অর্ণব আইচ: খুনিকে চিনি। খুনির বাড়ি চিনি। তার পরিচয় জানি। কিন্তু খুনি উধাও। গত ১৮ বছর ধরে তন্নতন্ন করে খোঁজ চালিয়েও মেলেনি তার সন্ধান। একটি বছর আটেকের শিশুকে হোটেলের ঘরের মধ্যে খুন করে উধাও হয়ে গিয়েছিল সেই খুনি। তাকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত অনেকটা হতাশ হয়েই থেমে গিয়েছিল পুলিশ। পুলিশমহলেই প্রশ্ন উঠেছিল, এতদিন ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেড়িয়েছে, এ কেমন খুনি?
১৮ বছর পর সেই খুনিকে ধরার উৎসাহ জোগালেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। বুধবার কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তা, থানার ওসি ও গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠকে পুলিশ কমিশনার পলাতক সেই খুনিকে খোঁজার নির্দেশ দিলেন। এদিন এই বৈঠকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ‘ক্লাস’ নিলেন ওসিদের। এখন লালবাজারে তৈরি হয়েছে ফরেনসিকের নতুন ইউনিট। যে কোনও অপরাধ ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এবার থেকে প্রত্যেকটি ট্রাফিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করবেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এদিন উঠে আসে টালিগঞ্জে অভিনেতা বিক্রমের গাড়ির দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ। নতুন মডেলের বিভিন্ন গাড়ি থেকেও দুর্ঘটনা সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতে, যে কোনও অপরাধ বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে হয়তো কোনও সূত্র পুলিশের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে, যা ধরা পড়তে পারে ফরেনসিকের চোখে। তাই প্রত্যেকটি ঘটনার ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে ফরেনসিকও। ফেব্রুয়ারিতে ওয়াটগঞ্জ, রাজাবাগান ও জোড়াবাগানে হওয়া তিনটি খুনের কিনারা নিয়ে এদিন আলোচনা করেন পুলিশ কমিশনার।
১৮ বছর আগের খুনটির প্রসঙ্গে বলা হয়, ২০০০ সালে মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকোর একটি হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় গোপী সিং নামে এক বালকের দেহ। জানা যায়, বিজয় সিং নামে এক যুবক তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে উঠেছিল ওই হোটেলের ঘরে। পরের দিনই বালকের দেহ মেলে ঘরের বিছানায়। উধাও হয়েছিল বিজয় সিং ও বাকিরা। জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দারা যৌথভাবে তদন্ত করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পান। জানা যায়, বিজয় সিংয়ের আসল নাম অলোক দেবনাথ। তার বাড়ি নদিয়ার রানাঘাটে। ব্যবসাসূত্রে প্রায়ই কলকাতায় আসত সে। যাতায়াতের পথেই তার সঙ্গে আলাপ হয় এক বাংলাদেশি যুবতীর সঙ্গে। ওই বাংলাদেশি যুবতী এক পাঞ্জাবি যুবককে বিয়ে করেছিল। দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়। সেই ছেলেটির নামই গোপী। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ওই বাংলাদেশি যুবতী অলোকের সঙ্গে থাকতে শুরু করে। অলোকের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশিও করেছিল। কিন্তু মেলেনি তার হদিশ। সে বাংলাদেশে পালিয়েছে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি গোয়েন্দারা। পুলিশ কমিশনার এদিন প্রত্যেক আধিকারিককে নির্দেশ দেন, নিজেদের সূত্রের সাহায্যে ওই খুনির সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করতে। অপরাধের কিনারার ক্ষেত্রে থানার ভূমিকাও অত্যন্ত জরুরি বলে আধিকারিকদের বলেন পুলিশ কমিশনার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.