Advertisement
Advertisement

Breaking News

মাদ্রিদের অধীন নয়, বার্সেলোনার স্বপ্নে স্বাধীনতা

এখনও বার্সেলোনা মাদ্রিদের নেতৃত্ব মানতে নারাজ।

Defying Madrid, Barcelona's quest for identiy continues। Sangbad Pratidin
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:September 21, 2023 8:38 am
  • Updated:September 21, 2023 8:38 am

কুণাল ঘোষ,মুখ‌্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী: কেন্দ্র বনাম আঞ্চলিকতার লড়াই যে দুনিয়ার নানা জায়গাতেই বড়সড় সমস্যা, তা এখনও স্পষ্ট এই স্পেনে। এখনও বার্সেলোনা মাদ্রিদের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। আর বার্সেলোনাকে ঘিরে স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি এখানে বাজার গরম করে রেখেছে। রাজনৈতিক, সামাজিক লড়াইটা ফুটবলেও রিয়াল মাদ্রিদ বনাম এফ সি বার্সেলোনার সংঘাতে পরিণত হচ্ছে। ২০১৭-১৮র মতো উত্তাল আন্দোলন, সেনা বা পুলিশ দিয়ে দমন-পীড়ন হয়তো এখন চলছে না, কিন্তু বিভেদ শিকড়ে। পুরো ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। শিল্পসম্মেলনে বার্সেলোনার অন্যতম কর্তা জোসিন্টো সোলেন ম্যাসুটেসও বলেই ফেললেন, “আপনারা ঠিক জায়গায় এসেছেন। স্পেনের অধিকাংশ শিল্প, উন্নতি, জিডিপি, সব তো এদিক থেকেই। আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব।”

এটাই আসলে গোড়ার কথা। শিল্প, কর্মসংস্থান, সমৃদ্ধিতে এগিয়ে ক‌্যাটালোনিয়া কিছুতেই মাদ্রিদের বশ্যতা স্বীকার করে থাকতে চাইছে না। অতীতে অনেকটা স্বায়ত্তশাসন আদায় হয়েছিল। মাদ্রিদ নিয়ন্ত্রিত স্পেন তা দুরমুশ করে দিয়েছে। ক‌্যাটালোনিয়া চায় স্বাধীনতা। মাদ্রিদ চায় অখণ্ড স্পেন। বহু অশান্তির পর আপাতত জোড়াতালি চলছে। একটি ভোটে স্বাধীনতা গরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু, ভোটদাতার সংখ্যা ছিল কম। আবার, অবাধ গণভোট হলে স্বাধীনতাপন্থীরাই জিতবে, এমন হাওয়া জোরদার। তবে আন্দোলনের সময় যেভাবে দমনপীড়ন, ধরপাকড় হয়েছিল, তাতে রাতারাতি ফের বড় আন্দোলন কঠিন। কিন্তু সেই আন্দোলন তো চুপ করে বসে নেই। চেহারা পাল্টেছে। যেমন, মাদ্রিদে সবাই স্প্যানিশে কথা বললেন। সর্বত্র। ইংরেজি বলছেনই না। দোকানবাজারে, ট্যাক্সিতে অসুবিধে হচ্ছিল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: স্পেনে বসেই অরূপ বিশ্বাসের পুজো সুরুচি সংঘের থিম সং লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী, সুরও দিলেন নিজেই]

এমনকী, শিল্পসম্মেলনেও ওঁদের তিন কর্তা স্প্যানিশে বললেন। দোভাষীর অনুবাদে বুঝতে হচ্ছিল। আর বার্সেলোনায় প্রায় সবাই ইংরেজি বলছেন। স্প্যানিশ কার্যত নেই। শিল্পসম্মেলনেও তিন কর্তা ইংরেজিতেই মূলত বললেন। রাস্তার দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা ক‌্যাটালোনিয়া। স্পেনের পতাকার পাশাপাশি কোথাও কোথাও ক‌্যাটালোনিয়ার পতাকা। অর্থাৎ ক‌্যাটালোনিয়া প্রদেশের স্বতন্ত্র উপস্থিতি জাগিয়ে রাখতে এঁরা অবিচল। তবে এতে অবশ্য বাংলার শিল্প অভিযানের কোনও চিন্তা নেই। এঁরা অতি পেশাদার। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্য ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি চান না। সেটা কথায় কথায় বলেও দিচ্ছেন। ক‌্যাটালোনিয়া ২০১৮ সালে একবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেও দিয়েছিল। তখন তুলকালাম হয়। স্পেন প্রশাসন তা উড়িয়ে দেয়। ইউরোপের অন্য দেশগুলিও বলে দেয় তারা অখণ্ড স্পেনকেই স্বীকৃতি দেবে। আলাদা দেশ হিসাবে ক‌্যাটালোনিয়াকে মানবে না। তাছাড়া এই প্রদেশেও মতপার্থক্য ছিল। অধিকাংশ স্বাধীনতা চাইলেও একাংশের মতে ছিল সেটা ঐতিহাসিক ভুল। তবে তাঁরা এটা এখনও মনে করেন যে মাদ্রিদকে ক‌্যাটালোনিয়ার অবদান স্বীকার করে তাদের যন্ত্রণার বিহিত করতে হবে।

Advertisement

কিছু ক্ষেত্রে এই প্রদেশে স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্র আরও বাড়াতে হবে। বার্সেলোনার কোনও কোনও রাস্তা দিয়ে গেলে গুলিয়ে যাবে স্পেনের মধ্যে আছি, নাকি শুধু ক‌্যাটালোনিয়ায় আছি। আর এই গোটা জটিলতার মধ্যে এফ সি বার্সেলোনা হয়ে উঠেছে ক‌্যাটালোন জাত্যভিমানের প্রতীক। সি বিচে একটি ফুটবলপ্রেমীদের মিছিল গেল। তাতে বারবার বার্সেলোনা আর ক‌্যাটালোনিয়া। বার্সেলোনা জেতা মানেই যেন ক‌্যাটালোনিয়ার পতাকা ওড়া। ফুটবলের মধ্য দিয়েই জয়ের তৃপ্তিটা, নিজস্বতার পতাকা দেখাতে চাইছে ক‌্যাটালোনিয়া। এই ক‌্যাটালোনিয়া ঘিরে বিদ্রোহ এবং অস্ত্রের ঝনঝনানি অবশ্য সুদূর অতীতের ইতিহাসমাখা। জর্জ অরওয়েলের ‘হোমেজ টু ক‌্যাটালোনিয়া’ দেখিয়েছে কীভাবে অপটু হাতেও যুদ্ধ হয়েছে, কীভাবে যুযুধান দুই পক্ষের পরিচয় বদল হয়েছে।

[আরও পড়ুন: ভারত-কানাডা সংঘাতের ফায়দা তুলতে এবার আসরে পাকিস্তান]

এমনকী, যে সোশ্যালিস্ট পার্টি আর কমিউনিস্ট পার্টি এক হয়ে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা, তারাই পরস্পরের শত্রু হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট কেন অবাধ হতে দেওয়া হয়নি, স্বাধীনতাপন্থী নেতাদের গায়ে দুর্নীতির তকমা লাগিয়ে কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তা এখনও মুখে মুখে চর্চার বিষয়। বার্সেলোনার নাগরিকরা বলছেন, বিষয়টা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো হয়ে আছে। সাদা চোখে গভীরতা বোঝা কঠিন। কিন্তু বার্সেলোনা স্বাধীন ক‌্যাটালোনিয়ার রাজধানী হতে চায়। এমনকী, মাদ্রিদ যা করেনি, বার্সেলোনা পর্যটক বা বহিরাগতদের জন্য শহরে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ইউরো, সিটি ট্যাক্সও চালু করে দিয়েছে।

এদিকে মাদ্রিদও অখণ্ড স্পেন রাখতে প্রস্তুত। তাদের প্রশাসকরা এ বিষয়ে আলোচনা এবং কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপ, দুই দরজাই খোলা রেখে চলছেন। স্বাধীনতাপন্থীদের দাবি, অবাধ গণভোট হোক। তবে হ্যাঁ, পূর্ণ স্বাধীনতাপন্থীরা সরব থাকলেও ক‌্যাটালোনিয়াতে এরা ত্রিস্তরীয়। এক, পূর্ণ স্বাধীনতা চাই। দুই, কিছু ক্ষমতা বাড়ানো হোক। তিন, আধা স্বাধীনতা টাইপ কিছু। এখন এখানে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা এই মধ্যপন্থার পথিক। এহেন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, দুই শহরেই অবশ্য বাংলার বাণিজ্যসম্মেলন ভালো হয়েছে। দুই দিকের বণিককুলই বাংলা নিয়ে আগ্রহী। এঁদের রেষারেষিটার প্রভাব পড়ছে না, পড়লেও ইতিবাচকভাবেই। দুই পক্ষই বাংলার সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ