সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন আরও এক ইমাম মৌলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদী। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন আসানসোলের সেই ইমাম। যিনি ছেলেকে হারিয়েও স্রেফ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে রুখে দিয়েছিলেন আরও একটি হিংসাকে। দিল্লির যশপাল সাক্সেনাও সেই পথে হাঁটলেন। মুসলিম প্রেমিকার আত্মীয়রা ছেলেকে খুন করেছে। এই খবর শোনার পরেও শান্তই থাকলেন তিনি। উলটে ছেলের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ২০০ জন রোজাদারকে ইফতার খাওয়ালেন। ভালবাসার বার্তা দিতেই এই আয়োজন, এমনটাই জানিয়েছেন যশপাল সাক্সেনা।
উল্লেখ্য, ছেলের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি করে অশান্তির পরিকল্পনা করেছিল সমাজের এক শ্রেণির বাসিন্দারা। তবে তাতে সায় দেননি মৃত যুবকের বাবা। সাফ জানিয়েছিলেন, ‘হানাহানি ছড়াবে এমন কোনও বিবৃতি দয়া করে কেউ দেবেন না। যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তারা মুসলিম। তবে সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রত্যেক মুসলিমকে দায়ী করা যাবে না। এই ঘটনাকে ব্যবহার করে কেউ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াবেন না। প্রত্যেকের কাছে আমি অনুরোধ রাখছি, এই হত্যার বিষয়টি সাম্প্রদায়িক রং চড়িয়ে পরিবেশ অশান্ত করবেন না।’
ছুরিকাহত হয়ে চারমাস আগে পেশায় চিত্রগ্রাহক অঙ্কিত সাক্সেনার (২৩) মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম দিল্লির রঘুবীর নগরে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তাঁর প্রেমিকার বাবা মা ও বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, প্রেমিকার বাবা মা কাকু ও নাবালক ভাই-ই অঙ্কিতকে ছুরি মেরে খুন করে। ইতিমধ্যেই আদালতে তদন্তের চার্জশিট জমা করেছে পুলিশ। আগামী জুলাইতে এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। ছেলের মৃত্যুর পর অনেকেই সাম্প্রদায়িক ক্ষেত্র থেকে অশান্তি ছড়ানোর জন্য যশপাল সাক্সেনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তবে কোনও কিছুতেই তিনি প্রভাবিত হননি। শান্তভাবে এই চারটি মাস নিজেকে বুঝিয়েছেন। রমজান শুরু হতেই ভালবাসা ও শান্তির বার্তা দেওয়ার সিন্ধান্ত নেন তিনি। ঠিক করেন একদিন রোজাদারদের ইফতার খাওয়াবেন। সেইমতো শুরু হয়ে যায় আয়োজন। সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন ছেলের বন্ধুরা। পাশে পেয়ে যান উত্তরপ্রদেশের সেই চিকিৎসক ডাঃ কাফিল খানকে। যিনি কিছুদিন আগেই জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ডাঃ খান শান্তির বার্তা দিতে যশপাল সাক্সেনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি পুত্রশোক কাটিয়ে ওঠা পরিবারকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন কাফিল খান।
ইফতারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলে দলে রোজাদররা ভিড় করতে থাকেন সাক্সেনাদের বাড়ির গলিতে। সন্ধ্যা সাতটায় সেখানে শুধু রোজাদারদের ভিড়ি। তাঁদের জন্য আসে বিরিয়ানি, ফল ও নরম পানীয়। এহেন ইফতার সমাবেশের পর যশপাল সাক্সেনা বলেন, ‘আমি বিহ্বল। যাঁরা এই ইফতার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। অনেকেই আমাকে ইফতার সমাবেশ আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু এই সমাবেশ থেকেই মানুষের কাছে ভালবাসা ও শান্তির বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। আর এই আয়োজন তার জন্যই।’
ইফতারে যোগ দিতে এসেছিলেন নাসির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এখানে আমি আমন্ত্রিত ছিলাম না। তবে ফেসবুকে যখন এই বার্তা পাই তখনই ঠিক করি, এমন একটি মহান উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করতে ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকতে হবেই। কেননা এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। শুধু মানবতার আহ্বান। তাই এহেন ইফতার সমাবেশে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি খুশি।’
সমজাকর্মী অঞ্জলি ভারদওয়াই বলেন, সাক্সেনা পরিবার শোক যন্ত্রণা ভুলে সংহতিকে বরণ করে নিয়েছে। সম্প্রীতির এই বার্তা প্রশংসাযোগ্য। এদিকে ভিন্ন ধর্মে বিবাহিত যুগলদের জন্য একটি ট্রাস্ট চালু করেছেন অঙ্কিতের বন্ধুরা। সেই ট্রাস্টে রয়েছেন সাক্সেনা দম্পতিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.