সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হবে জাপানকে, ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হবে আমেরিকাকেও। এই হুমকির মাত্র কয়েকঘণ্টা পরেই ফের একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল উত্তর কোরিয়া। আর সেটি উড়ে গেল জাপানের উপর দিয়েই। এই নিয়ে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার একই ধরনের ঘটনা ঘটল। তবে জাপানকে অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে ক্ষেপণাস্ত্রটি। যদিও ইতিমধ্যে দ্বীপরাষ্ট্রে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা আধিকারিকরা।
শুক্রবার সকালে পিয়ংইয়ং-এর নিকটবর্তী সুনান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়। জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে প্রায় ৩৭০০ কিলোমিটার ওড়ার পর প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি। মাটি থেকে উচ্চতা ছিল ৭৭০ কিলোমিটার। ঠিক কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র এটি সেটা এখনও বোঝা যায়নি, তবে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ড মনে করছে এটি একটি মাঝারি মানের ক্ষেপণাস্ত্র। কিম প্রশাসনের এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরেই আরও উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছে এশিয়ার ওই অঞ্চল। কারণ চুপ করে বসে নেই দক্ষিণ কোরিয়াও। বন্ধু রাষ্ট্র জাপানের সাহায্যে এবং উত্তর কোরিয়াকে পরোক্ষভাবে হুঁশিয়ারি দিতে তাঁরা ইতিমধ্যে মহড়া দিতেও শুরু করেছে। সেদেশের নিরপত্তা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে যেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে অর্থাৎ সেই সুনামকে গুঁড়িয়েও দেওয়া হতে পারে। দেশের পূর্ব উপকূলে এই মহড়া চালাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। এমনকী প্রেসিডেন্ট মুন-জেই নিরাপত্তা পারিষদদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকও ডেকেছেন।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরই গোটা দেশ জুড়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে জাপান সরকার। যদিও কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি সমুদ্রে গিয়েই পড়েছে। এবং তাতে দেশের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার তীব্র নিন্দা করেছেন। পাশাপাশি বলেছেন, গোটা বিশ্ব যেখানে শান্তি চাইছে, সেখানে উত্তর কোরিয়ার এই কর্মকাণ্ড বিপদ ডেকে আনবে। কিম প্রশাসনের এই হঠকারিতার বিরুদ্ধে সবাইকে একজোটে রুখে দাঁড়াতে হবে। ওদের বোঝাতে হবে এভাবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলে ভবিষ্যতে সমূহ বিপদ।
জাপানের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকাও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনই কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট রেক্স টিলারসন জানিয়েছেন, গত কয়েকসপ্তাহে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জাপানকে সরাসরি ভয় দেখানো হল। উত্তর কোরিয়াকে বুঝতে হবে এর ফলে রাষ্ট্রসংঘ আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে। এর পাশাপাশি কিম প্রশাসনের দুই ‘কাছের বন্ধু’ চিন ও রাশিয়াকেও একহাত নেন তিনি। পাশাপাশি পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে কিম প্রশাসনকে উপযুক্ত দিতে তৈরি ওয়াশিংটন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রসংঘকেও জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আরজি জানিয়েছে জাপান ও আমেরিকা।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই জাপানকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল উত্তর কোরিয়াকে।সরকার পরিচালিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে কোরিয়া-প্যাসিফিক শান্তি কমিটিকে উল্লেখ করে বলা হয় উত্তর কোরিয়া যথেষ্ট স্বনির্ভরশীল। সেই সঙ্গে লেখা হয়, ‘জাপানের আমাদের কাছাকাছি থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। আশপাশের চারটি দ্বীপে পরমাণু বোমা ফেলে সেগুলিকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া উচিত।’ এর পাশাপাশি চিরশত্রু আমেরিকাকেও একই হুমকি দেয় কিম প্রশাসন।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আমেরিকাকে হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এদিকে, কয়েকদিন আগেই গত আগষ্ট মাসের শেষদিকে একটি পরমাণু বোমা পরীক্ষা করেছিল উত্তর কোরিয়া, যা কিনা জাপানের উপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়া এবং আমেরিকার যৌথ মহড়ার জবাব দিতেই ওই পরমাণু পরীক্ষা জানিয়েছিল পিয়ংইয়ং। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্রয়োজনে মার্কিন দ্বীপ গুয়ামকে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে উড়িয়ে দিতেও কোনও কসুর করবে না তারা। রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে কিমের সেনা। জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায় উত্তর কোরিয়ার ছোড়া ওই মিসাইলটি। জাপানি ব়্যাডারে ক্ষেপণাস্ত্রটি ধরা পড়তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তবে কোনও ক্ষতি না করে অবশ্য মাঝ সমুদ্রে আছড়ে পড়েছিল ওই মিসাইলটি। তারপর ফের এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। রাষ্ট্রসংঘ-সহ বিশ্বের বহু দেশের নিষেধ সত্ত্বেও কিম প্রশাসনের এভাবে পরমাণু পরীক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ওই অঞ্চলের শান্তি আরও বিঘ্নিত করছে বলেই মত কূটনীতি মহলের। এখনই না থামলে ভবিষ্যতে আরও ভয়ানক বিপদের মুখোমুখি হতে পারে গোটা বিশ্ব। এমনকী হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.