বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: ‘হিট অফ দ্য মোমেন্টে অনেক কিছু বলে দেওয়া হয়। তবে সবারই ভাষা সংযত করা উচিত।’ এমনই মন্তব্য করলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তিনি এও বললেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা সন্মান করি, শ্রদ্ধা করি। সবাইকেই ভাষা সংযত করে কথা বলা উচিত। ‘পাঁচন’ দাওয়াই, ‘নকুলদানার’ মতো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে বিতর্কে জড়িয়ে নির্বাচন কমিশনের নজরদারিতে যার নাম শীর্ষে, সেই অনুব্রত মণ্ডল বললেন এই কথা। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পায়ের বদলে বুকে গুলি করতে, মহিলাদের বঁটি নিয়ে বের হওয়ার কথা বলা নিয়ে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে অবশ্য নিজের ঢঙ্গেই মন্তব্য করেন অনুব্রত। সাংবাদিকদের কাছে এই বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া, ‘ওটা একটা পাগল। ওর মাথার চাঁদিটা এত গরম হয়ে যাচ্ছে এই রোদে। মাথায় চুল নাই তো। তাই কী বলবে ঠিক করতে পারছে না। ওর যদি মাথায় চুল থাকত, তাহলে এসব বলত না। অটোমেটিক্যালি মাথাটা এত গরম হয়ে যাচ্ছে ওর, কখন কী বলতে হবে, নিজেই জানে না।’ যদিও অনুব্রত বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কার বুকে গুলি মারবে, সেটা নিজেরা বুঝুক। ২৩ তারিখ বুঝতে পারবে।’
বুধবার নদিয়ার ধানতলার দত্তপুলিয়ায় রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রূপালী বিশ্বাসের সমর্থনে জনসভা করতে এসেছিলেন এই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল। জনসভায় ভাষণ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দিলীপ ঘোষ বলেছেন, এক চোখ দেখালে দু চোখ দেখাতে। কী বলবেন? উত্তরে অনুব্রত বলেন, ‘পাগল। কোনও জায়গায় যাওয়ার ক্ষমতা নেই, শুধু ঘরে বসে বসে লেকচার মারে। বীরভূমে মিটিং করতে গিয়ে পালিয়ে এসেছিল ভয়ে। ওটা আবার লিডার নাকি।’ যদিও ইদানিং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভাষার অপব্যবহার নিয়ে জানিয়েছেন নিজের মত। বললেন, ‘অ্যাকচুয়ালি হিট অফ মোমেন্টে বলে দেওয়া হয়। তবে ভাষা সংযত করাই উচিত। ভাষা ঠিক করেই বলা উচিত। নির্বাচন কমিশনকে আমরা সন্মান করি, শ্রদ্ধা করি।’ যদিও নিজের ভাষা নিয়ে তিনি অনুতপ্ত কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও বলেন, ‘সবাই, সবাই।’ নিজেও যে বেশ কিছু আলপটকা মন্তব্য করে অনুতপ্ত, অন্তত তাঁর এই কথা থেকে সেটাই অনুমান করা যায়।
[আরও পড়ুন: ‘সফল হলে আজও রাজনীতিতে থাকতাম’, অকপট স্বীকারোক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর]
এদিন নির্বাচনী প্রচার সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিতে ছাড়েননি তিনি। মোদিকে চরম মিথ্যাবাদী বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার জন্য মানুষকে ১৫ লক্ষ টাকার গল্প এবং বেকার যুবকদের জন্য ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিথ্যাবাদী মোদি। বিগত পাঁচ বছরে তার কোনওটাই পূরণ করতে পারেনি। গঙ্গা নদীকে স্বচ্ছ করবে বলে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। ওর ছোঁয়ায় গঙ্গা এখন অপবিত্র।’ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বলেন, ‘আর আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখুন। বামেরা যা ৩৪ বছরে করতে পারেনি তা বিগত সাত বছরে করে দেখিয়েছেন।’ উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে অনুব্রত বলেন, ‘আপনারা এমন উন্নয়ন আগে কখনও দেখেছেন? নতুন প্রজন্মের জন্য যুবশ্রী থেকে স্কুল ছাত্রীদের জন্য কন্যাশ্রী। কন্যাশ্রী আজ বিশ্ববন্দিত। বিশ্বের মধ্যে পরপর দুবার প্রথমস্থান লাভ করেছে পশ্চিমবঙ্গ। কন্যাশ্রী প্রকল্পে প্রচুর ছাত্রীরা উপকৃত হয়েছে। যাদের টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছে না, তাদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলেছে।’ সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে অনুব্রত আরও বলেন, ‘এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস বাদে বাকিরা যেন একটিও ভোট যেন না পায়। তৃণমূল প্রার্থী রুপালি বিশ্বাসকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করানোর আর্জি জানান তিনি। এদিন নির্বাচনী সভায় অনুব্রত মণ্ডল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, রানাঘাট (তপ:) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস, জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশংকর দত্ত, মন্ত্রী রত্না ঘোষ কর, বিধায়ক সমীর পোদ্দার এবং রানাঘাট কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ তাপস মণ্ডল প্রমুখ।
[আরও পড়ুন: ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ফেলে দেওয়া ওষুধ’, অনুপমকে তীব্র কটাক্ষ মিমির]