অভিরূপ দাস: পায়ুদ্বারে বজ্র আঁটুনির জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পটি। লজ্জায় কাউকে কিছুই বলতে পারছিলেন না মালদহের রফিকুল। দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে পায়ুদ্বারে অসহ্য যন্ত্রণা। এইরকম মরণাপন্ন অবস্থা থেকে তাঁকে বাঁচাল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকরা।
কী এমন বজ্র আঁটুনিতে, রফিকুলের পটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? শুনলে চমকে উঠবেন। জিনিসটা হল হ্যান্ড শাওয়ারের ঢাকনা। কিন্তু কী করে পায়ুদ্বারে ওই জিনিস ঢুকল, তা ভেবে পাচ্ছেন না এসএসকেএম সার্জারি বিভাগের (ইউনিট-৫) প্রধান অভিমন্যু বসু। তিনি তখন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান। রফিকুলকে যখন সেখানে আনা হয় তখন তাঁর অবস্থা রীতিমতো খারাপ। তিনদিন ধরে পায়খানা বন্ধ। সঙ্গে অসহ্য ব্যথা। রোগীকে অজ্ঞান করে পায়ুদ্বারে চোখ রাখতেই আঁতকে উঠেছিলেন ডাক্তার বসু। “প্রথমে হাত দিয়ে শক্ত শক্ত কী একটা লাগছিল। তখনও বুঝতে পারিনি। পায়ুদ্বারের জায়গাটা এমন থাকে, যে চট করে ভিতরে কী আছে দেখা যায় না। মলত্যাগ করার সময়ই তা নজরে আসে। অ্যানাস্থেসিয়া করে পায়ুদ্বারটা চওড়া করতেই দেখি কালো মতো কী একটা ঢুকে আছে।”
এখনও সে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডাক্তার বসুর চোখ বড় হয়ে ওঠে। মুম্বইয়ের বেসরকারি হাসপাতালে যে সমস্যার সমাধান হয়নি তার জট ছাড়িয়েছিল মফস্বলের সেই মেডিক্যাল কলেজই। বিরলতম ঘটনা বললেও কম বলা হয়। চিকিৎসকের কথায়, “এমনটা যে হতে পারে আমিও ভাবতে পারি না।”
রফিকুল জরির কাজ করতেন মুম্বইয়ে। চার বন্ধু মিলে থাকতেন একটি আবাসন ভাড়া করে। আচমকাই পায়খানা বন্ধ হয়ে যায় রফিকুলের। বন্ধুরা বাড়ি ফিরে দেখে, কাজ থেকে ফিরে চুপচাপ বসে আছে রফিকুল। জানতে চাইলেও মুখ ফুটে বলেননি কিছু। রফিকুলের বন্ধুরা জানিয়েছেন, এমন একটা জায়গায় ব্যথা করছিল যে ও দেখাতে লজ্জা পাচ্ছিল। ওই অবস্থাতেই ট্রেনে করে মালদহে ফিরে আসেন রফিকুল। সঙ্গে ছিলেন বন্ধুরাও। এরপর মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তিনি। বাড়ির লোক ততদিনে হাজারবার জিজ্ঞাসা করেও উত্তর পায়নি। রফিকুল শুধু বলেছিলেন, “পায়খানা হচ্ছে না আমার। অসুবিধে হচ্ছে।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজই জট ছাড়াল রহস্যের। পায়ুদ্বার থেকে বেরল হ্যান্ড শাওয়ারের ঢাকনা। ডাক্তার বসু জানিয়েছেন, কমোডের পাশে যে হ্যান্ড শাওয়ার থাকে তারই ঢাকনা ঢুকে বসেছিল পায়ুদ্বারে। সে কারণেই মলত্যাগ করতে পারছিল না ওই যুবক।
কিন্তু কীভাবে শাওয়ারের ঢাকনা ঢুকল পায়ুদ্বারে? সেটা ভেবেই ডাক্তারবাবুরা থই পাচ্ছেন না। কেউ বলছেন, এমনটা হতে পারে হ্যান্ড শাওয়ারের সঠিক ব্যবহার জানতেন না ওই যুবক। জোর করে তা পায়ুদ্বারের মুখে চেপে ঢোকাতেই ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল শাওয়ারের ঢাকনা। ডাক্তার বসু জানিয়েছেন, “অনেক সময় মজা করতে গিয়েও এমনটা হতে পারে। খেলার ছলেই হয়তো পায়ুদ্বারে শাওয়ারটা চেপে ঢুকিয়েছিল। কিন্তু তাতে এমন বিপত্তি ঘটবে বুঝতে পারেনি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.