখন অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ খেলছিল৷ কিছুক্ষণ পর ঢুকলেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক শোয়েব মালিক৷ কোণের টেবিলে বসা সানিয়াদের দেখে এগিয়ে এলেন৷ সানিয়া বাবা ও ট্রেনারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন৷ দু’-একটা কথাবার্তার পর ইমরানকে দেখিয়ে শোয়েব বললেন, ”ওঁর সম্মানে এই টেবিলের বিল আমি মেটাব৷”
শোয়েবের সঙ্গে সানিয়ার আলাপ দিল্লিতে৷ পাকিস্তান তখন ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলছিল৷ এক হোটেলের জিমে এক সাংবাদিক আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন৷ তারপর দেখা মোহালিতে৷ একদিনের ম্যাচ দেখতে গিয়ে৷
পরের দিনই ছিল সানিয়ার খেলা৷ শোয়েব দেখতে যাবেন বলে জানালেন৷ পরদিন তাঁদের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলেন সানিয়া৷ ম্যাচের পর শোয়েবদের ওই রেস্তোরাঁতেই ডিনারের নেমন্তন্ন করলেন ইমরান৷ শোয়েবের বন্ধুদের অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল৷ শোয়েব একাই আসতে রাজি হয়ে গেলেন৷ তারপর ফোনে কথাবার্তা৷ সানিয়া লিখছেন, ”শোয়েব কথা বলত মাটিতে দাঁড়িয়ে৷ মনে হত না যে ওর জনপ্রিয়তা, নাম নিয়ে আদৌ কোনও মাথাব্যথা আছে৷ এত বড় ক্রিকেটার অথচ কী অসম্ভব উদাসীন! ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগত৷ একটা আলাদা অনুভূতি হত৷”
ওই ঘটনার মাসখানেক পর সানিয়া দুবাইয়ে গেলেন দুবাই ওপেন টুর্নামেন্ট খেলতে৷ ওই সময়েই পাকিস্তান এল ইংল্যান্ডের বিরু‌দ্ধে ওয়ান ডে খেলতে৷ সানিয়ার মতে, ”হয়তো এটাই উপরওলার ইচ্ছা ছিল৷ তিনিই আমাদের দু’জনকে টেনে এনেছিলেন৷”
কয়েক মাস পর সানিয়াকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন শোয়েব৷ সেই প্রস্তাবে কোনও নাটকীয়তা ছিল না৷ সানিয়া বলছেন, ”আমি অবাক হইনি৷ মনে হয়েছিল, এটাই তো হওয়ার ছিল৷ শোয়েব বলল, মা’কে আমি আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাব৷ তিনি অবশ্য সব জানেন৷ এরপর আমরা বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কথা শুরু করলাম৷”

sania3_web
মার্জার ও সুন্দরী

সানিয়া মির্জা শোয়েব মালিক বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছেন আর সেটা সাধারণ মানুষ জানবেন না, এটা হয় না৷ কেননা, দু’জনেই গোটা বিশ্বে পরিচিত মুখ৷ তবু দু’জনেই ব্যপারটা অনেক দিন গোপন রাখতে পেরেছিলেন এই কারণে যে, মনের দিক থেকে দু’জনেই ছিলেন ভয়ঙ্কর বাস্তববাদী৷ সানিয়া আত্মজীবনীতে বলেছেন, ”আমরা খুব সচেতন ছিলাম৷ কারণ জানতাম, ও যে-দেশে থাকে তাদের সঙ্গে আমার দেশের রাজনৈতিক দূরত্ব অনেকখানি৷ এবং এটা খুব সিরিয়াস৷ আমি টেনিস সার্কিটে বেড়ে ওঠা মেয়ে৷ যেখানে জাত-পাত, ধর্ম, ভাষা আলাদা বলে কিছু হয় না৷ সেখানে গোটা পৃথিবীই একটা দেশ৷ যেখানে সবার সঙ্গে শুধুই বন্ধুত্বের সম্পর্ক৷ এ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে৷ আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আমাদের কেরিয়ার ইত্যাদি৷ আমাদের একটা বাড়ি, দু’-দেশ থেকে যার দূরত্ব হবে সমান৷ দুবাই আমাদের দু’জনেরই পছন্দ হয়েছিল৷ এবং আমরা শিখে গিয়েছিলাম, দূরত্বের মধ্যেও কী করে কাছাকাছি থাকা যায়৷”
ব়্যাকেট হাতে পৃথিবীর যে-প্রান্তেই থাকুন না কেন সানিয়া, একাকিত্ব অনুভব করেন না৷ ‘অড্স’ তাঁর চলার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে না৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ