Advertisement
Advertisement
Aghanistan

Taliban Terror: ‘নতুন তালিবান অনেক বেশি বিপজ্জনক, নৃশংস’, আশঙ্কা সমাজকর্মী বঙ্গকন্যার

সহকর্মীদের জন্য একবুক আশঙ্কা নিয়েই কাবুল ছাড়লেন এই সমাজকর্মী।

The new Taliban is far more dangerous, says human rights activists | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 17, 2021 4:32 pm
  • Updated:August 23, 2021 9:21 pm

তালিবানের দখলে গোটা আফগানিস্তান (Afghanistan)। জঙ্গিদের সরকার গঠন সময়ের অপেক্ষামাত্র। ‘কাবুলিওয়ালা’র দেশের নারী নিরাপত্তা শূন্যের পথে। আশঙ্কার কথা লিখলেন আফগানিস্তানে দিন কাটানো মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, বাঙালিকন্যা সোহিনী সরকার।

১৫ আগস্ট যে দিল্লি ফিরব সেটা জানা ছিল দিনকয়েক আগে থেকেই। টিকিটও বুক করা ছিল আগেই, কিন্তু সে দিনই যে তালিবান শহরটা দখল করে নেবে তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারিনি। রবিবার সকালে বজ্রপাতের মতো খবর এল তালিবান (Taliban) নাকি পিডি-ফাইভে ঢুকে পড়েছে, যে এলাকাটা আমাদের অফিসের বেশ কাছেই। পুরো কাবুল (Kabul) শহরটা এরকম বারো-তেরোটা ‘পুলিশ ডিস্ট্রিক্ট’ বা PD-তে ভাগ করা, তার মধ্যে পাঁচ নম্বরটা আমাদের সবচেয়ে কাছে, আর তালিবান রাজধানীতে প্রবেশ করেছে সেই পথেই। বিকেলে ফেরার ফ্লাইট থাকলেও জরুরি কিছু কাজকর্ম সারতে রবিবার সকালেও অফিসে গিয়েছিলাম। স্থানীয় কর্মীরাও যথারীতি কাজে এসেছিলেন, এর মধ্যে তালিবানের ঢুকে পড়ার খবর আসতেই স্টাফদের তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঠিক তখন থেকেই দেখলাম সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে, ভয়ে সবার মুখ শুকিয়ে আসছে। এর মধ্যেই মার্কিন দূতাবাস থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এল, স্টেশন ছাড়ার আগে সমস্ত সেন্সিটিভ ডকুমেন্টস, কর্মীদের নাম, ধাম-পরিচয় এইসব সরিয়ে ফেলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে – সেগুলোও সারতে হল নীরবে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: Afghan Crisis: তালিবানের সমর্থনে পোস্ট করলেই কড়া ব্যবস্থা, ঘোষণা Facebook-এর]

একটা ভীষণ খারাপলাগা কাজ করছিল সর্বক্ষণ। আমি প্রায় ২০০জন স্থানীয় আফগানের সঙ্গে এতদিন কাজ করছি, তাদের একটা প্রবল বিপদের মধ্যে রেখেই আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। অথচ তারা চাইলেও এখান থেকে চলে যেতে পারছে না। কাবুলের বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই ভারতে ফিরতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু ততক্ষণে ভারতও ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রবিবার রাতে যখন কাবুল ছাড়ছি, তখন ভারতের দূতাবাস (Embassy) কার্যত বন্ধই বলা চলে। এই সবের মধ্যেই অবশেষে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিলাম।

Advertisement

এমনিতে আমি থাকি এয়ারপোর্টের বেশ কাছেই, মাত্র দশ মিনিটের ড্রাইভ – কিন্তু কাল সময় লাগল আধঘন্টারও বেশি। কারণ, ততক্ষণে কাবুল বিমানবন্দর অভিমুখী সব রাস্তায় মারাত্মক যানজট শুরু হয়ে গেছে। কাবুল শহরের সব গাড়ি যেন গিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকতে চাইছে। এয়ারপোর্টে গিয়ে প্লেন ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হল দীর্ঘক্ষণ। বেলা পৌনে তিনটের ফ্লাইট ছাড়ল প্রায় ঘন্টাচারেক পর, দিল্লিতে এসে ল্যান্ড করলাম রাত ন’টার পর। আমরা যখন কাবুল এয়ারপোর্ট ছাড়ি, তখনও বিমানবন্দরের পরিস্থিতি একেবারে হাতের বাইরে চলে যায়নি। তারপর থেকে সেখানে যে মারাত্মক হুড়োহুড়ি আর অরাজকতা শুরু হয়েছে, তা তো সবাই দেখতেই পাচ্ছেন।

[আরও পড়ুন: ‘আমাকেও খুন করুক তালিবান’, অপেক্ষায় Afghanistan-এর প্রথম মহিলা মেয়র]

কাবুল ছেড়ে আসার যন্ত্রণার মধ্যেও একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি – এই তথাকথিত নতুন তালিবানকে ভরসা করার আমি কিন্তু কোনও কারণ দেখছি না। ইদানীং নানা সংবাদমাধ্যমে লেখা হচ্ছে এই তালিবান নাকি আগের মতো নয়, তারা এখন নাকি অনেক আধুনিক, অনেক পরিশীলিত। আমি কিন্তু যত আফগানের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের একজনও বলেনি যে এই তালিবানকে তারা পছন্দ করে। বরং তারা সবাই একবাক্যে বলেছে, এই নতুন তালিবান অনেক বেশি বিপজ্জনক এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত বলে তাদের ভয় পাওয়ার আরও বেশি কারণ আছে এবং তারা এখন অনেক বেশি নৃশংস। তাছাড়া তালিবান এখন অনেকগুলো বড় বড় শক্তিধর দেশের সমর্থনও পাচ্ছে, যে কারণে আফগান জনতার একটা বড় অংশ, তারা কী করতে পারে সেটা ভেবে খুবই ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের মহিলা সহকর্মীরা, যারা গত কুড়ি বছর ধরে অনেক কষ্টে পড়াশুনো করে চাকরিবাকরি করছিল, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উপার্জন করছিল তারা সবচেয়ে বেশি হতাশ!

(বিবিসি ডট কমের সৌজন্যে)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ