সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া ইলিশের হারানো মরশুম আবার ফিরে এসেছে। এর ফলে মৎস্যজীবীদের মুখে যেমন হাসির রেখা দেখা দিয়েছে তেমনি ভোজনরসিকদের মুখেও উঠছে তৃপ্তির ঢেকুর। বিষয়টি বাংলার মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে।
এবারের ভরা শীতের মরসুমে মৎস্যজীবী ও মাছ ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে পূর্ণোদ্যমে হাজির হয়েছে ইলিশ (hilsa)। মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ, জাটকা নিধন ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে। এর ফলে বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। ফিরেছে দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া ইলিশের মরশুমও।
[আরও পড়ুন: ইটালি সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ]
ইলিশ নিয়ে গবেষণাকারী বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের’ প্রধান ড. আনিছুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগর এখন ইলিশে পরিপূর্ণ। সাগরে ইলিশ বেশি হয়ে যাওয়ায় সেগুলি নদীতে প্রবেশ করে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। প্রতি বছর অক্টোবরে হওয়া প্রজননের মরশুমে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মার্চ মাস থেকে মে পর্যন্ত ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, ২০ মে থেকে টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধন বন্ধের উদ্যোগ। এই চারটি পদক্ষেপের কারণেই এবার বাংলাদেশের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ISIS জঙ্গি শামিমাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাওয়ার নির্দেশ ব্রিটেনের আদালতের ]
ইলিশের আকার বড় হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইলিশ সারা বছর ডিম ছাড়লেও ৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায়। ওই সময় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ে। আর এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই পয়লা নভেম্বর থেকে শুরু হয় জাটকা (খোকা ইলিশ) নিধনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা। জাটকা মাঝারি আকারে পরিণত হওয়ার মধ্যেই অভয়াশ্রমগুলোতে পয়লা মার্চ থেকে দুমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। আবার ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই সব কারণে জাটকা ইলিশ একাধিকবার নদী থেকে সাগরে এবং সাগর থেকে নদীতে নিরাপদে আসা-যাওয়ার সুযোগ পায়। ইলিশ যত বেশি ছোটাছুটি করবে, আকারে তত বড় হবে।
মৎস্য দপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে খবর, এ বছরের জানুয়ারিতে ৬ জেলার নদ-নদীতে মোট ১৯ হাজার ৫৯১ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গিয়েছে। এর আগে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২০ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া যায় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ১২ হাজার ২০ মেট্রিক টন, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৯ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ১৭ হাজার ৬৯২ টন ইলিশ পাওয়া যায় বরিশাল বিভাগে। সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর নদী-নদীতে।
বরিশাল মৎস্য বিভাগের আধিকারিক (ইলিশ) ড. বিমলচন্দ্র দাস বলেন, নদ-নদীতে সারা বছর ইলিশ পাওয়া যায়। তবে ইলিশের প্রধান দুটি মরশুম হচ্ছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। প্রায় দেড় যুগ আগে শীতের মরসুমে বিপুল পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যেত। কিন্তু, অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে বিগত বছরগুলিতে তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু, এবার অন্য ছবি দেখা গেল।