দীপঙ্কর মণ্ডল: সতীর একান্ন পীঠ। হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থ। সব পীঠে পৌঁছনো হয়ে ওঠে না সবার। কারণ, শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ছড়িয়ে আছে শক্তিপীঠগুলি। রাজ্য সরকার এই সমস্যার অনেকটা সুরাহা করছে। বীরভূমের তারাপীঠে ৬০ বিঘে জমি চিহ্নিত হয়েছে। এই জমিতে একান্ন পীঠের আদলে আলাদা আলাদা ৫১টি মন্দির তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হল। বীরভূম জেলা প্রশাসন এবং ‘তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ’ মিলিতভাবে এই সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে। রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথম কিস্তিতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সরকারের এই মেগা পরিকল্পনায় যাতে কোনও খামতি না থাকে তা নিশ্চিত করতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। অফিসাররা জানেন, কিংবদন্তি, পুরাণ এবং ধর্মীয় রীতি মেনে সতীর একান্ন পীঠের রেপ্লিকা এক জায়গায় তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয়। এর জন্য প্রভুত অর্থ তো লাগবেই, তার চেয়ে বড় যা লাগবে তা হল নিষ্ঠা। তারাপীঠ মায়ের সিদ্ধপীঠ। প্রত্যেকদিন এখানে অগুনতি পুণ্যার্থীর ভিড় হয়। দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন অন্নভোগ গ্রহণ করেন। তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানিয়েছেন, “বন দপ্তরের ৬০ বিঘে জমি চিহ্নিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। তারাপীঠের কাছে এই জমিতে একান্নপীঠের মন্দিরগুলির রেপ্লিকা তৈরি হবে।” প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর আদি বাড়ি এবং মাতুলালয় বীরভূমে। এই জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক বা জনসভা করতে গিয়ে সেকথা একাধিকবার জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার প্রতিটি এলাকা যে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন তাও উল্লেখ করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রতিবছরই ভারত-সহ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে শক্তিপীঠ দর্শনের আবেদন আসে। আইনি কারণে অনেক সময় অনুমতি মেলে না। বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখে অনেকে বিদেশ সফর বাতিল করেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই সমস্যাগুলি অজানা নয়। তাঁর নির্দেশে তারাপীঠ মন্দির ও সংলগ্ন এলাকা আমূল বদলে গিয়েছে। উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। বিভিন্ন রাস্তা চওড়া করা, আলো, পানীয় জল, সাধুদের থাকার জায়গা, পুণ্যার্থীদের ভোগ খাওয়ার জন্য নয়া ঘর প্রভৃতির কাজ চলছে। মমতা চেয়েছিলেন বীরভূমেই একান্নপীঠের মন্দিরের রেপ্লিকাগুলি তৈরি হোক। ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে পারবেন পুণ্যার্থীরা। প্রতিটি মন্দিরে পুজোও দেওয়া যাবে।
তারাপীঠে এখন প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মানুষ দুপুরের অন্নভোগ গ্রহণ করেন। আশিসবাবু এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী। তাঁর উদ্যোগে মন্দির চত্বর থেকে দখলদারদের সরানো হয়েছে। ভোর চারটেয় তারাপীঠ মন্দিরের দরজা পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দুপুরে সাত-আটটা ভাজা, পোলাও, মাছ, মাংস, পায়েস, মিষ্টি দই-সহ বিভিন্ন ব্যাঞ্জন দিয়ে মায়ের ভোগ হয়। নিরামিষ খাবারও পাওয়া যায়। প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, একান্নপীঠের মন্দিরগুলি তৈরির পর কেন্দ্রীয়ভাবে এক জায়গা থেকে অন্নভোগ বিতরণ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.