Advertisement
Advertisement

বাঙালি জঙ্গি সিদ্ধার্থকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীর তকমা আমেরিকার

চেনেন এই জঙ্গিকে? জানেন কেন সিদ্ধার্থকে 'নয়া' জেহাদি জন বলা হয়?

Bengal terrorists dubbed the new 'Jihadi John' on US terror list
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 25, 2018 3:04 am
  • Updated:January 25, 2018 3:08 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইসলামিক স্টেটের ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি জঙ্গি ব্রিটেনের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ ধরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীর তকমা দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সিদ্ধার্থ ধরের সঙ্গে মরোক্কান বংশোদ্ভূত বেলজিয়ামের নাগরিক অপর এক আইএস জঙ্গিকেও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদীর তকমা দেওয়া হয়েছে। এই দ্বিতীয় আইএস জঙ্গির নাম আবদেল লতিফ গনি।

সিদ্ধার্থ ধর অতীতে একজন ব্রিটিশ হিন্দু ছিল। পরে প্রেমিকার অনুরোধে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। নিজেকে জেহাদে উদ্বুদ্ধ করতে সে একটা সময় নিয়মিত লন্ডনের দুই মৌলবির কাছে যাতায়াত করত। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নাম হয় আবু রুমায়েশ। ২০১৪ সালে ব্রিটিশ পুলিশের নজর এড়িয়ে সে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সিরিয়া পাড়ি দেয়।

Advertisement

[যৌনদাসী বানাতেই তরুণীকে অপহরণ জঙ্গি সিদ্ধার্থর]

নিহাদ বরাকাত নামের এক ইয়েজিদি কিশোরী একটি সাক্ষাৎকারে জানায়, ২০১৬ সালের মে মাসে তাঁকে অপহরণ করে আইএস জঙ্গিদের হাতে বেচে দেয় সিদ্ধার্থ। তাঁকে আইএস জঙ্গিরা যৌনদাসী করে রেখে ছিল। সেই নিহাদই জানায়, সিদ্ধার্থ আগে মসুলে থাকত, পূর্বে ইরাকের এই জায়গাতেই ছিল আইএস জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি। ভয়ঙ্কর আইএস জঙ্গিরা নিরপরাধ মানুষদের ‘অ-মুসলমান’ তকমা দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে, হাত-পা কেটে, মাথা কেটে, আগুনে ঝলসিয়ে হত্যা করত। গত চার বছরে এভাবে দশ থেকে বারো হাজার মানুষকে হত্যা করেছে আইএস জঙ্গিরা। এই রকম একাধিক কুকর্মে সরাসরি জড়িত ছিল সিদ্ধার্থ ওরফে আবু রুমায়েশ।

Advertisement

পরে বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্যে সিদ্ধার্থ ধরকে ‘নয়া’ জেহাদি জনের নাম দেওয়া হয়। সিদ্ধার্থ পরে আইএস-এর সিনিয়র কম্যান্ডার হয়ে যায়। সিদ্ধার্থ ধর ছাড়া আবদেল লতিফ গনি নামের অপর এক জঙ্গিকেও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদীর তকমা দেওয়া হয়েছে। এদের দুজনকে এই তকমা দেওয়া হল, কারণ এই দুই জঙ্গি বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। মার্কিন বিদেশ বিভাগ জানিয়েছে, এই তকমা তাদের দেওয়া হয়, যারা মার্কিনদের নিরাপত্তার জন্যে বিশেষ বিপজ্জনক। এধরনের জঙ্গিদের থেকে মার্কিন নাগরিকের নিরাপত্তা, আমেরিকার বিদেশনীতি, অর্থনীতির ধাক্কা খাওয়ার বিশাল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া এই তকমা পাওয়া জঙ্গিদের সাধারণত কোনও রকমভাবেই সাহায্য করা হয় না। মার্কিন প্রশাসনের অধিকারে থাকা তাদের সম্পত্তি এবং তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের লেনদেনের ওপরও বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গ্লোবাল টেররিস্ট লিস্টের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে সিদ্ধার্থ ধর এবং আবদেল লতিফ গনি। তাদের নামে সম্পত্তি ও বাজেয়াপ্ত হবে। পাকিস্তান মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদকেও এই তকমা দিয়েছে আমেরিকা। এতে আর্থিক দিক দিয়ে চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছে হাফিজ ও জামাত-উদ-দাওয়া।

তাহলে পুরনো ও আদি জেহাদি জন কে?

জেহাদে উদ্বুদ্ধ জন তথা জেহাদি জনের আসল নাম মহম্মদ এমওয়াজি। আরব বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। গুগলে সার্চ দিলেই কালো টুপি পরা থুতনিতে হাল্কা দাড়িওয়ালা যে সুঠাম চেহারার যুবকের ছবি দেখা যায় সেই’ই হল জেহাদি জন। ১৯৮৮ সালে কুয়েতের আল জাহারা শহরে জন্ম। মার্কিন বিমান হামলায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে সিরিয়ার রাকা শহরে শাহাদাত বরণ করে (শহিদ হয়) এই আইএস জঙ্গি নেতা। জেহাদি জনকেই গুরু মেনেছিল সিদ্ধার্থ। এর জন্য তার নাম হয় ‘দ্বিতীয় জেহাদি জন’।

এবার আসা যাক সিদ্ধার্থর কথায়। দেখে নেওয়া যাক তার কুকীর্তির খতিয়ান:

বাঙালি তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সিদ্ধার্থ ধর। লন্ডনেই জন্ম, বড় হওয়া এবং পড়াশোনা প্রবাসী বাঙালি পরিবারের ছেলে সিদ্ধার্থ ধরের। পারিবারিক ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে সে নানা রকম জেহাদি কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছিল বলে ব্রিটিশ পুলিশের দাবি। তবে বাংলায় বা হিন্দিতে কথা বলতে পারে না। ইংরেজি, উর্দু, আরবিতে পরিষ্কার কথা বলে।

terrorist-sid-web

হিন্দু বাঙালি হলেও মুসলিম প্রেমিকার চাপে বিয়ের আগেই সে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। তারপর কট্টর মৌলবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়। নাম নেয় আবু রুমায়েশ। শিখে নেয় আরবিটা। পুত্র সন্তানের জন্মের পরই লন্ডন থেকে তুরস্ক হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সিরিয়া চলে যায় ইসলামিক স্টেটের হয়ে লড়তে। সিরিয়ার সরকারি সেনা, রাশিয়ার সেনা, মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দেয়। নিজগুণে দ্রুত সে আইএসের কম্যান্ডার হয়ে ওঠে।

[ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি সত্যি করে পাকিস্তানে ব্যাপক বোমাবর্ষণ আমেরিকার, খতম হাক্কানি জঙ্গি]

২০১৬ সালে পাঁচ পণবন্দিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস। সেখানে দেখা যায়, বালাক্লাভা এবং কালো শেরওয়ানি পরে এক ব্যক্তি বন্দিদের গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছে। ক্যামেরার দিকে সে বার বার স্টিলের চকচকে ছোরা হাতে আমেরিকা, রাশিয়া ও ব্রিটেনকে গালাগাল করছে।

ব্রিটিশ সামরিক গুপ্তচর সংস্থা এমআই-ফাইভ, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ পরে জানায়, মুখোশ পরা ওই ব্যক্তিই পলাতক জঙ্গি আবু রুমায়েশ।

পাঁচ ‘ব্রিটিশ চর’কে খুন করার যে ভিডিও আইএস প্রকাশ করেছিল, সেই ভিডিওর অডিও ক্লিপটি প্রথমে শোনানো হয়েছিল সিদ্ধার্থের বোন কণিকা ধরকে। তিনি ভাইয়ের গলা চিনে নিয়েছিলেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ