নিজস্ব সংবাদদাতা: একই বিছানায় কাঁথা মুড়িয়ে পাশাপাশি শুয়ে দুই ভাই-বোন৷ ভাইয়ের বয়স ৯৷ বোন সবে এগারো পেরিয়েছে৷ দু’জনের দেহেই প্রাণ নেই৷ পাশের ঘরে ওঁদের বাবা-মায়ের ঝুলন্ত দেহ৷ ঋণের দায়ে দুই সন্তানকে মেরে আত্মঘাতী দম্পতি৷ মর্মান্তিক ঘটনা চন্দননগর হরিদ্রাডাঙা এলাকার মদনমোহন কলোনিতে৷ সোমবার দুপুরে এই দুর্ঘটনার কথা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়৷ চন্দননগর থানার পুলিশ এসে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়৷
মৃতদের নাম, সুরজিত মণ্ডল (৩৭), অসীমা মণ্ডল (৩০), স্নেহা মণ্ডল (১১) ও অতনু মণ্ডল (৯)৷ সোমবার দুপুরে সুরজিতের মা বুলু মণ্ডল ও বোন মিনির নজরে আসে বিষয়টি৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সুরজিত পেশায় ফল ব্যবসায়ী৷ চুঁচুড়া স্টেশনে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওভারব্রিজের তলায় বসে ফল বেচতেন৷ কয়েকদিন আগে সুরজিতের হার্ট অ্যাটাক হয়৷ তাঁর শরীরের একটি দিক প্যারালাইজড হয়ে পড়ে৷ বহু চিকিৎসার পরও সেইভাবে সুস্থ করে তোলা যায়নি সুরজিতকে৷ ইতিমধ্যে এক সুদের কারবারির কাছ থেকে প্রায় সাত লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন তিনি৷ রবিবার রাতে টাকার জন্য ওই পাওনাদার বাড়িতে এসে হুমকিও দিয়ে যায়৷ তার পরই এই মর্মান্তিক ঘটনা৷
ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা বারোটা পেরিয়ে একটার ঘরে৷ অন্যান্য দিনের মতোই বাড়িতে সবাই নানা কাজে ব্যস্ত৷ ডাকাডাকির পরও সুরজিত ও তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য ঘরের বাইরে না বেরনোয় সন্দেহ হয় বুলু দেবীর৷ ছেলেকে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায় দরজা ঠেলেন তিনি৷ দরজা ভিতর থেকে ভেজানোই ছিল৷ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি৷ দেখেন, ছেলে ও বৌমা গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে৷ বৃদ্ধা বুলু দেবী ছুটে যান পাশের ঘরে৷ সেখানে দেখেন, খাটের উপর দুই নাতি-নাতনির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে৷ দেহ দু’টির উপর সযত্নে চাপা দেওয়া হয়েছে কাঁথা৷ পুলিশ মনে করছে, গভীর রাতে ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিলেন সুরজিত৷ খুনের পর ছেলে-মেয়ের দেহে যত্ন করে কাঁথা চাপাও দেওয়া হয়৷ এরপর স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একসঙ্গে আত্মহননের পথ বেছে নেন৷
সুরজিতের বোন মিনির অভিযোগ, এক সুদের কারবারির কাছ থেকে প্রায় সাত লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন দাদা সুরজিত৷ টাকার জন্য সেই পাওনাদার ফোনে অকথ্য গালিগালাজ করেছিলেন৷ রবিবার বাড়ি এসে হুমকিও দিয়ে যায় ওই পাওনাদার৷ মিনি জানান, সুরজিত বরাবরই চাপা স্বভাবের৷ এক-দেড় লক্ষ টাকা কোনও জায়গা থেকে ধার করে মেটানোর আশ্বাস দাদাকে দিয়েছিলেন৷ দুই ভাইপো-ভাইঝির এমন মৃত্যুতে দিশাহারা মিনি৷ পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ বাড়ির সদস্যরা৷ এলাকার মানুষের বক্তব্য, হাওড়ার এক সুদখোরের পাল্লায় পড়ে বহু লোকই সর্বস্বান্ত হয়েছেন৷ অনেকেই সর্বস্বান্ত হতে বসেছেন৷ এ ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপ চাইছেন তাঁরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.