ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক জেনে ফেলায় স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ। বধূকে সংজ্ঞাহীন করে তাঁর গায়ে তেল ঢেলে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। খুনের পর স্বামী দুর্ঘটনার গল্প ফাঁদে বলে দাবি বধূর আত্মীয়দের। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর মারা গেলেন পেশায় শিক্ষিকা নন্দিতা দে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এ ঘটনায় অভিযুক্ত মধুসূদন দে-কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
[পানাগড়ে মহিলার রহস্যমৃত্যু, আটক ‘লিভ ইন পার্টনার’]
প্রায় চোদ্দ বছর আগে সম্বন্ধ করে বারাসতের রাসবিহারী স্কুল রোডের বাসিন্দা মধুসূদনের সঙ্গে নান্দিতাদেবীর বিয়ে হয়েছিল। উত্তর দিনাজপুরে বাপের বাড়ি তাঁর। নন্দিতাদেবীরা সাত বোন। তাঁর ছোট বোন মধুমিতা চক্রবর্তী জানান, বিয়ের সময় মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভের চাকরি করত মধুসূদন। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে ওষুধের ব্যবসা শুরু করে সে। এরপর মদের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। ব্যবসায় ডামাডোল শুরু হয়। প্রায় রোজ রাতে টাকার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতে সে। তাদের একটি কন্যাসন্তান হয়। সংসারের হাল ধরতে নান্দিতাদেবী একটি ইংরেজি মাধ্যম প্রাথমিক স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। শিক্ষকতা করে সংসার খরচ, মেয়ের লেখা-পড়া এমনকী বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনাও করতেন তিনি। তবে দিনে দিনে মধুসূদনের অত্যাচার বাড়তে থাকে। নেশার টাকা জোগাতে স্ত্রীকে মারধর করে তাঁর বেতন নিয়ে নিত বলে অভিযোগ।
[দোলে ছন্দপতন, বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে অসুস্থ জ্যোতিপ্রয় মল্লিক]
মৃতের পরিবার পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানায়, সম্প্রতি প্রতিবেশী এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মধুসূদন। কয়েক মাস আগে নান্দিতাদেবী বিষয়টি জানতে পারেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই সম্পর্ক নিয়ে চরম বিবাদও হয়। বর্তমানে কোনও কাজ করত না মধুসূদন। উপরন্তু নেশা ও পরকীয়া সম্পর্কের জন্য নান্দিতাদেবীর থেকে জবরদস্তি করে টাকা নিত। বাধা দিলে নান্দিতাদেবীকে বেধড়ক মারধর করা হত। শনিবার রাতে মধুসূদনের এক আত্মীয়ের থেকে খবর পেয়ে বারাসত হাসপাতালে ছুটে আসেন নন্দিতাদেবীর বড়দিদি। দেখেন সম্পূর্ণ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন বোন। নন্দিতাদেবীর আত্মীয়দের মধুসূদন জানায় গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে পুড়ে গিয়েছেন তিনি। নন্দিতাদেবীর অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
[সঙ্গী কি আদৌ ঘর বাঁধতে ইচ্ছুক, বুঝবেন কীভাবে?]
ওই বধূর পরিবার জামাইয়ের কথা মানতে চায়নি। মধুসূদনের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার কোনও শব্দ হয়নি শনিবার। তবে ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। তার উপর যে ঘরে মধুমিতা দেবী পুড়ে যান সেখানে পেট্রলের গন্ধ। নান্দিতাদেবীর আত্মীয়দের দাবি, সংজ্ঞাহীন করে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে মধুসূদন। কেউ যাতে সন্দেহ না করে তার জন্য নিজেই হাসপাতালে নিয়ে যায়। পাশাপাশি নান্দিতাদেবীর ১৪ বছরের মেয়ের বিরুদ্ধেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন তারা। বারাসাত থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই পুলিশ মধুসূদনকে গ্রেপ্তার করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.