Advertisement
Advertisement
Che Guevara

বদলে গিয়েছে দুনিয়া, তবু আজও কেন চে?

তাঁর কন্যা ও নাতনির কলকাতায় আগমনে নতুন করে আলোচনায় চে গেভারা।

Ernesto Che Guevara is still relevant in this world। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:January 21, 2023 5:04 pm
  • Updated:January 21, 2023 9:44 pm

বিশ্বদীপ দে: ”কেবলই শার্টে আঁকা ছবি নয়, তিনি হৃদয়ের অংশ। তাঁর পথে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের পথ।” এই কথা যখন বলছেন আলেইদা নাম্নী প্রৌঢ়া, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন এয়ার থিয়েটারে তখন হাততালির বন্যা। আসলে তিনি এমন এক মানুষের কথা বলছিলেন, যিনি তাঁর বাবাই কেবল নন, এই সভ্যতার বুকে এক দৃপ্ত বাতিস্তম্ভও। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় আগে যিনি মৃত। অথচ নীল রঙের এই গ্রহে বিপ্লবের বাণী আজও প্রবাহিত করে চলেছেন তিনি। তিনি চে। চে গেভারা। যাঁর জীবন আসলে এক অতিজীবন। যে জীবনের সমাপ্তি মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে হতে পারে না। তাঁর কন্যা ও নাতনির কলকাতায় আগমন ঘিরে নতুন করে চে গেভারার নাম ভাসতে শুরু করেছে কলকাতার বাতাসে। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে চে আজও হৃদয়ের অন্তর্লীন স্রোতের ভিতরে বর্তমান। ভাবলে জেগে ওঠে বিস্ময়। কীভাবে সম্ভব এই জাদু?

গত বছরের মার্চ মাসে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। তাঁর নাম মারিও টেরান সালাজার। ৮০ বছরের বৃদ্ধের পরিচয় বিশ্বের কাছে একটাই। এক পরিত্যক্ত স্কুলবাড়ির ঘরে তিনি গুলি করেছিলেন বন্দি চে গেভারাকে! শোনা যায়, যেচেই নাকি সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে কার্যতই আপশোসের সুর শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। ”ওই দিনটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। সেই সময় চে’কে দেখাচ্ছিল বিরাট, বিপুল, বিশালাকার। ওঁর চোখগুলো জ্বলজ্বল করছিল।” সালাজারের মনে হয়েছিল এই নিরস্ত্র অবস্থাতেও হাঁটু মুড়ে বসে থাকা মানুষটি মুহূর্তে তাঁর উপরে চড়াও হতে পারেন। কিন্তু তাঁকে অবাক করে চে নিস্পন্দ কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন, ”শান্ত হও। ভাল করে তাক করো। তুমি একজন মানুষকে হত্যা করতে চলেছ।” এর পরের মুহূর্তের বর্ণনা করতে গিয়ে সালাজার জানাচ্ছেন, ”এরপর আমি দরজার দিকে হেঁটে যাই। আর চোখ বুজে গুলি চালাই।”

Advertisement
কলকাতায় চে

[আরও পড়ুন: কেন্দ্রের আশ্বাসে তিনদিন পর উঠল কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ, প্রশ্নের মুখ ব্রিজভূষণের ভবিষ্যৎ]

ভাবতে বসলে গল্পকথা মনে হয়। হত্যাকারীর সামনেও শান্ত, স্থিতধী থাকা চে। কিউবার স্বাধীনতার পরও মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে নতুন করে বিপ্লবের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া চে। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে ৩৯ বছর বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া চে। আজও তিনি বিপ্লবের মশাল জ্বালিয়ে রেখেছেন এই দুনিয়ার বুকে। সভ্যতার বুকে আজ দাপাদাপি দক্ষিণপন্থীদের। কিন্তু সেখানেও বামপন্থী আদর্শের প্রতি বহু মানুষের ভালবাসা যে আজও অম্লান, তা স্পষ্ট করে দেয় চে’র প্রাসঙ্গিকতা। অথচ ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবরের পর আমূল বদলে গিয়েছে পৃথিবী। মাঝের সাড়ে পাঁচ দশকে কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছি আমরা। তবু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন ছুঁয়ে বলাই যায়, ‘চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়!’ আজও।

Advertisement

৫৫ বছর আগের এক অক্টোবর। তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। দ্রুত প্রায় হাজার দুয়েক বলিভীয় সেনা ঘিরে ফেলছিল জঙ্গল। যে জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিলেন চে। বলিভিয়ার স্বাধীনতা আনতে তিনি তৈরি করেছিলেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। শুরু হয়েছিল গুলির লড়াই। যদিও চে জানতেন, সেই মুহূর্তে তাঁর সঙ্গে যে লোকবল তাতে বেশিক্ষণ লড়া যাবে না। যায়ওনি। গুলিতে ক্ষতবিক্ষত পা, রক্তাক্ত চে গেভারাকে ঘিরে ফেলে সেনার দল। তাদের দিকে তাকিয়ে চে’র শান্ত পরামর্শ, ”গুলি কোরো না। মৃত চে গেভারার থেকে জীবন্ত চে গেভারার মূল্য অনেক বেশি।”

Che

[আরও পড়ুন: তাপমাত্রা -৪০, ২০ মিনিটেই অসাড় দেহ! পৃথিবীর শীতলতম শহরে কীভাবে দাপিয়ে বাঁচে মানুষ?]

বন্দি করে এক পরিত্যক্ত স্কুলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। পরের দিন সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তের কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। তার আগের মুহূর্তগুলোতেও একই ভাবে অবিচল ছিলেন চে। জানতেন যে কোনও সময় তাঁকে মেরে ফেলা হতে পারে। তবু কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। ছিলেন নিশ্চুপ। এমন মানুষ যে রাষ্ট্রের কাছে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত হবেন, তাতে সন্দেহ নেই। আমেরিকা তাঁকে পানামা নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলেও বলিভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্টের নির্দেশ ছিল, মেরে ফেলো লোকটাকে। ভেবে দেখলে এছাড়া আর কীই বা করতে পারতেন তিনি!

মৃত্যুর পরেও চে জীবিত থেকে গেলেন। তাঁর শেষ দিনগুলির কথা, তাঁর সারা জীবনের সংগ্রাম, মোটর সাইকেলে জীবন চষে বেড়ানোর কাহিনি রূপকথা হয়ে গেল। গেরিলা যুদ্ধের একফাঁকে দুর্গম জঙ্গলে হ্যামক টাঙিয়ে তার উপরে শুয়ে কবিতা পড়তেন। কেবল এই একটা দৃশ্যের কথা মনে হলেই পরিষ্কার হয়ে যায়, এমন মানুষ কখনও মরতে পারেন না। তাঁর মৃতদেহের ছবি আজও গুগল করলেই দেখা যায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি।’ নিষ্প্রাণ চে গেভারার ছবি সেই নিরলস পদচারণাকেই তুলে ধরে যেন। যা দেখে অনেকে তুলনা টেনেছিলেন ‘ডেড ক্রাইস্টে’র সঙ্গে।Che-G

পুরো নাম আর্নেস্তো গেভারা দে লা সেরনা। কিন্তু বিশ্ব তাঁকে চেনে চে গেভারা নামে। বলা ভাল কেবল চে নামেই। এক শব্দের সংক্ষিপ্ত উচ্চারণেই যেন বাঁধা আছে বিপ্লবের সারাৎসার। সাম্রাজ্যবাদ এক নতুন চেহারায় দেখা দিয়েছে নতুন সহস্রাব্দে এসে। তবু এই সময়ে দাঁড়িয়েও অবিচল চে’র আদর্শ। বিশ্বজুড়ে বিপ্লবের আঘাতেই সাম্রাজ্যবাদকে চূর্ণ করতে চাইতেন তিনি। বার্তা দিয়ে গিয়েছেন পৃথিবীর বুকে অনেক ভিয়েতনাম তৈরির। বলে গিয়েছেন, ”অনেকেই আমাকে অ্যাডভেঞ্চারার বলেন। এবং আমি সেটাই। কিন্তু একটু পার্থক্য রয়েছে। এমন একজন যে সত্যকে প্রমাণ করতে নিজের প্রাণেরও ঝুঁকি নেয়।” এই কথাগুলি আজও চকমকি পাথরের মতো পথ দেখায়। আর প্রমাণ করে দেয়, চে আছেন। চে থাকবেন।

Che
ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ