স্টাফ রিপোর্টার: তোলাবাজির অভিযোগ ছিল সল্টলেকের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ, কাউন্সিলরের ‘হাত পাতার’ জের রীতিমতো অত্যাচার হয়ে দাঁড়িয়েছিল সল্টলেকের ওই এলাকার মানুষের কাছে৷ তাই অনিন্দ্যকে গ্রেফতার করিয়ে রাজ্যজুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, “কাজের বিনিময়ে কেউ টাকা চাইলেই পুলিশকে জানাতে হবে৷ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া কাউন্সিলর-সহ সব জনপ্রতিনিধির কাজ৷ নিঃস্বার্থভাবে সেই কাজ করে যেতে হবে৷”
দল নির্বিশেষে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান যেভাবে রাজধর্ম পালন করলেন, সেই পথেই শুরু হয়ে গেল অনিন্দ্যর সহযোগী এবং যে প্রভাব খাটিয়ে অনিন্দ্য এই কাজ করার সাহস পেত, তার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখার তদন্ত৷ রাজ্যজুড়ে এমন তোলাবাজির অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বারবার এসেছে৷ কাদের প্রশ্রয়ে কোন কোন সহচরের সঙ্গে এই কাজে হাত পাকিয়েছেন রাজ্যের অভিযুক্ত কাউন্সিলররা, খতিয়ে দেখা শুরু হয়ে গেল তাদের ইতিহাসও৷
তোলাবাজির অভিযোগে ধৃত অনিন্দ্য এখন দমদমে সেন্ট্রাল জেলের কয়েদি৷ নিজেদের হেফাজতে আর তাকে নিতে চায়নি পুলিশ৷ জানিয়েছে, গ্রেফতারির দিন ভোর থেকে জেরার মুখে যে যে তথ্য বা নাম জানিয়েছে কাউন্সিলর, তা-ই যথেষ্ট৷ এখন শুধু সেইসব নাম খতিয়ে দেখার পালা৷ একইসঙ্গে তথ্য যাচাইয়ের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে৷ সেই সমস্ত তথ্যের মাধ্যমেই তার সহযোগীদের কার্যকলাপ ও প্রক্রিয়া পড়েছে তদন্তের মুখে৷ ফলে দীর্ঘদিন অনিন্দ্যর সহযোগী বা সহযোগী নয়, এমন অনেককেই যে কোনও মুহূর্তে পড়তে হতে পারে পুলিশি তদন্তের মুখে৷ অভিযোগে তাঁর বা তাঁদের নাম জড়ানোর প্রমাণ মিললে সাজা হবে তাঁদেরও৷
অনিন্দ্যর ক্ষেত্রে একেবারে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷ খবর মিলেছে, অনিন্দ্য একা ছিল না৷ তবে আর কাদের যোগ ছিল অনিন্দ্যর এই কাজে? কমিশনারেট সূত্রে খবর, অনিন্দ্যর কল-লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ সঙ্গে খোঁজ চলছে তাঁর আয়-ব্যয়ের হিসাবের৷ হিসাব নেওয়া হচ্ছে কাউন্সিলরের ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টেরও৷ কাদের ছত্রছায়ায় থেকে অনিন্দ্য এই ধরনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল, পুলিশের পাশাপাশি প্রথমেই সেই তদন্ত সেরে রাখছে দলও৷
তৃণমূল সূত্রে খবর, অন্তর্তদন্তে ইতিমধ্যে একাধিক সূত্র পেয়েছে দল৷ তাদের কাছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তাও পৌঁছে গিয়েছে৷ দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই মমতা যে কড়া হাতে দল ও প্রশাসন সামলাবেন, বার্তা গিয়েছে তারও৷ জানা গিয়েছে, প্রাথমিক খোঁজখবর শেষ করেই তার সূত্র জানানো হবে পুলিশকেও৷ আর দল বা প্রশাসনের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনওভাবে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির প্রমাণ মিললে শাস্তির খাঁড়া নামবে তার ঘাড়েও৷ পুলিশ জানিয়েছে, অনিন্দ্য যাতে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনওভাবে তদন্ত ‘ট্যাম্পার’ বা প্রভাবিত করতে না পারে, সেটা আটকাতেই একেবারে আচমকা জেলে পাঠানোর আর্জি জানানো হয়েছিল৷ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছেন, “দলের নির্দেশই শিরোধার্য৷ শীর্ষ নেতৃত্বের কথা শুনেই দল চলবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.