Advertisement
Advertisement

ভারতীয় দূতকে বহিষ্কার করে জবাব ইসলামাবাদের

ভারতে পাক দূতাবাসে আরও কড়া নজর গোয়েন্দাদের৷ অনুমান, চরচক্রে জড়িয়ে আরও অনেকে৷

Now Pakistan asked that Indian official Surjeet Singh to leave
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 28, 2016 9:03 am
  • Updated:October 28, 2016 9:03 am

নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ভারত-পাক সীমান্তের উত্তেজনা কয়েকদিন সামান্য হলেও থিতিয়েছিল৷ রুটিন গুলি বিনিময় এবং দু’পক্ষের সেনাদের হতাহত হওয়ার ঘটনার মাঝেই ফের উত্তেজনা বাড়াল পাকিস্তানি চরচক্র ফাঁস৷ দিল্লিতে পাক দূতাবাসের কর্মী মেহমুদ আখতারকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বৃহস্পতিবার ভারত থেকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করে নয়াদিল্লি৷ তারপর পাক হাইকমিশনার বাসিত আলিকে ডেকে তীব্র ভর্ৎসনা করে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক৷ ভারত সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তান৷ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সুরজিৎ সিংকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি ঘোষণা করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়৷

ঠিক কী ঘটেছিল এদিন? ভারতীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য,  দিল্লির পাকিস্তানি হাইকমিশনে বসেই ‘ইধার কা মাল উধার’ হয়ে যাচ্ছিল৷ দিল্লির পাক দূতাবাস ঘুরে বিএসএফ ও  ভারতীয় সেনাদের বহুবিধ গোপন তথ্য নিয়মিত পাচার হয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানে৷ এর নেপথ্যে ছিল এক পাক দূতাবাস কর্মী৷ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার পাক দূতাবাসের এক ভিসা কর্মীকে আটক করে দিল্লি পুলিশ৷ মেহমুদ আখতার নামে ওই কর্মী এবং তার অনুগত দুই ভারতীয় নাগরিক মৌলানা রমজান এবং সুভাষ জাঙ্গির নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়৷ শেষ দু’জন রাজস্থানের বাসিন্দা এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর বেতনভুক এজেণ্ট৷ এদের নিয়োগ করেছিল আখতার৷ আখতার হল ভারতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার বাসিত আলির খুব ঘনিষ্ঠ কর্মচারী৷ অন্যদিকে, আদালতে তোলা হলে রমজান ও জাঙ্গিরকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন দিল্লির মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট৷

Advertisement

বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, পাক হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাক দূতাবাসকর্মীরা ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু অপরাধমূলক বা আপত্তিজনক কাজ না করেন যা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিরোধী৷ ‘কূটনৈতিক রক্ষাকবচ’ থাকায় পাক দূতাবাসকর্মী মেহমুদ আখতারকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ৷ টানা জেরা করার পরই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ভারত সরকার নির্দেশ দেয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ বাকি দুই পাক চরকে গ্রেফতার করে ম্যারাথন জেরা করছেন গোয়েন্দারা৷ ধরা পড়ার পর অবশ্য ভুয়া আধার কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেশ করে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা করেছিল আখতার৷ কিন্তু লাভ হয়নি৷

Advertisement

অন্যদিকে, ভারত আখতারকে বহিষ্কার করতেই পাল্টা জবাব দেয় ইসলামাবাদ৷ তারা ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সুরজিৎ সিংকে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সপরিবার পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দিল৷ ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম বামবাওয়ালেকে ডেকে পাক বিদেশমন্ত্রক এই নির্দেশনামা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে৷ অর্থাৎ পাক কূটনীতিক মেহমুদ আখতারকে ভারত ছাড়তে বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রথামাফিক ‘কূটনৈতিক দুর্ব্যবহারের’ ‘পরিচিত ঐতিহ্যই’ এদিন বজায় রাখল ইসলামাবাদ৷

এদিনই পাক চরচক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে যোধপুর থেকে শোয়েব নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ পাসপোর্ট এজেণ্ট শোয়েব পাক দূতাবাসকর্মী আখতারের সঙ্গে সুভাষ জাঙ্গির ও রমজানের আলাপ করিয়ে দিয়েছিল৷ ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন,  বিএসএফের মোতায়েন, আগামী দিনে বিএসএফের পরিকল্পনা, পাক সীমান্তে বিএসএফের চৌকি ও পরিকাঠামো বদলের নকশা-সহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর নথিপত্র, ছবি, মানচিত্র আখতারের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে৷ সন্দেহ করা হচ্ছে, পাক হাইকমিশনের আরও অনেক কর্মী যারা চরচক্রে জড়িয়ে রয়েছে তারা সতর্ক হয়ে গিয়েছে৷ তবে তাদের উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখা হচ্ছে৷

দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখার যুগ্ম কমিশনার রবীন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, জেরার মুখে ভেঙে পড়ে মেহমুদ আখতার কবুল করেছে সে পাক সেনার ৪০ নম্বর বালুচ রেজিমেণ্টের হাবিলদার হিসাবে কাজ করত৷ পরে ২০১৩ সালে সে আইএসআই-তে ডেপুটেশনে কাজ করছে৷ তার আসল বাড়ি রাওয়ালপিন্ডির কাহুটার কাছে এক গ্রামে৷ আড়াই বছর দিল্লিতে আছে৷ রমজান ও সুভাষ জাঙ্গির তারই নেটওয়ার্কের লোক৷ তাকে নির্দিষ্ট কিছু ‘অ্যাসাইনমেণ্ট’ দিয়ে দিল্লিতে পাক দূতাবাসে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে৷

কী সেই অ্যাসাইনমেণ্ট? তা তদন্তের স্বার্থে বলতে চাননি পুলিশ কর্তা৷ পুলিশ জানিয়েছে, টাকার লোভ দেখিয়ে ভারতের বিভিন্ন শহরে মুসলিম যুবকদের ও হানিট্রাপের ফাঁদে ফেলে হিন্দু  যুবকদের এবং দরকার পড়লে সেনাকর্মীদেরও চর হিসাবে নিয়োগ করাটাই ছিল আখতারের প্রথম কাজ৷ সীমান্তে বিএসএফের মুভমেণ্ট, পাক সীমান্তে সেনা সরঞ্জামের স্থান বদল করার মতো তথ্য পেতে খুব পরিশ্রম করত সে৷

এবার পুলিশ কী করবে? জবাবে রবীন্দ্র যাদব বলেন, আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে৷ খুব শীঘ্রই আরও বড় অভিযান চালানো হবে৷ ধরা হবে আরও পাক চরকে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ