Advertisement
Advertisement

দক্ষিণ চিন সাগরে কর্তৃত্বের দাবিতে অনড় বেজিং

ট্রাইব্যুনাল পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ বেজিংয়ের...

Beijing warns against ‘cradle of war’, says panelists were picked by Japan
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 14, 2016 1:25 pm
  • Updated:July 14, 2016 1:29 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে মামলায় রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাশামতোই উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা আক্রমণের পথে গেল চিন৷ বুধবার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তারা দাবি করেছে, ওই জলসীমার উপর তাদেরই ঐতিহাসিক অধিকার৷ ফিলিপিন্স বেআইনিভাবে তাদের এলাকা দখল করেছে৷

শুধু তাই নয়, ট্রাইব্যুনালের জুরিদের উদ্দেশেও নজিরবিহীন আক্রমণ শানিয়ে চিন এক জাপানি বিচারককে তুলোধোনা করেছে৷ তাদের অভিযোগ, ওই বিচারক ট্রাইব্যুনালের জুরিদের নিয়োগ করে রায় প্রভাবিত করেছেন৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত অঞ্চলের আকাশসীমা প্রতিরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে হুমকি দিয়ে চিনের মন্তব্য, ট্রাইব্যুনালের রায় জঞ্জালের স্তূপে নিক্ষেপ করা উচিত৷

Advertisement

(চিনা উপকূলে রণতরী পাঠিয়ে সম্মুখ সমরে তাইওয়ান)

Advertisement

দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা ও তার সম্পদের উপর চিনের কোনও ঐতিহাসিক দাবি নেই বলে জানিয়েছিল দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল৷ চিন পাল্টা জানিয়েছে, ওই ট্রাইব্যুনালের কোনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই৷ তারা সেই রায় মানতে বাধ্যও নয়৷ এদিন চিনের প্রকাশিত শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি মূলত সীমানা নিয়ে৷ ১৯৭০ থেকে ফিলিপিন্স বেআইনিভাবে তাদের নানশা দ্বীপপুঞ্জ-সহ অন্যান্য এলাকা দখল করতে শুরু করে৷ যার জেরে সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ সত্য গোপন করতে ফিলিপিন্স নানা অজুহাত খাড়া করছে বলেও চিনের অভিযোগ৷ দেশের কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিস সূত্রে প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ফিলিপিন্সের দাবির কোনও ঐতিহাসিক বা আন্তর্জাতিক আইনি ভিত্তি নেই৷

চিনের দাবি, দক্ষিণ চিন সমুদ্রের উপর তাদের অধিকার দু’হাজার বছর আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত৷ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর কোনও চেষ্টা করেনি ফিলিপিন্স৷ ফলে ব্যাপারটা আরও জটিল হয়েছে৷ মঙ্গলবারের রায়ে ট্রাইব্যুনাল সাফ জানিয়েছে, ফিলিপিন্সের সার্বভৌম অধিকার চিন খর্ব করেছে৷ পাশাপাশি, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে প্রবাল প্রাচীরগুলিরও তারা ক্ষতি করেছে৷ অবশ্য শুধু ফিলিপিন্স নয়, দক্ষিণ চিন সমুদ্রের জলসীমা নিয়ে চিনের সঙ্গে অতীতে বিরোধ বেধেছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও তাইওয়ানের৷ এই এলাকা দিয়ে বছরে প্রায় তিন লক্ষ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়৷ তাই চিনের পাশাপাশি সেখানে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া আমেরিকাও৷

চিনের দাবি, মার্কিন সাহায্যে অধিকৃত নানশা-সহ কয়েকটি দ্বীপপুঞ্জে ফিলিপিন্স সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে৷ এমনকী, চিনের মৎস্যজীবীদের আক্রমণ ও হয়রানি করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছে৷ তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই চিনের সার্বভৌমত্ব খর্ব করা যাবে না৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল চাং ওয়াংকুন বলেন, “ট্রাইব্যুনালের রায় আমরা মানি না৷ ওই রায় জঞ্জালের গাদায় ফেলে দিন, আলমারিতে তুলে রাখুন বা আর্কাইভে পাঠান, আমাদের কিছু যায় আসে না৷ জোর করে তা কার্যকর করতে গেলে ভাল হবে না৷ দক্ষিণ চিনের সমুদ্র আমাদের৷ যখন ইচ্ছা, তখনই আমাদের নৌবাহিনী সেখানে টহল দেবে৷”

একইসঙ্গে চিন জানিয়েছে, ফিলিপিন্সের সঙ্গে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে চায়৷ তারা আশা করছে, দক্ষিণ চিন সমুদ্রের সন্নিহিত অন্য দেশগুলি এবং আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত সমস্ত দেশ বিতর্কিত এলাকায় শান্তি ও বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করবে৷ চিনের হুমকি, জাপানের দিক থেকে আক্রমণ এড়াতে তারা পূর্ব চিন সাগরে ‘এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন’ ঘোষণা করেছে৷ ওই এলাকা দিয়ে বিমান চলাচলের সময় বেজিংয়ের অনুমতি নিতে হয়৷ আমেরিকা দক্ষিণ চিন সমুদ্রে বিমানবাহী নৌবহর পাঠিয়েছে৷ সে কথা মাথায় রেখে এই এলাকাতেও চিন একই ব্যবস্থা নিতে পারে৷ সহকারী বিদেশমন্ত্রী লিউ ঝেনমিনের হুঁশিয়ারি, “এই এলাকাকে যুদ্ধাঞ্চল বানাবেন না৷”

তবে ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন খুব সতর্কভাবে মন্তব্য করেছে৷ ভারত জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা মেটানো উচিত৷ চিনের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরাও সেটাই চান৷ তবে ট্রাইব্যুনালের রায়কে ভারত যে সম্মান জানানোর কথা বলেছিল, সে প্রসঙ্গে তিনি একটি শব্দও খরচ করেননি৷ উল্টে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সহকারী বিদেশমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন৷ তাঁর দাবি, জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহকারী ও প্রাক্তন কূটনীতিক শুনঝি ইনাই চারজন বিচারক নিয়োগে প্রভাব খাটিয়েছিলেন৷ বাকি এক জার্মান বিচারক নিয়োগ হয়েছিল ফিলিপিন্সের অনুরোধে৷ ওই ইউরোপীয় বিচারকদের এশিয়ার সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই৷ বিচারকদের পারিশ্রমিক রাষ্ট্রসংঘ দেয়নি৷ তাঁদের বেতন কে দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে চিন৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ