অর্ণব আইচ: সীমান্তে গরু পাচার নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু সেই গরুর সাহায্যেই কিনা অস্ত্র পাচার! কলকাতা ষ্টেশন থেকে ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে অস্ত্র পাচারের নয়া এই পন্থার খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছে, গরুর গলায় ঘণ্টা নয়, বেঁধে দেওয়া হত ছোট্ট একটি থলে। থলেটি যাতে পড়ে না যায়, সেজন্য রাখা হত বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়। তাড়া খেয়ে এক দৌড়ে গরু সীমান্ত পার হতেই সেই থলেটি খুলে নেয় পাচারকারী। যশোর বা সাতক্ষীরার এজেন্ট সেই থলে থেকে বের করে নেয় নাইন এমএম পিস্তল ও বুলেটভর্তি ম্যাগাজিন। কখনও গরু, কখনও কাপড়ের পুঁটলির ভিতরে আবার কখনও মাঝনদীতে মাছের নৌকোর মাঝির সাহায্যে। বাংলাদেশে ব্লগার খুনের জন্য একেক সময় একেক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দা তথা আনসার বাংলা টিম (এবিটি)-র লিঙ্কম্যানরা। আল কায়দার ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে এমনই বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) ও বিএসএফ-এর গোয়েন্দাদের হাতে।
[কর্ণি সেনাকে পেটাল পুলিশ, মুখ খুললেন উপরাষ্ট্রপতিও]
এই বিষয়ে অস্ত্র পাচারকারী মনতোষ দে ওরফে জিয়ারুলকে জেরা করেও মিলেছে বহু তথ্য। জঙ্গিদের জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, আল কায়দা তথা এবিটি জঙ্গিদের মধ্যে মুঙ্গেরমেড ৯ এমএম ও ৭.৬২ এমএম পিস্তলের চাহিদা থাকলেও বুঝেশুনে অস্ত্র নিত তারা। ব্লগারদের খুনের জন্য এবিটি জঙ্গিদের চাহিদা কার্যকর অথচ সস্তার অস্ত্র। এখনও পর্যন্ত ৮৪ জন ব্লগার রয়েছে তাদের ‘হিট লিস্ট’-এ। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন রয়েছেন ভারতে। ইউরোপেও রয়েছেন অনেক ব্লগার। মনতোষের মতো বেশ কয়েকজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করত বাংলাদেশের এক এবিটি নেতা। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নিজেদের পরিচয় লুকোতে এবিটি নেতারা তৈরি করত ‘ভারচুয়াল নেটওয়ার্ক’। ধৃতদের মোবাইল ঘেঁটে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, একজনই পাঁচটি সিমকার্ড থেকে বিভিন্ন পরিচয়ে ফোন করত পাচারকারীকে। ওই ব্যক্তি একজন এজেন্টের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে বলত। যদিও মনতোষ ওরফে জিয়ারুলের সঙ্গে কয়েকজন এবিটি নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে পরবর্তী পদক্ষেপ অর্থাৎ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছত সে। তবে মূলত ওই এজেন্টই অস্ত্র নিয়ে তা তুলে দিত আল কায়দার এক লিঙ্কম্যানের হাতে। ওই ব্যক্তির উপরই দায়িত্ব ছিল যেভাবে হোক ওই অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করার।
[মিশরে নৃশংসতম জঙ্গি হামলায় মৃত বেড়ে ৩০৫, পালটা অভিযান শুরু সেনার]
ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, এখনও পর্যন্ত তিনটি উপায়ে জঙ্গিদের ওই লিঙ্কম্যান বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করত। পাচার করা গরুর গলায় ঝোলানো থলিতে যে অস্ত্র থাকত, তা বিএসএফ-এর গোয়েন্দাদের জেরার মুখেও স্বীকার করেছে ধৃত জঙ্গিরা। জানা গিয়েছে, কাঁটাতারের বেড়া টপকে পুঁটলি বেঁধে বাংলাদেশে পাচার করা হয় কাপড়। ওই কাপড়ের মধ্যেই অস্ত্র রেখে একাধিকবার পাচার করা হয়েছে বাংলাদেশে। এ ছাড়াও মনতোষ গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, নদীপথে পাচার হয়েছে অস্ত্র। ভারত ও বাংলাদেশের নৌকো মাছ ধরতে ধরতেই চলে এসেছে কাছাকাছি। মাঝনদীতে জলসীমান্তের কাছে প্লাস্টিকের প্যাকেটের মধ্যে রাখা পিস্তল এক নৌকোর মাঝির হাত থেকে চলে গিয়েছে অন্য নৌকার মাঝির হাতে। এবিটির লিঙ্কম্যান নদীর পাড়ে এসে মাঝির হাত থেকে সেই অস্ত্র নিয়ে নিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ধৃতদের কাছ থেকে গোয়েন্দারা কয়েকজন লিঙ্কম্যানের নাম জেনেছেন। জানা গিয়েছে কয়েকজন অস্ত্র পাচারকারী ও এজেন্টের নামও। আপাতত তাদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে।