শুভময় মণ্ডল: সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে রাজ্য সরকারে দৌলতে রাজারহাটের ইকো পার্কে স্থায়ী ঠিকানা পেতে চলেছে কার্যত এবছরের ‘বিস্ময় প্রতিমা’ সন্তোষপুর লেকপল্লির সোনার দুর্গা৷ তবে সবই আলোচনা স্তরেই রয়েছে৷ লেকপল্লি পুজো কমিটির কর্তারা চাইছেন, তাদের এই প্রতিমা যেন পূর্ণ মর্যাদা পায়৷ প্রায় সাড়ে চার টন ওজনের বেলেপাথরের এই প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছিল ২২ ক্যারেটের সোনা৷ শহরের প্রখ্যাত শিল্পী শুভমিতা দিন্দার সৃজনে গড়ে উঠেছিল এই সোনার দুর্গা৷
সূত্রের খবর, উদ্বোধনের সময়ই কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সোনার দুর্গা দেখে৷ তখনই তিনি ক্লাবকর্তাদের কাছে এই প্রতিমা সংরক্ষণের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন৷ তাঁর ইচ্ছা ছিল, তিনি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করবেন যাতে এই সোনার দুর্গা সংরক্ষণ করা যায়৷ এই বিষয়ে লেকপল্লি পুজো কমিটির আপত্তি নেই৷ তবে তাদের একান্ত আবেদন, ইকো পার্কের উল্টোদিকে মাদার ওয়্যাক্স মিউজিয়ামের ভিতরে যদি এই প্রতিমা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে খুব ভাল হয়৷ সেই আবেদন কতটা রাখবে রাজ্য সরকার তা পরে জানা যাবে৷ তবে ক্লাবকর্তারাও বিভিন্ন ইচ্ছুক ব্যক্তি, কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে যাতে প্রতিমার যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়৷ কোনও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াই তারা চাইছেন শিল্পীর এই অনবদ্য সৃষ্টি পরবর্তী প্রজন্মও চাক্ষুষ করুক৷ তাদের মণ্ডপসজ্জাও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল সবমহলে৷ সেইজন্য একটি বেসরকারি সংস্থা শিল্পী অদিতি চক্রবর্তীর সৃজনে গড়ে ওঠা মণ্ডপের বেশ কিছু সামগ্রী ভিনদেশে পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ তবে সেটাও আলোচনাস্তরেই রয়েছে৷
শুধু লেকপল্লিই নয়, শহরের এমন বহু খ্যাতনামা পুজোর প্রতিমা ও মণ্ডপ পাড়ি দিচ্ছে ভিনরাজ্যে ও দেশে৷ যেমন এবছর বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হওয়া শিবমন্দির সর্বজনীনের কাঠের মণ্ডপ পাড়ি দিচ্ছে রাজস্থানে৷ শিল্পী বিমল সামন্তর সৃজনে এবারের থিম ছিল চৌখুপি৷ তাঁরই ভাবনায় গড়া নিমকাঠের প্রতিমাও ইউরোপের এক দেশের মিউজিয়ামে স্থায়ী আস্তানা পেতে চলেছে৷ এই মিউজিয়ামেই এক বেসরকারি ভ্রমণসংস্থার সৌজন্যে গতবছরের ভবানীপুর অবসর সর্বজনীনের প্রতিমা স্থান পেয়েছিল৷ এবার শিবমন্দিরের প্রতিমার ইউরোপ যাত্রা শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ দক্ষিণ কলকাতার আরও বিখ্যাত পুজো ৬৬ পল্লির রেখায় রেখায় তিলোত্তমা এবার পুজোপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে৷ শিল্পী পূর্ণেন্দু দের সৃজনে এবার থ্রি-ডি পেন্টিংয়ে পুরনো কলকাতা ফুটে উঠেছিল এই মণ্ডপে৷ এবার সেই মণ্ডপসজ্জাই পাড়ি দিচ্ছে চন্দননগরের এক জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপে৷ শুধু তাই নয়, এই পুজোর উদ্বোধন করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোক্তাদের জানিয়েছিলেন, মণ্ডপের কাজ ও সাবেকি প্রতিমা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন৷ এই পুজোকে কোনওভাবে যাতে সংরক্ষণ করা যায় তা তিনি ভেবে দেখবেন৷ জানা গিয়েছে, মণ্ডপের ভিডিও ও ছবি রাখা হবে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সংরক্ষণশালায়৷ তবে সবই আলোচনাস্তরেই রয়েছে৷ শহরের এমন বহু পুজোর থিমই এবার কালী পুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য ব্যবহৃত হতে চলেছে৷ উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস, এইভাবে যেমন শিল্পীর শিল্প মর্যাদা পাবে তেমনই যাঁরা দুর্গা পুজো চাক্ষুষ করতে পারেননি তাঁদের জন্য একবার ফের সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরা যাবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.