বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের পাঁচবছরের অভিজ্ঞতা থেকে নেতৃত্ব কোনও শিক্ষাই নেয়নি৷ বিগত কয়েকটি ভোটেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্ব পেয়েছে৷ তাই ভোটে ভরাডুবি হতেই দলবদলের হিড়িক পড়েছে বলে স্বীকার করল আলিমুদ্দিন৷ আগামী রাজ্য প্লেনামের জন্য খসড়া রিপোর্টে পার্টির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তোলা হলেও প্রকাশ্যে তা মানতে চাননি সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্ররা৷ প্রকাশ্যে ভয় ও প্রলোভনকেই দায়ী করেছেন৷ তবে কর্মী নিয়োগে দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন তাঁরা৷ নেতৃত্বের এই প্রবণতা কাটাতে এবার রাজ্য পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পদকমণ্ডলীর সদস্যদেরও স্ক্যানারের নিচে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া রিপোর্টে৷ প্রতি তিনমাস অন্তর তাঁদেরও কাজের মার্কশিট পার্টি তৈরি করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে৷ এমনকী, সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যবস্থাও খসড়া প্রস্তাবে রাখা হয়েছে৷
রাজ্য পার্টির শীর্ষ কমিটি সম্পদকমণ্ডলীতে জায়গা পেলেই হাতির পাঁচ দেখতেন সিপিএম নেতারা৷ সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করতেন নিজেদেরকে৷ এবার তাঁদের পায়েও বেড়ি পরানোর প্রস্তাব করা হল৷ খসড়া রিপোর্টের ১২ নম্বর পাতার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে৷ সেই ভিত্তিতে মার্কশিট তৈরি করা হবে বলে জানান সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য৷ এমনকী, কোনও শীর্ষনেতা কারণ ছাড়া টানা তিনমাস লেভি বকেয়া রাখলে তাঁর সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে রিপোর্টে৷ রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্ব সম্পর্কে যেমন কড়া অবস্থান নেওয়ার কথা রিপোর্টে বলে হয়েছে তেমনই পার্টির সদস্যই নয় অথচ নির্বাচন বা কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেন তাঁদের আরও গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ার নয় নম্বর পাতায়৷ আর যে আধা সক্রিয় সদস্যদের বন্ধুত্ব করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ তবে অনিল বসুর মতো বহিষ্কৃত নেতৃত্ব নিয়মিত পার্টির কর্মসূচিতে হাজির থাকলে তাঁদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি৷
নেতৃত্বের মধ্যে এখনও আয় গোপন করার প্রবণতা রয়ে গিয়েছে৷ ফলে পার্টি প্রাপ্য লেভি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রত্যেক সদস্যকে আয়-ব্যয় এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ রাজ্য কমিটির সদস্যদের দিয়ে এই কাজ শুরু করার প্রস্তাব রয়েছে খসড়ার ১৯ নম্বর পাতায়৷ আবার গণসংগ্রহের অর্থও যে সঠিক সময়ে পার্টি তহবিলে জমা পড়ছে না রিপোর্টে তা স্বীকার করেছেন সূর্যকান্তরা৷ গণসংগ্রহের হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা থেকে যাচ্ছে বলে ১০ নম্বর পাতায় উল্লেখ করেছেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা৷ কঠোর স্ক্রুটিনির মধ্য দিয়ে এই অস্বচ্ছতা রোধের প্রস্তাব করা হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.