Advertisement
Advertisement

Breaking News

Asia Cup

ভারতের বিরুদ্ধে বদলার ম্যাচে কাদিরের হর্ষ-বিষাদের ছায়া, নাসিমের জন্য গুরুমন্ত্র কোচের

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই নজর কাড়ছেন নাসিম শাহ।

Coach Salman Qadir gives advice to Pakistan pacer Naseem Shah before India-Pakistan match in Asia Cup
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:September 3, 2022 12:13 pm
  • Updated:September 3, 2022 4:10 pm

কৃশানু মজুমদার: আচ্ছা, আজ যদি পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আব্দুল কাদির (Abdul Qadir) জীবিত থাকতেন! তাহলে তাঁর মুখে খেলা করত গর্বের হাসি। আবার একইসঙ্গে মন কেমনের অনুভূতি গ্রাস করত তাঁকে। 

গর্বের কারণ নাসিম শাহ (Naseem Shah)। আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমির ছাত্র তিনি। এশিয়া কাপে তাঁর আগুনে বোলিং ইতিমধ্যেই হৃদয় জিতে নিয়েছে সবার।
অন্যদিকে পুত্র উসমান কাদির (Usman Qadir) দলের সঙ্গে দুবাইয়ে থাকলেও এখনও পর্যন্ত এশিয়া কাপে একটি ম্যাচেও নামেননি। ম্যাচ না খেলে পুত্রর ডাগ আউটে বসে থাকার যন্ত্রণা, মানসিক ছটফটানি হয়তো ছুঁয়ে যেত পিতা আব্দুল কাদিরকেও।

Advertisement

আব্দুল কাদির নেই। বছর তিনেক আগে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তিনি হারিয়ে গিয়েছেন দূর আকাশে। কিন্তু তাঁর হাতে তৈরি অ্যাকাডেমি এখন আলো ছড়াচ্ছে। জন্ম দিচ্ছে ভবিষ্যতের তারকার।

Advertisement

এক ম্যাচেই নায়ক, আবার এক ম্যাচেই তারা খসা। অতীতের বহু ভারত-পাক ম্যাচ (India vs Pakistan) সাক্ষী থেকেছে এহেন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের। থুড়ি, এই বর্তমান সময়ও কি দেখেনি! দেখেছে তো নিশ্চয়ই। গত রবিবার যেমন দেখল গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। নাসিম শাহ নামের এক তরুণ বোলার কথা বলাচ্ছেন সাদা বলকে। তাঁর রামধনুর মতো বাঁকানো সুইং বল খেলতে গিয়ে রীতমতো সমস্যায় পড়ছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মহীরূহ রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা।

আগামী রবিবার আবারও একটা রক্তের গতি বাড়িয়ে দেওয়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। শুক্রবার হংকংকে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান ঢক্কানিনাদ করতে করতে পৌঁছে গিয়েছে সুপার ফোরে। রবিবারের দুবাই দেখবে দুই প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেট যুদ্ধ। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের কাছে বদলার ম্যাচও বটে রবিবাসরীয় দ্বৈরথ। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে জোর দিয়ে বলে দেওয়াই যায় সবার নজর থাকবে ওই ফুটফুটে নাসিম শাহের দিকে। যিনি এখনও পর্যন্ত চারটি উইকেট দখল করে ফেলেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে দু’টি এবং হংকংয়ের বিরুদ্ধেও দু’টি। আসন্ন ভারত-পাক ম্যাচের আগে পাকিস্তান থেকে ছাত্র নাসিমকে পরামর্শ দিয়ে কোচ সলমন কাদির বলছেন, ”শুরুটা বেশ ভালই করেছো। তাই বলে ভেসে যাওয়ার কিছু নেই। নিজের মধ্যে থাকো। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করো।”

 

[আরও পড়ুন: ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ! লেজেন্ডস লিগে ইডেনে খেলবেন না সৌরভ]

আব্দুল কাদিরের ছেলে সলমন। তিনি নিজেও খেলেছেন ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে সলমন বলছিলেন, ”২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ আমি খেলেছি পাকিস্তানের হয়ে। ভারতীয় দলে সেই সময়ে ছিল শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, দীনেশ কার্তিক, রবিন উত্থাপ্পা, আরপি সি্ং।” দীনেশ কার্তিক, শিখর ধাওয়ান এখনও খেলে যাচ্ছেন। সলমন কাদির এখন প্রতিভা অন্বেষণে ব্রতী, নাসিম শাহের মতো উদীয়মান প্রতিভা তৈরির কারিগর তিনি। ছাত্র নাসিম সম্পর্কে সলমন বলছিলেন, ”সাত বছর আগে আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমিতে এসেছিল নাসিম।”

আব্দুল কাদির লেগস্পিন নামের এক শিল্পকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। তাঁর নামের সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে লেগস্পিন। সেই অ্যাকাডেমি থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসছে আগুনে গতির পেসার? প্রশ্নটা করা হয়েছিল সলমনকে। জবাবে তিনি বলছেন, ”বাবা লেগস্পিনার ছিলেন বলে এখানে কেবল লেগ স্পিনারই তৈরি করা হবে, এমনটা তো হয় না। কোনও অ্যাকাডেমি এভাবে কাজ করে না। আব্দুল কাদির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে এখন উঠে আসছে ব্যাটার, বোলার, ব্যাটসম্যান। নাসিম ভাল খেললে ওর সঙ্গে সঙ্গে আব্দুল কাদির অ্যাকাদেমির কথাও উঠবে। অ্যাকাডেমির নামও ছড়িয়ে যাবে পৃথিবীর সর্বত্র।”

এশিয়া কাপের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে ছাত্রকে পরামর্শ দিয়ে গুরু সলমন বলেছিলেন, ”আব আপকী জিন্দেগি কি উড়ান শুরু হুয়ে হ্যায়। ছ’টা মাস যদি পাকিস্তানের হয়ে পারফর্ম করতে পার, তাহলে তুমিও শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো সুপার স্টার হয়ে উঠবে।” কোচের পরামর্শ মতো নাসিম সেই পথেই এগিয়ে চলেছেন। বছর পাঁচেক আগে আবির্ভাবেই নাসিম শাহ চমকে দিয়েছিলেন ক্রিকেটদুনিয়াকে। লাল বল হাতে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এ বার এশিয়া কাপে পাক বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা তিনি। সলমন বলছেন, ”শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো বোলার না থাকায় পাকিস্তান বোলিং আক্রমণ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। নাসিমের জন্যই এই পাক বোলিংকে এখন বেশ শক্তিশালী দেখাচ্ছে।” সলমন বলছিলেন ”ছেলেটার অসম্ভব মনের জোর। চোট আঘাত কাটিয়ে উঠে এসেছে। চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা সহজ নয়।”

সে তো নয়ই। হাতের সামনেই তো রয়েছেন ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। চোট সারিয়ে ফিরে এসে এখন পান্ডিয়া নায়ক। চোট-আঘাতের কালো অধ্যায় পেরিয়ে এসেছেন নাসিমও।

দীর্ঘদিন বাদে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে পাকিস্তান টাইপ করলে উঠে আসছে ক্রিকেটের খবর। ইমরান খানের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বন্যার খবর সব চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। ক্রিকেট চলে এসেছে সবার আগে। আকিব জাভেদ সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলেছিলেন, ”আমাদের এখানে সমস্যা তো লেগেই রয়েছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলে মানুষ সব সমস্যার কথা ভুলে যায়। ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকে।”

এবারের এশিয়া কাপের সূচি দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে। গতরবিবার পাকিস্তানকে হারিয়ে অভিযান শুরু করেছে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ম্যাচে হারের স্বাদ পেলেও নাসিম শাহ ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছেন। এই রবিবার ভয়ংকর হয়ে উঠতেই পারেন নাসিম। তাঁর কোচ সলমন বলছিলেন, ”সত্যি বলছি, ভারত যখন শর্ট পিচ বলে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের একের পর এক আউট করছিল, তা দেখে আমি দারুণ খুশি হয়ে ছিলাম। কারণ আমি জানতাম এই পিচ বোলারদের সহায়ক। আর এই পিচে নাসিম ভাল করবে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলবে। সেটাই দেখা গেল। লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করল। কোহলি দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ তুলেছিল। কিন্তু স্লিপে কোহলির ক্যাচ পড়ে। ওই ক্যাচটা ধরলে, ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হলেও হতে পারত। শেষের দিকে জাদেজাকে প্রায় এলবিডব্লিউ করে ফেলেছিল।” শেষের দিকে ওভার করতে এসে পায়ে ক্র্যাম্প ধরে নাসিমের। ব্যথার চোটে ঠিকমতো পা ফেলতে পারছিলেন না। সলমন বলছিলেন, ”৩৭-৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বল করা সহজ নয়। ক্র্যাম্প ধরেছিল নাসিমের। তাই নিয়েও বল করে গিয়েছে ও।”

নাসিমের উপর এখন প্রচারের সার্চলাইট। সলমনের ভাই উসমান উল্টো মেরুতে। বাবর আজমের প্রথম একাদশে এখনও জায়গা হয়নি। ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে সলমন বলছেন, ”উসমান দারুণ ট্যালেন্ট। ওর যতগুলো ম্যাচ খেলার কথা, ততগুলো ম্যাচ ও খেলতে পারেনি। এটা দুর্ভাগ্য উসমানের। আমি মনে করি শাদাব খানের থেকেও বড় লেগস্পিনার উসমান। কিন্তু শাদাবের অ্যাডভান্টেজ ও ব্যাট করতে পারে। ফিল্ডিং ভাল। তাই প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। প্রথম একাদশে ঢোকার সমীকরণ হল, একজন লেগস্পিনার যে ব্যাটিং ও ফিল্ডিং দুটোই ভাল করতে পারে।” দলে থেকেও সুযোগ না পাওয়ার যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন একজন ক্রিকেটারই। বাবা আব্দুল কাদির ছেলে উসমানকে পরামর্শ দিয়ে বলতেন, ”আল্লাহর সঙ্গে কথা বলো। ফলাফল একদিন পাবেই।”

কে বলল আব্দুল কাদির নেই! নাসিম শাহ আর উসমান কাদির প্রতিমুহূর্তে জানান দিয়ে যাচ্ছেন পাক কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আছেন। ভীষণভাবেই রয়েছেন।

[আরও পড়ুন: রবিবার ফের মুখোমুখি ভারত-পাক, মেগা লড়াইয়ের আগে রোহিতদের সতর্কবার্তা রিজওয়ানের]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ