Advertisement
Advertisement

লক্ষ্য মাধ্যমিক পাশ, তাই চালকের আসনে বসেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী

এ লড়াইকে কুর্নিশ।

Battling odds east Midnapore boy appeard for Madhyamik
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 16, 2018 8:38 pm
  • Updated:August 19, 2019 12:21 pm

সৈকত মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর: মাধ্যমিক পরীক্ষা তো আর এক দু’দিনের বিষয় নয়। টানা এতদিন কাজে ছুটি নিলে চলবে কেমন করে ? কিন্তু কাজের ফাঁকে ফাঁকে যে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যেতে হবে। মাধ্যমিক পাশ না করলে পড়াশোনার সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। বুদ্ধিটা তার মাথায় খেলে গেল। ফলে কাজে ছুটিও নিতে হল না, আবার বন্ধুদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে যাওয়াও হল। গ্রাম থেকে সেন্টার প্রায় আট কিলোমিটার। এমনিতে এতটা পথের জন্য একটি গাড়ি ভাড়াই করতে হত বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের পড়ুয়াদের। শুভঙ্কর দিল প্রস্তাবটি। সে যে গাড়িটা চালায়,  সেটাই ভাড়া নিল তার বন্ধুরা। ব্যাস। কাজও হল, আবার পরীক্ষাও হল।

[জনপ্রতিনিধির মানবিক মুখ, অসুস্থ বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভরতি করলেন কাউন্সিলর]

ছোট থেকে জীবনযুদ্ধে লড়াই করছে পাঁশকুড়া ১-ব্লকের খণ্ডখেলা গ্রামের শুভঙ্কর মান্না। সবাই চেনে ভোলা নামে। স্কুলের পড়াশোনার খরচ চালাতে গাড়ি মোছার কাজ জুটিয়েছিল। সেখান থেকেই গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসা। বাবা বাদল মান্না পেশায় দিনমজুর। গ্রামের এক প্রান্তে মাথা গোঁজার মতো করে মাটির এক কামরা টালির বাড়ি তাঁদের। বাড়ির বড়ছেলে কোন রকমে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে স্থানীয় একটি গেঞ্জি কারখানায় কাজ নিয়েছেন। এমন অবস্থায় শুভঙ্করের মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে বাড়ির থেকে প্রায় আট কিমি দুরে। তমলুক থানার চনশ্বরপুর হাইস্কুলে। তাই গ্রাম থেকে দূরে শহরের স্কুলে সময়মতো পৌঁছাতে বন্ধুরা সবাই মারুতি ভাড়া করে। আর তাদেরই একটিতে মারুতি চালক হিসেবেই এদিন বন্ধুদের নিয়ে এসেছিল গ্রামের এই ছোট্ট ছেলেটি। উদ্দেশ্য কেবল একটাই। বন্ধুদের সঙ্গে দ্রুত পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর পাশাপাশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে হাতে দু’পয়সা উপার্জন।

Advertisement

শুভঙ্করই জানাল,  ‘দিনমজুরি করে বাবার সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। তাই মা বিড়ি বাঁধেন। একইভাবে আমারও গাড়ি চালাতে খুব ভাল লাগে। তাই পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে সংসারে দু’পয়সা তুলে দিতে পারলে বেশ ভাল লাগবে।’

Advertisement

এই প্রসঙ্গে গাড়ির মালিক শুভঙ্কর গুছাইত বলেন,  ‘অভাবের তাড়নায় তিন বছর আগে গাড়ি মোছার কাজে এসেছিল শুভঙ্কর। তখন সেভেনে পড়ত। কিন্তু তারপর দেখি ওর গাড়ি চালানো নেশায় পরিণত হয়েছে। একরকম জোর করে, জেদ করেই ও গাড়ি চালানো শিখেছে।’ এদিকে শুভঙ্করের সতীর্থ অভিষেক মল্লিক,  জয়ন্ত অধিকারী, শ্রীদাম ভৌমিক,  তাপস মাইতি,  দীপঙ্কর ও অক্ষয় ঘোড়াইরা জানাল,  ‘শুভঙ্কর খুব মিশুকে ও মেধাবী ছেলে। বাড়ির পরিস্থিতির জন্য ও আজ এই পথে এসেছে। এমনই অবস্থা যে, বাড়িতে সময়মতো ভাত রান্না না হওয়ায় আলু,  বেগুন ভাজা মুড়ি খেয়েই পরীক্ষা দিতে এসেছে শুভঙ্কর। তাই ওর যদি সামান্যতম কিছু উপকার করতে পারি আমাদের ভাল লাগবে। তাই আমরাও পরীক্ষার সময়ও ওর বাড়তি উপার্জনের ক্ষেত্রে বাধা দিইনি।’

[সুপ্রিম কোর্টে বড় জয় রাজ্যের, খারিজ বিমল গুরুংয়ের মামলা]

বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিক বলেন,  ছেলেটি পড়াশোনায় ভাল। কিন্তু অভাবের কারণেও এমনভাবে গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করছে। তাই আগামী দিনে সকল ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ওর আরও উন্নতি কামনা করছি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ