বছর আসে বছর যায়। ফেলে রাখে যায় কিছু স্মৃতি। আর তৈরি হয় কিছু ব্যক্তিত্ব। তাঁদের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়ে থাকে আপামর মানবজাতি। এবছরও এমন কিছু ব্যক্তিত্বের উত্থান হয়েছে দুনিয়া জুড়ে। ভাল কাজেই হোক খারাপে, যেনতেন প্রকারেণ তাঁরা থেকেছেন গোটা বছরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এমনই বাছাই করা বিশিষ্টদের কথা উল্লেখ থাকল এই প্রতিবেদনে। দেখুন তো, আপনার লিস্টে এঁরা আছেন কি না?
নরেন্দ্র মোদি
তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম। বছরভর দেশ তথা গোটা বিশ্বে তাঁর কারনামা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। যে কোনও আলোচনাতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল অবধারিত। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে নোট বাতিল, স্বচ্ছ থেকে ডিজিটাল ভারত। তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্তে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন বিরোধীরা। কখনও দেশবাসী তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন কখনও বা সমালোচনার ঝড় বইয়েছেন। কিন্তু তাঁকে টলানো যায়নি। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি একবছরে ১০০ ইঞ্চি হয়েছে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কিন্তু বরাবরই তিনিই থেকে গিয়েছেন বছরভর। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদিই হলেন ২০১৬-র পার্সন অফ দ্য ইয়ার। নিঃসন্দেহে।
বিরাট কোহলি
টিমের লাডলা তো ছিলেনই। এবার আরও পরিণত, আরও দৃঢ়চেতা হয়েছেন ২০১৬-য়। রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে- যখনই টিম ইন্ডিয়া বিপক্ষের কাছে বিপদে পড়েছে তখনই ত্রাতা হিসাবে আবির্ভাব হয়েছে তাঁর। কি ব্যাটে কি নেতৃত্ব, সর্বক্ষেত্রে তিনিই যে সেরা তাঁর হাতে কলমে প্রমাণ দিয়েছেন। ক্যাপ্টেন কুল মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত থেকে টেস্ট দলের ব্যাটন নেওয়ার পরই রেকর্ড টানা ১৮টি ম্যাচে অপরাজিত তাঁর নেতৃত্বাধীন ভারত। টেস্ট ব়্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বে শীর্ষে দল, ব্যক্তিগত ব়্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের একনম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান, টেস্ট ও ওয়ান ডে বিশ্বের দু’নম্বর। আর কি চাই! তাই ২০১৬-র সেরা ব্যক্তিত্বদের তালিকায় তাঁকে রাখতেই হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
অহঙ্কারি, বিদ্বেষপূর্ণ, বিতর্কিত, বহু মানুষের চক্ষুশূল। তবুও সব বিতর্ককে গা থেকে ঝেড়ে ফেলে বছরের প্রায় শেষলগ্নে এসে শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। অসম্ভবকে সম্ভব করে নির্বাচিত হয়েছেন মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট। নিকটবর্তী ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনকে হেলায় হারিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির সাদা বাড়িতে প্রবেশ হয়েছে তাঁর। এমনকি টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে পার্সন অফ দ্য ইয়ারের তকমাও জুটেছে। তাই ২০১৬-র সেরা ব্যক্তিত্বদের অন্যতম হলেন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল
যখনই ঠাট্টা, মশকরা করার জন্য কারও নাম ভাবা হয়েছে, চোখ বন্ধ করে তাঁর নামই মনে এসেছে দেশবাসীর। গোটা বছরই বিতর্ককে সঙ্গে নিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। দিল্লিতে দূষণ রুখতে জোড়-বিজোড় ফরমুলাই হোক বা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের হুমকির অভিযোগই হোক। সবেতেই বিতর্কে বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। কিন্তু মশকরার জন্যই হলেও বছরভর ট্রেন্ডিং পার্সনের তালিকায় তিনি উপরের দিকেই ছিল তাঁর নাম।
রাহুল গান্ধী
মায়ের বড্ড আদরের ছেলে। নিন্দুকরা বলেন, তাঁর নাকি রাজনৈতিক বোধবুদ্ধিই তৈরি হয়নি। তবুও দলের যুব প্রজন্মের চোখে কিন্তু তিনি হিরো। ভাল হোক বা খারাপ, প্রশংসা হোক বা সমালোচনা, সবেতেই রাহুল গান্ধীর জুড়ি মেলা ভার। সোনিয়া গান্ধীর জায়গায় কংগ্রেসের সভাপতির মসনদে বসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। শাসকদলের বিরোধিতার অন্যতম মুখ তিনিই। বছরভর মোস্ট ট্রেন্ডিং ব্যক্তিত্বদের তালিকায় তাই অনায়াসেই জায়গা করে নিয়েছেন কংগ্রেসের যুবরাজ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিরোধীদের কীভাবে সমূলে উৎখাত করতে হয়, ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বর্তমানে তাঁর থেকে ভাল বোধহয় আর কেউ জানেন না। বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের ধুয়ে দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ, সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফেরত দেওয়া, বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানো, সবেতেই নিজের কামাল দেখিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। বছরভর একের এক মাইলস্টোন পেরনোর পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাখির চোখ এখন দিল্লি দখল। রাজনৈতিক ধুরন্ধরতা দিয়ে সব বাধাই পেরিয়ে ফেলেছেন তিনি। ২০১৬-র সেরা ব্যক্তিত্বদের তালিকায় তাই জ্বলজ্বল করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
জয়ললিতা
জনপ্রিয়তা কাকে বলে তা মনে হয় তিনি এবছর না মরলে বোঝা দায় হত। সেলভি জয়ারমন জয়ললিতা সবার আম্মা হয়েছিলেন এই অপার জনপ্রিয়তায় ভর করেই। তাই বছরের শেষ মাসে আচমকা তাঁর মৃত্যুতে শুধু তামিলনাড়ুই নয়, গোটা দেশে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। তাঁর অকালপ্রয়াণের খবর শুনে শুধু তামিলনাড়ুতেই প্রায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়। তাঁর আরোগ্য কামনায় দিবানিশি এক করে প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছিল অগুনতি ভক্ত। সেই আম্মা ২০১৬-র অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব হয়েই থেকে যাবেন সবার স্মৃতির মণিকোঠায়।
বাবা রামদেব
কেউ বলবেন ভন্ড, কেউ বা আবার বিচক্ষণ ব্যবসায়ী বলেও কটাক্ষ করতে পারেন। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তাকে টলায় কার সাধ্যি। সম্পূর্ণ ভেষজ উপাদানে তৈরি পণ্যসম্ভারকে আপন ক্যারিশ্মায় জনপ্রিয়তার শিখরে তুলে দিয়েছেন তিনি। পতঞ্জলির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর হয়ে বহু অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। সেই গেরুয়া চাদর ও খাটো ধুতি পরা বাবা রামদেব বছরভর ছিলেন ট্রেন্ডিং পার্সনদের তালিকায় অন্যতম। তাই বছরের সেরা ব্যক্তিত্বদের তালিকায় তো তাঁকে রাখতেই হয়।
সলমন খান
বাদশা, শাহেনশাহ-রা আউট। এখন ভাইজানই ইন্ডাস্ট্রি। গোটা বছর তিনি যাই করেছেন বা বলেছেন, সবই ছিল খবরের শিরোনামে। যেমন একের পর এক হিট ছবি দিয়েছেন তেমনই নিজের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে ধর্ষিত হয়ে যাওয়ার মতো মন্তব্য করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন, কখনও পাক অভিনেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশভক্তদের চক্ষুশূল হয়েছেন। আবার গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা ও চিঙ্কারা শিকার মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। মোটের উপর বিভিন্ন কারণে বছরভরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং থেকেছেন তিনি। তাই বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি থাকবেনই তা তো বলাই বাহুল্য।
আমির খান
অসহিষ্ণুতার আগুনে ঘৃতাহুতিটা তাঁর মন্তব্যেই হয়েছিল বলাই যায়। তাঁর জন্য তাঁকে কম ঘরে-বাইরে কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি। ইনটলারেন্ট ইন্ডিয়া বলায় ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। হাত থেকে চলে যায় জনপ্রিয় ই-কমার্স সংস্থা স্ন্যাপডিলের বিজ্ঞাপনও। অনেকেই তখন বলেছিলেন, নিজের ছবির প্রমোশনের জন্যই না কি এত অসহিষ্ণুতার জিগির তুলেছেন তিনি। কিন্তু নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে বছরশেষে সেরা বাজিটা আমির খানই মারলেন। ব্লকবাস্টার হিট তাঁর ছবি, ‘দঙ্গল’। ইতিমধ্যেই একের পর এক রেকর্ড খানখান করে দিয়েছেন তিনি। তাই শুরুটা নড়বড়ে হলেও ওস্তাদের মারটা বছরশেষেই মারলেন তিনি। ২০১৬-র সেরা ব্যক্তিত্বদের তালিকায় তাঁর এন্ট্রি ঠেকায় কে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.