নিজস্ব চিত্র
শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: হিংসা রুখে সম্প্রীতির নজির। হিন্দু প্রতিবেশীর বাড়ি আগলে রাখলেন মুসলিমরা! অশান্তির আবহে সামশেরগঞ্জ ব্লকের পূর্ব রতনপুরে ‘স্বাভাবিক’ দৃশ্য। যখন সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্তির আগুনে দিন কয়েক ধরে পুড়েছে সামশেরগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শহর। বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, খুন হানাহানি তখন বিধ্বস্ত পূর্ব রতনপুরের বাসিন্দারা শুধুমাত্র হৃদয়ের কথা শুনেছেন।
মানিক দাস আর সানাউল শেখের গল্প যেন হার মানাবে রূপকথাকেও। সানাউল শেখ ও তাঁর ভাই উকিল শেখের বাড়ির উলটো দিকেই বাড়ি মানিক দাসের। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্তির আগুনে যখন পুড়ছে, তার আঁচ এসে পড়ে বাড়ির কাছেই। কিন্তু আগুন মানিকের চৌকাঠ পেরোতে দেননি সানাউল, উকিলরা। কারণ, হিন্দু-মুসলিম ভেবে তো তাঁরা কখনও একসঙ্গে থাকেননি। তাঁদের পরিচয়, তাঁরা প্রতিবেশী। তাই আগাগোড়া বন্ধু মানিকের পাশে থেকেছেন সানাউলরা।
মানিক জানাচ্ছেন, “আমার বাড়িতে হামলা করতে আসে বেশ কিছু বহিরাগত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। পরিবার নিয়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” সেই খবর পাওয়া মাএ মানিকের বাড়ি আক্রমণ থেকে বাঁচাতে প্রাৎণের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধাবোধ করেননি সানাউল ও তাঁর ভাই উকিল শেখ। দাঙ্গাবাজদের সরিয়ে দিতে তাঁরা সক্ষম হলেও কিছুক্ষণ পর আবার অস্ত্র নিয়ে চরাও হয় তারা। সানাউল শেখ বলেন, “সেই সমস্ত বহিরাগতদের প্রথমে বহু কষ্টে সরানোর পর আবার দেখি কিছুক্ষণ পর অস্ত্র নিয়ে হাজির ওরা। ওদের বলি শান্তিতে থাকতে দে। আমরা হিন্দু-মুসলমান যুদ্ধ চাইছি না। ওদের বাড়ির তরকারি আমরা খাই। আমাদের খাবার ওরা খায়। আমরা কোনও ভাবেই ওদের উপর হামলা হতে দেব না। বারবার তাড়াচ্ছি তাও চলে আসছিল। সকলে মিলে আমরা রুখে দাঁড়ালে ওরা পালিয়ে যায়।”
বছর পয়ষট্টির ইন্দ্রজিৎ সাহা জানান, “পূর্ব রতনপুরে প্রায় ৮৫ শতাংশ মুসলিম পরিবার বাস করেন। হিন্দু ১৫ শতাংশ। আমরা খুব শান্তিতে আছি। একসঙ্গে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করি। সুখে শান্তিতে আছি। এখানে কোনও ঝামেলা নেই। পুজোর সময় আমরা ওদের নিমন্ত্রিণ করি। ইদে আমাদের নিমন্ত্রণ করে। আমরা বিভেদ বুঝিনা। সেই রীতি বজায় রেখে এই অস্বস্তি রক্ষার লড়াইয়ে ওরা আমাদের বুকে আগলে রেখেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.