Advertisement
Advertisement

Breaking News

বিষ-কাণ্ডে নাম জড়াল শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের

রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে...

Cobra venom worth Rs 400 crore seized in Siliguri,  forest department arrested four persons
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 17, 2016 11:13 am
  • Updated:October 17, 2016 11:14 am

শান্তনু কর: বাংলাদেশ থেকে আনা বিষ ভারতে বিক্রি করে দেওয়া৷ কাজ এটুকুই৷ তাহলেই রাতারাতি কোটিপতি৷ এই ব্যবসায় বিনিয়োগ লাখখানেক টাকা৷ লাখ টাকা লাগিয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে বিষ পাচার চক্রে নাম জড়িয়ে গিয়েছে সমাজের বিশিষ্টজনদেরও৷ শিক্ষক, সমাজসেবী, ঠিকাদার কে নেই৷ সাপের বিষ পাচার কাণ্ডে ধৃত চারজনকে জেরা করে এই তথ্য জানতে পেরে বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জের অধিকারিকদের চক্ষু চড়কগাছ৷ বিষ পাচার চক্র সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে কলকাতা থেকে গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকরা যেমন বেলাকোবা যাচ্ছেন তেমনই ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর অফিসাররাও পৌঁছচ্ছেন৷

গত শনিবার ভোর রাতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি এলাকা থেকে বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জের কর্মীরা গ্রেফতার করে ওই চারজনকে৷ তাদের থেকে উদ্ধার হয় বিষভর্তি পাঁচটি বুলেটপ্রুফ বেলজিয়াম জার৷ আটক হয় একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজও৷ তদন্তে নেমে জানা যায়, বালুরঘাট থেকে সাপের বিষ নিয়ে ক্রেতার খোঁজে জলপাইগুড়িতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক বিষ পাচার চক্রের চার পাণ্ডা৷ এদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর ও একজনের বাড়ি মালদহ৷

Advertisement

পাচারের সিন্ডিকেট: ধরা পড়েছে চার পাচারকারী৷ কিন্তু টিমটা এত ছোট নয়৷ ধৃতদের জেরা করে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বোতল সাপের বিষ কিনে ভারতে বিক্রি করতে ৩০ জনের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল৷ সেই সিন্ডিকেটে যেমন পাচারচক্রে হাত পাকানো কয়েকজন রয়েছে, তেমনই সমাজের প্রতিষ্ঠিত কিছু নামও রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত জানান, ধৃত চারজন বাদ দিয়ে যে ২৬ জনের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নামও রয়েছে৷

Advertisement

কম ইনভেস্টমেন্টে বেশি লাভ: ৩০ মাথার সিন্ডিকেটের কাছে অঙ্কটা খুব পরিষ্কার ছিল৷ প্রত্যেকে ৩ লক্ষ টাকা করে বিনিয়োগ করে পাঁচ বোতল সাপের বিষ এনেছিল বাংলাদেশ থেকে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে এই বিষের মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা৷ কিন্তু চোরাইপথে তো আর এত দাম পাওয়া যাবে না৷ তাই পাঁচ বোতল বিষের দাম তারা রেখেছিল ১০০ কোটি টাকা৷ প্রত্যেকের পকেটে আসবে তিন কোটির কিছু বেশি৷ অর্থাত্‍ তিন লাখে তিন কোটি৷ চোরা কারবারিদের এই টোপ গিলেছে সমাজের পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও৷

কলকাতা হয়ে উত্তরবঙ্গ: বিষ পাচার কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বগুরা থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিষ আসে বালুরঘাটে৷ সেখান থেকে মালদহ হয়ে বিষ চলে যায় কলকাতায়৷ প্রায় মাস খানেক ধরে সল্টলেক, পার্ক স্ট্রিট এলাকায় এই বিষ বিক্রির চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু ঠিক দাম না পাওয়ায় সেই পাঁচ বোতল সাপের বিষ ফিরে আসে উত্তরবঙ্গে৷

চাপে পড়ে ফাঁদে পা: বুলেটপ্রুফ বেলজিয়ামের পাঁচটি জার লুকিয়ে রাখা ক্রমেই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছিল পাচারকারীদের কাছে৷ সব সময় হাতেনাতে পাকড়াও হওয়ার ভয় তো ছিলই৷ তাই বনকর্মীদের টোপ গিলে ফেলে অনায়াসে৷ ৪০০ কোটি টাকার বিষ শেষে ৪০ কোটি টাকায় বিক্রি করতে রাজি হয়ে যায় তারা৷ বিষভর্তি জার নিয়ে তারা হাজির হয় প্রত্যেকে কোটি টাকা পাওয়ার আশায়৷ চারজন হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়৷

জোর জেরা: ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করছেন বন দফতরের কর্মীরা৷ উঠে আসছে কিছু তথ্যও৷ কিন্তু বিষ পাচারকারীরা এত সহজে সবার নাম গড়গড় করে বলে দেবে এমনটা বিশ্বাস হচ্ছে না কারও৷ তাই তদন্তে কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না৷ কলকাতার গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকদের যেমন ডাকা হয়েছে, তেমনই ওয়াল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর অফিসারদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে ধৃতদের জেরা করে পাচার চক্রের জাল গুটিয়ে আনা সম্ভব হবে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ