অভীক চৌধুরি, ফিলাডেলফিয়া: চিন্তা আছে প্রচুর। তবে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। আমাদের শহরে বা কাউন্টিতে করোনা নিয়ে আতঙ্ক এক্কেবারেই নেই। সবাই শান্ত হয়ে ঠান্ডা মাথায় অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করছেন। আকারে পেনসিলভানিয়া স্টেটে আমাদের কাউন্টি কতটা হবে? বাংলায় আমার বাড়ি ইছাপুরের দেবীতলায়। সেই হিসাবেই বলছি। ইছাপুর, শ্যামনগর আর পলতা মিলিয়ে যতটা এলাকা, আমাদের এই পেনসিলভানিয়া(Pennsylvania) ও মোটামুটি ততটা। এই জায়গায় এর মধ্যেই প্রায় দু’শোজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে।
এবার মনে হতে পারে কেন বললাম যে, স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক নেই? আসলে এখানে প্রশাসন এতটাই তৎপর যে, স্থানীয়রা মোটেই মাথায় হাত দিয়ে নেই। এখানে শারীরিকভাবে কেউ অস্বস্তি বোধ করলে ৯১১ ডায়াল করলে মুহূর্তের মধ্যে হেলথ টিম চলে আসে। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে তো কোনও কথাই নেই। সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়ে যায়। ওষুধ থেকে শুরু করে সবই নাগালের মধ্যে। ওষুধ হোক বা ভাত-ডাল কিংবা তরিতরকারি। সবই পাওয়া যাচ্ছে নিজের এলাকার স্টোরে। সেখানেও কিছু নিয়ম আছে। যেহেতু বয়স্করা করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই সকাল ছ’টা থেকে আটটা শুধু বয়স্করা কেনাকাটা করতে পারেন মল আর স্টোরে। দিনের অন্য সময়ে বাকিরা। এখানে কিন্তু এখনও লকডাউন বা কারফিউ কোনওটাই করা হয়নি। তবে হ্যা, স্পষ্ট বলা আছে যে, খুব একটা প্রয়োজন না হলে যেন কেউ রাস্তায় না বের হয়। স্টে অ্যাট হোমের নির্দেশিকা মাথায় রেখেও যাঁরা রাস্তায় বেরোচ্ছেন মানুষেরা। প্রত্যেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মানছেন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং। এখানে প্রায় প্রত্যেকেই নিজের গাড়িতে যাতায়াত করে। শহরের বড়া মল বা স্টোরগুলোওতে তাই গা ঘেঁষাঘেঁষির কোনও ব্যাপারই নেই। তবে এমনিতে লোকজন খুব একটা রাস্তায় যাচ্ছেও না। করোনা নিয়ে সবাই বেশ সত র্ক। তাই লকডাউন বা কারফিউ না থাকলেও সবাই সচেতনভাবে থাকছেন সেলফ আইসোলেশনে।
[আরও পড়ুন:করোনা ছড়িয়েছে চিন! ক্ষতির খতিয়ান দিয়ে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি জার্মানির ]
প্রশ্ন আসতেই পারে যে, এতই যদি সবকিছু ভাল ভাল হয়ে থাকে তাহলে এত মানুষ আক্রান্ত হল কীভাবে? শুরুর দিকে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ অন্য দেশ থেকে আসায় দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ওতেই চারিদিকে এত ধ্বংসলীলা। এত কিছুর মধ্যেও অবশ্য কেউ কেউ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। লকডাউন তোলার দাবিতে দু’-এক জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। তবে প্রশাসন চেষ্টা করছে নানা ধরনের প্যাকেজ দিয়ে এইসব বিক্ষোভ প্রশমন করতে। বিনাশ করতে। ছোট ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অনুদান ও লোন দেওয়ার জন্য ৯.২ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। স্বনির্ভর নাগরিকদের বেকার ভাতার আবেদন করতে বলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে কিছু কিছু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। তবে এখানে হয়তো তা আরও পরে তা হবে।
[আরও পড়ুন:জ্বরের ওষুধ বিক্রিতে নজরদারির নির্দেশ রাজ্যগুলির, দোকান থেকেই মিলবে ক্রেতার তথ্য]
ফিলাডেলফিয়া দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে আমি আইটি ফার্মে কাজ করি। এখানে রুমমেটদের সঙ্গে থাকি। আমারা স্ত্রী থাকে টেক্সাসে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বেশিরভাগ জায়গাতেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু হয়ে গিয়েছে। কোম্পানির ব্যবসাতেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি। যাঁদের ঘর থেকে কাজ করা সম্ভব নয়, তাঁদেরই যা সমস্যা হচ্ছে। এখানে সবাই কাজের মধ্যেই থাকি। তবে অবসর সময়ে নিউজ চ্যানেল খুললে একটু-আধটু ভয় লাগে। তবে বেশি চিন্তা হয় মা-বাবাকে নিয়ে। ওঁরা ইছাপুরে একা থাকেন। বাংলার অবস্থাও তো শুনছি ভাল নয়। ওঁদের নিয়েই চিন্তা প্রায়ই লাগে।