Advertisement
Advertisement

১৯৩৩ সালে মৃত্যু, ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু হল ২০১৮ সালে

এমনও সম্ভব?

Burdwan: Death in 1933, death certificate issued after 85 years
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 16, 2018 8:11 pm
  • Updated:August 19, 2019 12:36 pm

ধীমান রায়, কাটোয়া:  মৃত্যু হয়েছে ৮৫ বছর আগে। ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু হল এখন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে আউশগ্রামে। ১৯৩৩ সালে মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট সম্প্রতি ইস্যু করেছে আউশগ্রাম-২ ব্লক প্রশাসন। আর ওই সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ,  জাল তথ্য দাখিল করে ওই সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছে।

[আদালতের মানবিক মুখ, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠালেন বিচারক]

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,  আউশগ্রামের সোয়াই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামের ওই ব্যক্তি। ১৯৩৩ সালে মারা যান তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ১৪ বছর আগে মৃত ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট ব্লক প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়েছে মাস তিনেক আগে। বর্তমানের প্রশাসনিক আধিকারিকরা ৮৫ বছর আগে মৃত ব্যক্তির শংসাপত্র ইস্যু করতে পারেন কী না,  তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আউশগ্রাম-২ বিডিও সুরজিৎ ভর বলেন,  “এরকম কোনও আইন নেই, যে স্বাধীনতার আগে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর শংসাপত্র এখন দিতে পারা যাবে না। আমরা ডাক্তারের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট দেখে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর শংসাপত্র তাঁর উত্তরসূরিদের দিয়েছি।” পাশাপাশি বিডিও বলেন,  “এনিয়ে মৃতের উত্তরসূরিদের কারও আপত্তি নেই। আপত্তি করছে তৃতীয় পক্ষ। তাঁরা ইচ্ছা করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। আদালতে মামলা করতে পারেন। যদি আমাদের দেওয়া সার্টিফিকেট অবৈধ বলে রায় দেওয়া হয়, তাহলে তা বাতিল করা হবে।”

Advertisement

IMG-20180316-WA0051

Advertisement

গতবছর শেষের দিকে মৃতের উত্তরসূরি পরিবার ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায়। আবেদনে ছিল, নিবারণচন্দ্রের মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-র ১৬ নভেম্বর আউশগ্রাম-২ ব্লক প্রশাসন থেকে নিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ডি ২০১৭,  ১৯-০১৮৪০-০০০০৬২। মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ ১০ মার্চ,  ১৯৩৩। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,  সোয়াই গ্রামের বাসিন্দা শিবশক্তি বন্দ্যোপাধ্যায় নিবারণচন্দ্রের উত্তরসূরি হিসাবে ওই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেন। তাঁকে তা দেওয়াও হয়েছে। শিবশক্তিবাবু জানান, “সঠিক পদ্ধতিতেই ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। আর এক্ষেত্রে পুরোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে।”

নিবারণচন্দ্রের ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যুর পর স্থানীয় বাসিন্দা গুরুদাস মুখোপাধ্যায় এই শংসাপত্রের বৈধতা নিয়ে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ,  যেসব ব্যক্তির সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ওই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, তাঁরা অনেকেই এনিয়ে অন্ধকারে। দ্বিতীয়ত,  যে ডাক্তারি সার্টিফিকেট দাখিল করা হয়েছে, ওই ডাক্তারের কোনও রেজিস্ট্রেশনই ছিল না। যেখানে ১৯৬৯ সালে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ আইন গঠন হয়েছে,  সেখানে ১৯৩৩ সালের মৃত্যুর নিবন্ধীকরণ ২০১৭ সালে কীভাবে হল?  প্রশ্ন তুলেছেন অভিযোগকারী গুরুদাস মুখোপাধ্যায়।

[জনপ্রতিনিধির মানবিক মুখ, অসুস্থ বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভরতি করলেন কাউন্সিলর]

অন্যদিকে চিকিৎসক গোবিন্দপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি পরিবারের সদস্য রণজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়,  প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সাতজন মিলে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। গোবিন্দপ্রসাদের সই জাল করে পুরনো তারিখ দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়েছে। রণজিৎবাবুরা তার সপক্ষে সইয়ের নমুনা দাখিল করেছেন। এই অভিযোগ ওঠার পর অস্বস্তিতে প্রশাসন। বিডিওর অবশ্য যুক্তি, “প্রশাসনের উদ্দেশ্য হল যাঁরা সার্টিফিকেট চাইছেন তাঁরা যেন হয়রানির শিকার না হন। তাই যতটা সম্ভব নিয়ম শিথিল করে সার্টিফিকেট আমরা দিই। সাধারণ মানুষের কাজের সুবিধার্থেই আমরা এটা করি।” অন্যদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা হয়,  এই ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম মানা হয়েছে বলে দাবি বিডিওর। কিন্তু নিবারণচন্দ্রের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে কেন এই টানাপোড়েন?  জানা গিয়েছে, শিবশক্তিবাবুদের সঙ্গে গুরুদাসবাবুদের অনেকদিন ধরেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা চলছে।

ছবি সৌজন্য: ধীমান রায়

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ