সুকুমার সরকার, ঢাকা: দিল্লির নির্ভয়া (Nirbhaya) কাণ্ডের ছায়া এবার বাংলাদেশে। চলন্ত বাসের দরজা, জানলা বন্ধ করে বছর বাইশের এক তরুণীকে গণধর্ষণ (Gangrape) করা হয়েছে। ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল এবং খালাসি বাবু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সুপারভাইজার পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃত দু’জনকে ৭ দিনের জেলা হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা এবং চিকিৎসা হয়েছে। বুধবার আদালতে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, ঘটনা গত সপ্তাহের। ঢাকার আবদুল্লাহপুরে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যান বছর বাইশের তরুণী। ১৪ তারিখ সেখান থেকে কুমিল্লার বাড়িতে ফেরার জন্য বেরন। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ‘তিশা প্লাস’ পরিবহণের একটি বাসে ওঠেন, কুমিল্লার শাসনগাছায় আসার জন্য। চালককে তিনি বলে রাখেন, তাঁকে শাসনগাছায় নামিয়ে দিতে। তাঁরাও পালটা তরুণীকে আশ্বস্ত করেন যে ঠিক স্টপেজে নামিয়ে দেওয়া হবে। উদ্বেগের কিছু নেই।
[আরও পড়ুন: বনগাঁ দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, বাংলাদেশ সীমান্তে ধৃত ৭ রোহিঙ্গা]
এর খানিক পরেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পালটে যায়। অভিযোগ, শাসনগাছায় তাঁকে না নামিয়ে বাসটি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের কাছে ভোররাতে বাসের জানলা, দরজা বন্ধ করে তরুণীর উপর চলে নির্বিচার যৌন অত্যাচার, গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। এখানেই শেষ হয়। এরপর ওই বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসের খালাসি বাবু শেখের ঘরে। সেখানেও আরেকপ্রস্ত চলে গণধর্ষণ। এরপর ১৫ তারিখ সকাল ৬টা নাগাদ তরুণীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়।
রাস্তায় বেরিয়ে বিধ্বস্ত তরুণী মাকে ফোন করে সবটা জানান। এরপর কুমিল্লার বাড়ি থেকে তাঁর আত্মীয়রা দুপুরে পৌঁছন বিশ্বরোডে। সেখান থেকে তরুণীকে উদ্ধারের পাশাপাশি বাসের নম্বর, চালক, খালাসির নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের সদস্যরা। তদন্তে নেমে পুলিশ চালক আরিফ হোসেন এবং খালাসি বাবু শেখকে গ্রেপ্তার করে। তরুণীর পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মেয়ে একটি বস্ত্র কারখানায় কাজ করতেন। লকডাউনে কাজটি চলে যাওয়ায় নতুন করে চাকরির সন্ধানে সেদিন বেরিয়েছিলেন। সেখান থেকেই আবদুল্লাহপুরে আত্মীয়ের বাড়ি যান। কিন্তু ফেরার পথে এমন নৃশংস ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি তুলেছে তাঁর পরিবার।
[আরও পড়ুন: কথা রেখে হাসিনা ইলিশ পাঠালেও পিঁয়াজ রপ্তানি করছে না ভারত, আক্ষেপ বাংলাদেশের]
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহণের পরিচালক বিমল দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যে বাসটিতে (Running bus) এই কাণ্ড ঘটেছে, সেই বাসটির মালিক এই পরিবহণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। তবে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ ওই পরিবহণের এমডি দুলাল হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮ নম্বর গাড়ির চালক, খালাসি ও সুপারভাইজার এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানার পর আমরা ওদের দু’জনকে পুলিশের হাতে দিয়েছি।’’ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলকৃষ্ণ ধর জানিয়েছেন, বাকি অভিযুক্তরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।