কোয়েল মুখোপাধ্যায়: ‘বসে আছি পথ চেয়ে…’
প্রেমিকার পথ চেয়ে টানা দশদিন বিমানবন্দরে বসে ছিলেন তিনিও৷ তিনি মানে নেদারল্যান্ডের আলেকজান্ডার পিটার সির্ক৷ তাঁর এই দীর্ঘ অপেক্ষা যাঁর জন্য চলছিল, সেই সুন্দরী মিস ঝ্যাং থাকেন চিনের হুনান প্রদেশের চ্যাংশায়৷ আসলে, মাত্র কয়েক মাসের অনলাইন-মোলাকাতেই ঝ্যাংকে নিজের ‘দিল’ দিয়ে বসেছিলেন এই ওলন্দাজ-বাবু৷ কিন্তু কতদিন আর আমি-তুমির মাঝে ‘সে’-র মতো মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারের পর্দার উপস্থিতি মেনে নেওয়া যায়, আপনিই বলুন! তো একদিন উঠল বাই, আর সঙ্গে সঙ্গে আলেকজান্ডারের মনে হল, ‘চিনে যাই’! ব্যস! প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার জন্যই আকাশপথে সাড়ে চার হাজার মাইল পেরিয়ে চিনে চলে এলেন আলেকজান্ডার৷ ভেবেছিলেন, তাঁকে ‘ওয়েলকাম’ করতে হয়তো সেখানেই হাতে গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ঝ্যাং!
কিন্তু…‘সে তো এল না’৷
না! ‘গার্লফ্রেন্ড’কে বিমানবন্দরে না দেখে প্রথমেই হতাশ হয়ে পড়েননি আলেকজান্ডার৷ ভাবলেন, অপেক্ষা করি৷ ‘কভি না কভি’ ঝ্যাং তো আসবেই৷ এভাবেই কেটে গেল একের পর এক দিন৷ অথচ ঝ্যাংয়ের ‘দেখা নাই রে’! ইতিমধ্যে বিমানবন্দরে শুরু হল গুঞ্জন৷ উৎসাহী কেউ কেউ গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আলেকজান্ডারের সেখানে অনন্ত অপেক্ষার কারণ৷ প্রেমে গুঁতো খাওয়া ওলন্দাজ-বাবু বুকে পাথর রেখে তাঁদের জানালেনও সব কথা৷ তবে অপেক্ষা থামালেন না৷ তাঁর সেই প্রতীক্ষার প্রহর গড়াতে গড়াতে যেদিন দশ নম্বর দিনে গিয়ে পড়ল, আর টানতে পারলেন না আলেকজান্ডার৷ টানা ধকলে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি৷ তাঁকে ভর্তি করতে হল হাসপাতালে৷ কোনওরকমে জানালেন, সুস্থ হয়ে উঠেই দেশের বিমান ধরবেন৷
এদিকে, স্থানীয় সংবাদপত্রে আলেকজান্ডারের ছবি-সহ খবর চোখে পড়ল বছর ছাব্বিশের মিস ঝ্যাংয়ের৷ সব জেনে-শুনে তিনি তো অবাক! আসলে, অনলাইনে আলাপচারিতায় আলেকজান্ডারের সঙ্গে ‘ফ্লার্টিং-শার্টিং’ করলেও তিনি যে সুদূর নেদারল্যান্ড থেকে চিনে উড়ে এসে জুড়ে বসবেন, সে কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ঝ্যাং৷ আর তাই, চিনে যাত্রা করার আগে আলেকজান্ডার তাঁকে উড়ান-টিকিটের ছবি পাঠালেও তিনি আমল দেননি৷ উল্টে, প্লাস্টিক সার্জারি করাতে চলে যান অন্য শহরে৷ এমনকী, মশকরা ভেবে মোবাইলে পাঠানো আলেকজান্ডারের ‘মেসেজ’গুলিও পড়েননি৷
‘পেয়ার কে সাইড এফেক্টস’ বোধ হয় একেই বলে!